নিউইয়র্ক ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কফি হাউসের আড্ডাটা আর নেই

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৩ বার পঠিত

বাংলার বহু রাজনৈতিক, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্মস্থান কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের আইকনিক কফি হাউসে কিছু জিনিস এখন বদলেছে, কিছু জিনিস বদলায়নি। কফি ও ফিশ ফ্রাই নিয়ে বসে থাকা লোকের সংখ্যা আছে আগের মতোই। তবে বদলেছে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা মানুষ।

আজকাল বেশিরভাগ লোকের সময়ের চাপ। খেতে এসে দ্রুতই খাবার শেষ করেই বেরিয়ে যান। নতুন কেউ সে জায়গা ফের দখল করে নেয়। এছাড়া যারা পরিমিত দামের স্ন্যাকস খাওয়ার সময় ইতিহাসের আভায় ভাসতে পারে, কেবল এক কাপ কফির উপর অবিরাম দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে পারে, এমন লোকদের পরিবর্তে স্বল্প সময়ের গ্রাহকই বেশি চায় প্রতিষ্ঠানটি।

জমজমাট ব্যবসা
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, মাত্র ১৫ বছর আগেও যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত মনে হচ্ছিল- সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন সুদিন দেখছে। ঐতিহাসিক কলেজ স্ট্রিট ভবনে শুধু বসার ক্ষমতা বাড়ানোই নয়, কলকাতার বাইরে বহরমপুরে এই প্রথম শাখা খুলতে চলেছে কফি হাউজ। এপ্রিলের মাঝামাঝি পয়লা বৈশাখে উদ্বোধন হবে এটি।

কফি হাউস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মহম্মদ জাভেদ বলেন, ‘পরিস্থিতি অবশ্যই ভালো। আগে নিচতলায় ৪৪টি টেবিল ছিল, এখন ৫২টি। উপরের তলায় ৩৭টি টেবিল ছিল এবং এখন ৪২টি টেবিল রয়েছে। এর সবই হয়েছে গত দুই বছরে। তবে কফি হাউসের সংস্কৃতির দিক থেকে খুব বেশি কিছু বদলায়নি – কেবল প্রজন্মই বদলেছে।’

বদলে যাচ্ছে সংস্কৃতি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর ভাষ্য, ‘কাজের সংস্কৃতিও বদলে গিয়েছে। তরুণদের সংখ্যা বেশি। আমরা আর গ্রাহকদের কেবল এক কাপ কফি নিয়ে গড়িমসি করতে উত্সাহিত করি না। এখানে সময় কাটাতে চাইলে অর্ডার দিতে হবে। শুধু আড্ডা খাওয়ার জন্য টেবিল দখল করা যায় না।’

এমন বিষয় এক দশক আগেও খুব কম দেখা যেত। যে কলকাতা এখন ঐতিহ্য সচেতন, সেখানেও কফি হাউসের মতো প্রতিষ্ঠান সম্ভবত তার মূল্য উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। কেবল ব্ল্যাক কফির দাম মাত্র ২০ টাকা প্রতি কাপ নিয়ে দীর্ঘ আড্ডায় খুব বেশি আগ্রহী নয় তারা। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনে শারীরিকভাবে হাজির হয়ে আড্ডার দিনকালও প্রায় শেষ।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংককর্মী অসীম কুমার চক্রবর্তী এখনও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কলেজের দিনগুলো স্মরণ করতে কফি হাউসে যান। তিনি বলছিলেন, ‘আমার কলেজের দিনগুলোতে – ১৯৮০’র দশকের গোড়ার দিকে এমন সময় ছিল যখন আমরা সারা দিন এখানে কাটাতাম। আক্ষরিক অর্থেই সারাদিন। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে এখানে বসে থাকতে দেখেছি।’

‘নষ্ট করার মতো সময় নেই’
অসীম কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘হ্যাঁ, জায়গাটা এখন আর আগের মতো কোলাহলপূর্ণ নয়, আর আগের মতো এখানে ধূমপানও হয় না। যদিও ধূমপান আইনত নিষিদ্ধ, তবুও গ্রাহকদের এখানে আলো জ্বালানোর স্বাধীনতা রয়েছে কারণ ম্যানেজমেন্ট – সম্ভবত পুরানো সময়ের জন্য – অনুশীলনের দিকে অন্ধ হয়ে যায়।’

কফি হাউসে ওয়েটার হিসাবে ৪০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে আসা কাবুল জানালেন, গ্রাহকদের অবিরাম স্রোত তাকে তার পায়ের আঙুলের ওপর রাখে। তিনি আগের চেয়ে এখন বেশি ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘আজকাল মানুষের হাতে সময় থাকে না বললেই চলে। তারা আসে, খায় আর চলে যায়। তাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই।’

বর্তমানে কফি হাউসের পরিচালনাকারী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হিসাবে সবচেয়ে স্মরণীয় পর্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মোহাম্মদ জাভেদ বলেন, ‘কোভিডের সময়কাল। সেটাই ছিল শ্রেষ্ঠ সময়, কারণ কাউকে কাজে আসতে হতো না।’ সূত্র: দ্য হিন্দু

