নিউইয়র্ক ০৩:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রাশিয়া বনাম ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কার সামরিক শক্তি কেমন?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • / ১২৩ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির তিক্ত সম্পর্কের জেরে ব্যাপক চাপে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। তিক্ততার জেরে এরই মাঝে ট্রাম্প সাময়িকভাবে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইইউ’র মাঝে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। হাঙ্গেরিসহ কেউ কেউ ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে। এরপরও কিয়েভে সহায়তা অব্যাহত রাখলে রাশিয়ার সাথে ইইউ’র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। বরাবরই এই যুদ্ধ থেকে ন্যাটো ও ইউরোপের দেশগুলোকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছে মস্কো। অন্যথায় হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে তারা। তবে তা যেন কানেই তুলছে না ইইউ।

এ অবস্থায় রাশিয়ার সাথে ইইউ সংঘাতে জড়ালে সূত্রপাত হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের। এবং তা পারমাণবিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া আদৌ কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকতে পারবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন? এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এরই মাঝে ইইউ ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়ালে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। উদ্ভূত বাস্তবতায় রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা-প্রতিতুলনা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এককভাবে রাশিয়ার কাছে যতো পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আছে, ইইউ অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশ তার কাছে নগণ্য।

আসলেই কার সমরাস্ত্র ভাণ্ডার কতোটা শক্তিশালী, তা নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসও এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইউরেশিয়ান টাইমসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার তুলনায় ইইউ অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশের মোট সামরিক বাজেট বেশি হলেও পরমাণু অস্ত্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে রাশিয়া। রাশিয়ার বার্ষিক সামরিক বাজেট ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ইইউ’র বার্ষিক সামরিক বাজেটের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১০ লাখ হলেও ইইউ’র হাতে আছে ১৩ লাখ সেনাসদস্য। তবে রিজার্ভ বাহিনীর ক্ষেত্রে এগিয়ে রাশিয়া। তাদের হাতে আছে ২০ লাখ রিজার্ভ সৈন্য। ইইউ’র রিজার্ভ সৈন্যসংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ। রাশিয়ার কাছে ট্যাংক আছে ১২ হাজার ২৬৭টি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্বল মাত্র ৪ হাজার ৩৭৭টি। এছাড়া রাশিয়ার সাঁজোয়া যুদ্ধযানের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ১৭২টি। অন্য পক্ষের হাতে সাঁজোয়া যুদ্ধযান আছে ৩০ হাজার ৫১০টি। এদিকে রাশিয়ার মোট কামানের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৬৬টি, যার মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোলা ছুড়তে সক্ষম কামান ৬ হাজার ৪৪৩টি। ইইউ’র মোট কামান সংখ্যাই ৬ হাজার ৪১৬টি। এর মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোলা ছুড়তে সক্ষম ১ হাজার ৯৬৫টি। এছাড়া রাশিয়ার রকেট ছুড়তে সক্ষম কামানের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৩১টি। অপর পক্ষের কাছে এর পরিমাণ ৭৭৮টি।

অন্যদিকে সামরিক বিমানের ক্ষেত্রে সামান্য এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের হাতে আছে মোট ৫ হাজার ৩৯২টি সামরিক বিমান, যার মাঝে- ফাইটার, মাল্টিরোল ও অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ১ হাজার ৪৭৩টি। মোট রুশ সামরিক বিমানের সংখ্যা ৪ হাজার ৪১৮। এর মাঝে ফাইটার, মাল্টিরোল ও অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ১ হাজার ৪১১টি। এর বাইরে রুশ সামরিক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৫টি হলেও ইইউ’র সংগ্রহ ২ হাজার ৩৩০টি। নৌশক্তিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে ইইউ। তাদের মোট নৌযানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৫। রাশিয়ার মোট নৌযান ৬৫৩টি। এছাড়া ইইউ’র বিমানবাহী রণতরী ৩টি। রাশিয়ার কাছে বিমানবাহী রণতরী আছে একটি। এসবের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেট সংখ্যা যথাক্রমে ১৭ ও ৭৮টি। রাশিয়ার মজুদ যথাক্রমে ১৪ ও ১১টি। অন্যদিকে রুশ কর্ভেট ও সাবমেরিন সংখ্যা যথাক্রমে ৮০ ও ৬৬টি। ইইউ’র মজুদ যথাক্রমে ২৩ ও ৫৯টি।

এদিকে রাশিয়ার কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে ৫ হাজার ৮৮৯টি। বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্বল মাত্র ৫১৯টি। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু যুদ্ধের সূচনা হলে রাশিয়া ইইউ’র চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে। কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়ালেই প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হতে পারে তারা। যদিও পরমাণু অস্ত্রের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়ার থেকে বেশ পেছনে। যুক্তরাষ্ট্রের মজুদ পরমাণু অস্ত্র ৩ হাজার ৭০০র কিছু বেশি।

 

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রাশিয়া বনাম ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কার সামরিক শক্তি কেমন?

