ইরানে নতুন হিজাব আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্থগিত
- প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১২ বার পঠিত
ইরানের পার্লামেন্টারি বিষয়ক দপ্তরের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরাম দাবিরি সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সংস্কারপন্থী দৈনিক হাম মিহানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই আইনটি আপাতত সংসদ থেকে সরকারের কাছে পাঠানো হবে না। তিনি আরো জানান, আইনটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তটি নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নেয়া হয়েছে।
ইরান নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক হিজাবের ওপর নতুন কঠোর আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি। অনেকের ধারণা, ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে বিক্ষোভ ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তা আবারো উসকে দিতে পারত এই বিল। খবর এপি।
বিতর্কিত এই আইনটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে সরকারের কাছে বিলটি পাঠানোর কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশটির এক ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর অর্থ দাঁড়ায় যে ইরান কার্যত আইনটি কার্যকর করার প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে।
এ আইনে হিজাব পরতে অস্বীকারকারী নারীদের জন্য এবং তাদের সহায়তা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরো কঠোর শাস্তি আরোপের কথা বলা হয়েছে। ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইতিপূর্বে এই কঠোর শাস্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনার জন্য পুনরায় চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ইরানের পার্লামেন্টারি বিষয়ক দপ্তরের ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরাম দাবিরি গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সংস্কারপন্থী দৈনিক হাম মিহানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এই আইনটি আপাতত সংসদ থেকে সরকারের কাছে পাঠানো হবে না। তিনি আরো জানান, আইনটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তটি নির্বাহী, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নেয়া হয়েছে।
এই মুহূর্তে বিলটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলেও জানান তিনি। তবে শাহরাম দাবিরি এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি। বিলটি সরকারের কাছে পাঠানো হলে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে ইরানের প্রেসিডেন্টের কার্যত খুব কম স্বাধীনতাই থাকত। আইন অনুযায়ী, তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে বিলটি অনুমোদন করতে হতো এবং তারপর ১৫ দিনের মধ্যে কার্যকর হতো। প্রেসিডেন্টের এটিকে বাতিল করার কোনো ক্ষমতা নেই।
তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে বিলটি বন্ধ করার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারতেন পেজেশকিয়ান। আর বিলটি কার্যকর হলে পেজেশকিয়ান তা বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারতেন বা পুলিশকে এটি প্রয়োগ না করার জন্য আহ্বান জানাতে পারতেন। এতে আবার ইরানে তৈরি করতে পারত সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংকট। যার সুযোগ নিয়ে কট্টরপন্থীরা পেজেশকিয়ানের অবস্থান দুর্বল করার জন্য কাজে লাগাতে পারত।
২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেফতারের পর মারা যান মাহসা আমিনি। ইরান কর্তৃপক্ষ মাহসার মৃত্যুর জন্য দায় অস্বীকার করে দাবি করেছে যে, তাকে প্রহার করা হয়নি। তবে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মাহসা আমিনি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এ মৃত্যুর জন্য তারা ইরানের নৈতিকতা পুলিশকে দায়ী করেছে।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর মাসব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ২২ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছিল। সূত্র : বণিক বার্তা।