নিউইয়র্ক ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মহানবির (স.) হিজরতের পথ স্মরণীয় করতে সৌদি আরবের উদ্যোগ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৯ বার পঠিত

দীর্ঘদিন পর মহানবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের যাত্রাপথকে স্মরণীয় করে রাখার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। পবিত্র মক্কা থেকে যে পথে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেছেন মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম, সেই ঐতিহাসিক পথকে নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য ঘোষণা করা হয়েছে ‘ইন দ্য প্রোফেটস স্টেপস’ প্রকল্প। এ খবর দিয়ে অনলাইন গালফ নিউজ বলছে, সোমবার এ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন মদিনার আমির প্রিন্স সালমান বিন সুলতান। এজন্য ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড়ের কাছে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটিতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের পথের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৪৭০ কিলোমিটার। এই পথ মক্কা থেকে মদিনাকে সংযুক্ত করেছে। এর মধ্যে ৩০৫ কিলোমিটার পথ আছে পায়ে হাঁটার উপযোগী। এর মধ্যে ৪১টি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক বা স্থানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা। মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বর্ণনা করে, এমন গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্টেশন আছে। এছাড়া আছে একটি ‘মাইগ্রেশন মিউজিয়াম’ বা হিজরত জাদুঘর। এই রুট বা পথে আটটি স্টেশন আছে। সেখান থেকে হিজরতের গভীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটানো হবে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে কমপক্ষে ৩০টি রেস্তোরাঁ এবং ৫০টি দোকান। প্রতিদিন এই প্রকল্প ভ্রমণ করতে পারবে ১২ হাজার দর্শনার্থী।

প্রিন্স সালমান আরো বলেন, সৌদি আরব ইসলামিক ঐতিহ্যের স্থাপনাগুলোকে সংস্কার ও সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে সৌদি আরবের প্রচলিত রীতি যুক্ত হয়েছে। তিনি দর্শনার্থীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সৌদি আরবের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সৌদি আরবের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের একটি মাইলফলক এই প্রকল্প—এমনটা মনে করেন জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তুর্কি আলালশিখ। আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প চালু করা হবে নভেম্বর। ছয় মাস ধরে তা চলবে। প্রসঙ্গত যে, ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম ও তার সাহাবিদের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের যাত্রাপথ পুনরুদ্ধার করা হয়। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম তার সাহাবিগণ ৬২২ সালে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের ১ হাজার ৪০০ বছর পর মক্কা থেকে উত্তরে অবস্থিত ইয়াসরিব (পরবর্তী সময়ে মদিনা) শহরের যাত্রাপথটি অবশেষে পুনরুদ্ধার করা হলো। ‘রিহলাত মুহাজির’ নামের একটি সংগঠন জানায়, নবির হিজরতের পথ নথিভুক্ত করার উদ্যোগের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। নবির জীবনী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের একটি দল কাজ করছে মক্কায় জাবাল থাওর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের, যা পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করবে। এতে যুক্ত ছিল জাতীয় জাদুঘর, সাংস্কৃতিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করা সংস্থা সাময়া ইনভেস্টমেন্ট।

সংস্থার সিইও ফাওয়াজ আল মেরহেজ বলেন, ‘মুহাজির’ উদ্যোগটি ডকুমেন্টেশন ও প্যানোরমিক ফটোগ্রাফি ৩৬০-এ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নবির দেশত্যাগের পথকে নথিভুক্ত করছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে, যা গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চালু করা হয়েছিল, দলটি মক্কার থাওর পর্বতের গুহা থেকে শুরু করে ৪০টি স্টেশনের মধ্য দিয়ে গিয়ে নবির হিজরতের পথের সন্ধান করেছিল, যা মদিনার কুবা মসজিদে যাওয়ার পথ পর্যন্ত বিস্তৃত। পথের ডকুমেন্টেশন মূলত প্যানারোমিক ফটোগ্রাফি ৩৬০ ডিগ্রি দ্বারা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ড্রোন ব্যবহার করে নবির মাইগ্রেশন ডিজিটালভাবে নথিভুক্ত করা হয়। ফাওয়াজ আল মেরহেজ আরো বলেন, এবড়োথেবড়ো রাস্তা এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থানের নাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তারা এই যাত্রাপথ পুনরুদ্ধারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। মক্কার উম্ম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ইসলামিক সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিন সামিল আল-সালামি এবং অধ্যাপক সাদ বিন মুসা আল-মুসাসহ ইসলামি ইতিহাস ও নবির জীবনীতে বিশেষ কিছু জ্ঞানী এই তদন্তে সহায়তা করেছেন এবং রিয়াদের ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ আল-সুওয়াইকেত এবং অধ্যাপক আবদুল আজিজ বিন ইব্রাহিম আল-ওমারি, যারা এটলাস বায়োগ্রাফির বৈজ্ঞানিক কমিটিরও সদস্য, তারা মদিনার ল্যান্ডমার্ক ও নবির জীবনীতে, বিশেষ করে, এই কাজে প্রকল্পের কিছু পর্যায়েও অংশ নিয়েছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মহানবির (স.) হিজরতের পথ স্মরণীয় করতে সৌদি আরবের উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ১১:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দীর্ঘদিন পর মহানবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের যাত্রাপথকে স্মরণীয় করে রাখার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। পবিত্র মক্কা থেকে যে পথে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেছেন মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম, সেই ঐতিহাসিক পথকে নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য ঘোষণা করা হয়েছে ‘ইন দ্য প্রোফেটস স্টেপস’ প্রকল্প। এ খবর দিয়ে অনলাইন গালফ নিউজ বলছে, সোমবার এ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন মদিনার আমির প্রিন্স সালমান বিন সুলতান। এজন্য ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড়ের কাছে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটিতে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের পথের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৪৭০ কিলোমিটার। এই পথ মক্কা থেকে মদিনাকে সংযুক্ত করেছে। এর মধ্যে ৩০৫ কিলোমিটার পথ আছে পায়ে হাঁটার উপযোগী। এর মধ্যে ৪১টি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক বা স্থানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা। মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লামের হিজরতের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বর্ণনা করে, এমন গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্টেশন আছে। এছাড়া আছে একটি ‘মাইগ্রেশন মিউজিয়াম’ বা হিজরত জাদুঘর। এই রুট বা পথে আটটি স্টেশন আছে। সেখান থেকে হিজরতের গভীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটানো হবে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে কমপক্ষে ৩০টি রেস্তোরাঁ এবং ৫০টি দোকান। প্রতিদিন এই প্রকল্প ভ্রমণ করতে পারবে ১২ হাজার দর্শনার্থী।