প্রকাশের সময় : ১১:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির তিক্ত সম্পর্কের জেরে ব্যাপক চাপে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। তিক্ততার জেরে এরই মাঝে ট্রাম্প সাময়িকভাবে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইইউ’র মাঝে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। হাঙ্গেরিসহ কেউ কেউ ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে। এরপরও কিয়েভে সহায়তা অব্যাহত রাখলে রাশিয়ার সাথে ইইউ’র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। বরাবরই এই যুদ্ধ থেকে ন্যাটো ও ইউরোপের দেশগুলোকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছে মস্কো। অন্যথায় হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে তারা। তবে তা যেন কানেই তুলছে না ইইউ।

এ অবস্থায় রাশিয়ার সাথে ইইউ সংঘাতে জড়ালে সূত্রপাত হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের। এবং তা পারমাণবিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া আদৌ কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকতে পারবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন? এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এরই মাঝে ইইউ ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়ালে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। উদ্ভূত বাস্তবতায় রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা-প্রতিতুলনা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এককভাবে রাশিয়ার কাছে যতো পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আছে, ইইউ অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশ তার কাছে নগণ্য।

আসলেই কার সমরাস্ত্র ভাণ্ডার কতোটা শক্তিশালী, তা নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসও এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইউরেশিয়ান টাইমসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাশিয়ার তুলনায় ইইউ অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশের মোট সামরিক বাজেট বেশি হলেও পরমাণু অস্ত্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে রাশিয়া। রাশিয়ার বার্ষিক সামরিক বাজেট ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ইইউ’র বার্ষিক সামরিক বাজেটের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।

এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১০ লাখ হলেও ইইউ’র হাতে আছে ১৩ লাখ সেনাসদস্য। তবে রিজার্ভ বাহিনীর ক্ষেত্রে এগিয়ে রাশিয়া। তাদের হাতে আছে ২০ লাখ রিজার্ভ সৈন্য। ইইউ’র রিজার্ভ সৈন্যসংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ। রাশিয়ার কাছে ট্যাংক আছে ১২ হাজার ২৬৭টি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্বল মাত্র ৪ হাজার ৩৭৭টি। এছাড়া রাশিয়ার সাঁজোয়া যুদ্ধযানের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ১৭২টি। অন্য পক্ষের হাতে সাঁজোয়া যুদ্ধযান আছে ৩০ হাজার ৫১০টি। এদিকে রাশিয়ার মোট কামানের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৬৬টি, যার মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোলা ছুড়তে সক্ষম কামান ৬ হাজার ৪৪৩টি। ইইউ’র মোট কামান সংখ্যাই ৬ হাজার ৪১৬টি। এর মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোলা ছুড়তে সক্ষম ১ হাজার ৯৬৫টি। এছাড়া রাশিয়ার রকেট ছুড়তে সক্ষম কামানের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৩১টি। অপর পক্ষের কাছে এর পরিমাণ ৭৭৮টি।

অন্যদিকে সামরিক বিমানের ক্ষেত্রে সামান্য এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের হাতে আছে মোট ৫ হাজার ৩৯২টি সামরিক বিমান, যার মাঝে- ফাইটার, মাল্টিরোল ও অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ১ হাজার ৪৭৩টি। মোট রুশ সামরিক বিমানের সংখ্যা ৪ হাজার ৪১৮। এর মাঝে ফাইটার, মাল্টিরোল ও অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ১ হাজার ৪১১টি। এর বাইরে রুশ সামরিক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৫টি হলেও ইইউ’র সংগ্রহ ২ হাজার ৩৩০টি। নৌশক্তিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে ইইউ। তাদের মোট নৌযানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৫। রাশিয়ার মোট নৌযান ৬৫৩টি। এছাড়া ইইউ’র বিমানবাহী রণতরী ৩টি। রাশিয়ার কাছে বিমানবাহী রণতরী আছে একটি। এসবের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেট সংখ্যা যথাক্রমে ১৭ ও ৭৮টি। রাশিয়ার মজুদ যথাক্রমে ১৪ ও ১১টি। অন্যদিকে রুশ কর্ভেট ও সাবমেরিন সংখ্যা যথাক্রমে ৮০ ও ৬৬টি। ইইউ’র মজুদ যথাক্রমে ২৩ ও ৫৯টি।

এদিকে রাশিয়ার কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে ৫ হাজার ৮৮৯টি। বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্বল মাত্র ৫১৯টি। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু যুদ্ধের সূচনা হলে রাশিয়া ইইউ’র চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবে। কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়ালেই প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হতে পারে তারা। যদিও পরমাণু অস্ত্রের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়ার থেকে বেশ পেছনে। যুক্তরাষ্ট্রের মজুদ পরমাণু অস্ত্র ৩ হাজার ৭০০র কিছু বেশি।