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কফি হাউসের আড্ডাটা আর নেই

প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

বাংলার বহু রাজনৈতিক, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্মস্থান কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের আইকনিক কফি হাউসে কিছু জিনিস এখন বদলেছে, কিছু জিনিস বদলায়নি। কফি ও ফিশ ফ্রাই নিয়ে বসে থাকা লোকের সংখ্যা আছে আগের মতোই। তবে বদলেছে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা মানুষ।

আজকাল বেশিরভাগ লোকের সময়ের চাপ। খেতে এসে দ্রুতই খাবার শেষ করেই বেরিয়ে যান। নতুন কেউ সে জায়গা ফের দখল করে নেয়। এছাড়া যারা পরিমিত দামের স্ন্যাকস খাওয়ার সময় ইতিহাসের আভায় ভাসতে পারে, কেবল এক কাপ কফির উপর অবিরাম দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে পারে, এমন লোকদের পরিবর্তে স্বল্প সময়ের গ্রাহকই বেশি চায় প্রতিষ্ঠানটি।

জমজমাট ব্যবসা
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত, মাত্র ১৫ বছর আগেও যার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত মনে হচ্ছিল- সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন সুদিন দেখছে। ঐতিহাসিক কলেজ স্ট্রিট ভবনে শুধু বসার ক্ষমতা বাড়ানোই নয়, কলকাতার বাইরে বহরমপুরে এই প্রথম শাখা খুলতে চলেছে কফি হাউজ। এপ্রিলের মাঝামাঝি পয়লা বৈশাখে উদ্বোধন হবে এটি।

কফি হাউস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়ান কফি ওয়ার্কার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মহম্মদ জাভেদ বলেন, ‘পরিস্থিতি অবশ্যই ভালো। আগে নিচতলায় ৪৪টি টেবিল ছিল, এখন ৫২টি। উপরের তলায় ৩৭টি টেবিল ছিল এবং এখন ৪২টি টেবিল রয়েছে। এর সবই হয়েছে গত দুই বছরে। তবে কফি হাউসের সংস্কৃতির দিক থেকে খুব বেশি কিছু বদলায়নি – কেবল প্রজন্মই বদলেছে।’

বদলে যাচ্ছে সংস্কৃতি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর ভাষ্য, ‘কাজের সংস্কৃতিও বদলে গিয়েছে। তরুণদের সংখ্যা বেশি। আমরা আর গ্রাহকদের কেবল এক কাপ কফি নিয়ে গড়িমসি করতে উত্সাহিত করি না। এখানে সময় কাটাতে চাইলে অর্ডার দিতে হবে। শুধু আড্ডা খাওয়ার জন্য টেবিল দখল করা যায় না।’

এমন বিষয় এক দশক আগেও খুব কম দেখা যেত। যে কলকাতা এখন ঐতিহ্য সচেতন, সেখানেও কফি হাউসের মতো প্রতিষ্ঠান সম্ভবত তার মূল্য উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। কেবল ব্ল্যাক কফির দাম মাত্র ২০ টাকা প্রতি কাপ নিয়ে দীর্ঘ আড্ডায় খুব বেশি আগ্রহী নয় তারা। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনে শারীরিকভাবে হাজির হয়ে আড্ডার দিনকালও প্রায় শেষ।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংককর্মী অসীম কুমার চক্রবর্তী এখনও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কলেজের দিনগুলো স্মরণ করতে কফি হাউসে যান। তিনি বলছিলেন, ‘আমার কলেজের দিনগুলোতে – ১৯৮০’র দশকের গোড়ার দিকে এমন সময় ছিল যখন আমরা সারা দিন এখানে কাটাতাম। আক্ষরিক অর্থেই সারাদিন। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে এখানে বসে থাকতে দেখেছি।’

‘নষ্ট করার মতো সময় নেই’
অসীম কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘হ্যাঁ, জায়গাটা এখন আর আগের মতো কোলাহলপূর্ণ নয়, আর আগের মতো এখানে ধূমপানও হয় না। যদিও ধূমপান আইনত নিষিদ্ধ, তবুও গ্রাহকদের এখানে আলো জ্বালানোর স্বাধীনতা রয়েছে কারণ ম্যানেজমেন্ট – সম্ভবত পুরানো সময়ের জন্য – অনুশীলনের দিকে অন্ধ হয়ে যায়।’

কফি হাউসে ওয়েটার হিসাবে ৪০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে আসা কাবুল জানালেন, গ্রাহকদের অবিরাম স্রোত তাকে তার পায়ের আঙুলের ওপর রাখে। তিনি আগের চেয়ে এখন বেশি ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘আজকাল মানুষের হাতে সময় থাকে না বললেই চলে। তারা আসে, খায় আর চলে যায়। তাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই।’

বর্তমানে কফি হাউসের পরিচালনাকারী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান হিসাবে সবচেয়ে স্মরণীয় পর্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মোহাম্মদ জাভেদ বলেন, ‘কোভিডের সময়কাল। সেটাই ছিল শ্রেষ্ঠ সময়, কারণ কাউকে কাজে আসতে হতো না।’ সূত্র: দ্য হিন্দু