নিউইয়র্ক ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা ম্যান্ডেলার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১২ বার পঠিত

দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা

বাংলাদেশ ডেস্ক : ইতিহাসের কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ১০ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ ডিসেম্বর। আফ্রিকায় বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে। এর বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল বোর্ডিং স্কুল শেষে, দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ফোর্ট হেয়ারে ভর্তির পর। কর্তৃপক্ষের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সেখানে তিনি বিদ্রোহ করেন। সেই শুরু, তারপর বহু সংগ্রামে জড়িয়েছেন। জন্মগতভাবে কালো হওয়ার কারণে যাঁদের সহ্য করতে হতো সীমাহীন অত্যাচার, মানুষ হয়েও যাঁদের কাটাতে হতো পশুর চেয়েও হীন জীবন, তাঁদের জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের টগবগে যৌবন। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষ ম্যান্ডেলাকে আদর করে, ভালোবেসে ডাকেন ‘মাদিবা’ বা জাতির জনক।

তরুণ বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জড়িয়ে পড়েন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে সেই আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা- সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তখন এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র ও প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে শান্তি ও আলোচনার কথা বলা নিষ্ম্ফল। পরে এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন নেলসন ম্যান্ডেলা; বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে দীর্ঘ কারাজীবন।

নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এএনসির শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ টাউনশিপগুলোতে বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শত শত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান। শুরু হয় পুরোনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে তাঁর নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজ। অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে সাবেক শ্বেতাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন।

বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে নতুন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে সব বর্ণ এবং সব জাতির সমানাধিকার থাকবে। মানুষও তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করেন। এরপরে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস তথা এএনসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসীন হন। সেই সময় তিনি সারাবিশ্বের কাছে হয়েছিলেন সমাদৃত, সিক্ত হয়েছিলেন ভালোবাসায়। অবসরে যাওয়ার পরও নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যস্ততা থামেনি, স্বাধীনতা এবং বিশ্ব শান্তির এক আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি; সুতরাং তাঁর ডাক পড়তে থাকে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে। বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এইডস নিরাময়ের লক্ষ্যে প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

শেষ জীবনে এসে রোগব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। ২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই মাস হাসপাতালে কাটান। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান সংগ্রামী। নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়- তিনি কীভাবে মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান?

জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার সম্পর্কে লোকে এমন কথাই বলুক, এখানে এমন এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। সূত্র : সমকাল

নাছরিন/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা ম্যান্ডেলার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশের সময় : ০৭:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : ইতিহাসের কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ১০ মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৫ ডিসেম্বর। আফ্রিকায় বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে। এর বিরুদ্ধে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল বোর্ডিং স্কুল শেষে, দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ফোর্ট হেয়ারে ভর্তির পর। কর্তৃপক্ষের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সেখানে তিনি বিদ্রোহ করেন। সেই শুরু, তারপর বহু সংগ্রামে জড়িয়েছেন। জন্মগতভাবে কালো হওয়ার কারণে যাঁদের সহ্য করতে হতো সীমাহীন অত্যাচার, মানুষ হয়েও যাঁদের কাটাতে হতো পশুর চেয়েও হীন জীবন, তাঁদের জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের টগবগে যৌবন। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষ ম্যান্ডেলাকে আদর করে, ভালোবেসে ডাকেন ‘মাদিবা’ বা জাতির জনক।

তরুণ বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জড়িয়ে পড়েন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে সেই আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা- সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তখন এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র ও প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে শান্তি ও আলোচনার কথা বলা নিষ্ম্ফল। পরে এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন নেলসন ম্যান্ডেলা; বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে দীর্ঘ কারাজীবন।

নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এএনসির শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ টাউনশিপগুলোতে বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শত শত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পান। শুরু হয় পুরোনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে তাঁর নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজ। অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে সাবেক শ্বেতাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন।

বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে নতুন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে সব বর্ণ এবং সব জাতির সমানাধিকার থাকবে। মানুষও তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করেন। এরপরে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস তথা এএনসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসীন হন। সেই সময় তিনি সারাবিশ্বের কাছে হয়েছিলেন সমাদৃত, সিক্ত হয়েছিলেন ভালোবাসায়। অবসরে যাওয়ার পরও নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যস্ততা থামেনি, স্বাধীনতা এবং বিশ্ব শান্তির এক আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি; সুতরাং তাঁর ডাক পড়তে থাকে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে। বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এইডস নিরাময়ের লক্ষ্যে প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

শেষ জীবনে এসে রোগব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। ২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই মাস হাসপাতালে কাটান। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান সংগ্রামী। নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়- তিনি কীভাবে মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান?

জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আমার সম্পর্কে লোকে এমন কথাই বলুক, এখানে এমন এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। সূত্র : সমকাল

নাছরিন/হককথা