ইসরায়েলের জন্য ভয়ংকর দিন

- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১১৪ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে সোমবার তাদের ২৪ সেনা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন রিজার্ভ সেনা। তারা মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। এসব বোমা ইসরায়েলই হামাসকে ধ্বংস করার জন্য দুটি ভবনে পুঁতে রেখেছিল। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এক দিনে এত ইসরায়েলি সেনা নিহত হননি। এদিন ইসরায়েলের একটি ট্যাঙ্কও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপ হামাস।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসি এ খবর জানায়। আইডিএফ প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল দানিয়েল হ্যাগারি বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে মধ্য গাজায় পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। একই দিন দক্ষিণ গাজায় পৃথক বিস্ফোরণে আরও তিন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবারকে যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে ভয়ংকর দিনগুলোর একটি বলে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ারও বার্তা দেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হেরজগ বলেন, এটা অত্যন্ত কঠিন খবর।
গাজায় অব্যাহতভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের বিমান ও গোলা হামলায় মঙ্গলবার আরও ১৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৩৫৪ জন। এতে গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৯০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৬৩ হাজারের বেশি। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ৩৮৮টি স্কুলে বোমা ফেলা হয়েছে। শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন সাড়ে ৪ হাজার। কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা যায়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাংশের খান ইউনিস শহর ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা শহরটির ভেতরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান জোরদার করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। খান ইউনিস হামাসের ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি’ বলে তারা মনে করে। গাজায় হামলা শুরুর আগে উপত্যকার উত্তরাঞ্চলকে টার্গেট করে ইসরায়েল সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে। এতে উত্তরের ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণের খান ইউনিসসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেন। এবার ঘনবসতিপূর্ণ খান ইউনিসে হামলার তীব্রতা বাড়ালে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদরদপ্তরে হামলা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল-কিদরা খান ইউনিসে আইডিএফের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। আইডিএফ অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা। দ্য গার্ডিয়ানের প্যাট্রিক উইটাউর জানান, নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনতে পারে আরব লিগ, যার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাতে পারে চীন। নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠক সামনে রেখে নিউইয়র্কে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো ও যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ ছড়ানো থেকে বিরত রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গাজায় হামলার মধ্যে জিম্মি মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করছেন জিম্মিদের স্বজন। মঙ্গলবার ইসরায়েলের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, সব জিম্মির মুক্তির শর্তে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি বলেছেন, গাজার খাদ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সব বেসামরিক লোককে দ্রুত খাদ্য সংকটে ফেলার ঘটনা নজিরবিহীন।
হককথা/নাছরিন