প্রিন্স সালমান আরো বলেন, সৌদি আরব ইসলামিক ঐতিহ্যের স্থাপনাগুলোকে সংস্কার ও সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে সৌদি আরবের প্রচলিত রীতি যুক্ত হয়েছে। তিনি দর্শনার্থীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সৌদি আরবের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রচারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সৌদি আরবের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের একটি মাইলফলক এই প্রকল্প—এমনটা মনে করেন জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান তুর্কি আলালশিখ। আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প চালু করা হবে নভেম্বর। ছয় মাস ধরে তা চলবে। প্রসঙ্গত যে, ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম ও তার সাহাবিদের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের যাত্রাপথ পুনরুদ্ধার করা হয়। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সল্লাম তার সাহাবিগণ ৬২২ সালে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের ১ হাজার ৪০০ বছর পর মক্কা থেকে উত্তরে অবস্থিত ইয়াসরিব (পরবর্তী সময়ে মদিনা) শহরের যাত্রাপথটি অবশেষে পুনরুদ্ধার করা হলো। ‘রিহলাত মুহাজির’ নামের একটি সংগঠন জানায়, নবির হিজরতের পথ নথিভুক্ত করার উদ্যোগের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। নবির জীবনী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের একটি দল কাজ করছে মক্কায় জাবাল থাওর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের, যা পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করবে। এতে যুক্ত ছিল জাতীয় জাদুঘর, সাংস্কৃতিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করা সংস্থা সাময়া ইনভেস্টমেন্ট।

সংস্থার সিইও ফাওয়াজ আল মেরহেজ বলেন, ‘মুহাজির’ উদ্যোগটি ডকুমেন্টেশন ও প্যানোরমিক ফটোগ্রাফি ৩৬০-এ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নবির দেশত্যাগের পথকে নথিভুক্ত করছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে, যা গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চালু করা হয়েছিল, দলটি মক্কার থাওর পর্বতের গুহা থেকে শুরু করে ৪০টি স্টেশনের মধ্য দিয়ে গিয়ে নবির হিজরতের পথের সন্ধান করেছিল, যা মদিনার কুবা মসজিদে যাওয়ার পথ পর্যন্ত বিস্তৃত। পথের ডকুমেন্টেশন মূলত প্যানারোমিক ফটোগ্রাফি ৩৬০ ডিগ্রি দ্বারা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ড্রোন ব্যবহার করে নবির মাইগ্রেশন ডিজিটালভাবে নথিভুক্ত করা হয়। ফাওয়াজ আল মেরহেজ আরো বলেন, এবড়োথেবড়ো রাস্তা এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থানের নাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তারা এই যাত্রাপথ পুনরুদ্ধারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। মক্কার উম্ম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ইসলামিক সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিন সামিল আল-সালামি এবং অধ্যাপক সাদ বিন মুসা আল-মুসাসহ ইসলামি ইতিহাস ও নবির জীবনীতে বিশেষ কিছু জ্ঞানী এই তদন্তে সহায়তা করেছেন এবং রিয়াদের ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ আল-সুওয়াইকেত এবং অধ্যাপক আবদুল আজিজ বিন ইব্রাহিম আল-ওমারি, যারা এটলাস বায়োগ্রাফির বৈজ্ঞানিক কমিটিরও সদস্য, তারা মদিনার ল্যান্ডমার্ক ও নবির জীবনীতে, বিশেষ করে, এই কাজে প্রকল্পের কিছু পর্যায়েও অংশ নিয়েছিলেন।