১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি কাতারের

- প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭০ বার পঠিত
কাতার, যা একসময় একটি ছোট উপসাগরীয় রাজতন্ত্র ছিল, আজ বিশ্বব্যাপী একটি পরিচিত নাম। কাতারের রাজধানী দোহা, অনেকের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের জেনেভা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ২০১৩ সালে, কাতারের আমির হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৩ বছর। তরুণ বয়সে দায়িত্ব গ্রহণের পর কাতারকে তিনি বিশ্বের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক লেখক মেশি কোয়েনের মতে, কাতারকে আন্তর্জাতিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে তুলে আনেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। মিশরে আরব বসন্ত শুরুর ৪দিন আগে ক্ষমতা গ্রহণ করেন কাতারের বর্তমান আমির শেখ তামিম। তিনি ব্রিটেনের রয়্যাল মিলিটারি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে কাতারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয় ২০০৩ সালে। তিনি সামরিক বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার অব চিফ ছিলেন এবং পাশাপাশি আরও কিছু সরকারি সংস্থায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কাতারের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঠিক করতে ২০০৮ সালে গঠিত হয় কাতার ‘ন্যাশনাল ভিশন ২০৩০’। এর সুপ্রিম কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় শেখ তামিম বলেন, কাতার গ্যাস ও তেল বিক্রির উপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাতার শিক্ষা খাতে বিশাল বিনিয়োগ করে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে কাতার শিক্ষা খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
এদিকে, লেবাননের রাজনৈতিক সংকট নিরসন করে কূটনীতির ক্ষেত্রেও প্রথম বড় সাফল্য অর্জন করে কাতার। কাতারের মধ্যস্থতায় লেবাননের বিবদমান পক্ষগুলো একত্রিত হয়ে আলোচনার টেবিলে বসতে এবং বিরোধ মীমাংসা করতে সম্মত হয়। ২০০৮ সালে কাতারের কূটনৈতিক উদ্যোগের কারনে লেবাননে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, যা আরব লীগ, জাতিসংঘ এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৩ সালে আফগানিস্তান তার কূটনৈতিক অফিস দোহায় চালু করে। ওয়াশিংটনের সম্মতিতে এ অফিসের কার্যক্রম শুরু হলে, আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের কাতারে যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, আমেরিকান কূটনীতিকরাও সেখানে আসা শুরু করেন। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় কাতারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাতার শুধুমাত্র ইসলামের পক্ষেই অবস্থান নেয়নি, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাটিও রয়েছে কাতারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বার্কলে সেন্টারের গবেষক লিখেছেন, বর্তমান আমিরের বাবা, হামাদ বিন খলিফা আল থানি, যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন কাতারকে আমেরিকার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে। তিনি চাননি কাতার আমেরিকার দ্বারা পরিচালিত হোক।
কাতার বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসরাইল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সহায়তা করেছে কাতার। পাশাপাশি, প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী নেতারা কাতারে অবস্থান করছেন। এছাড়া, কাতার ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরোক্ষ যোগাযোগ স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা বিশ্ব কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। কাতারের এই কূটনৈতিক সক্রিয়তা তার আন্তর্জাতিক প্রভাবকে আরও দৃঢ় করেছে।
বিশ্বমঞ্চে প্রভাব বৃদ্ধিতে একাধিক ব্র্যান্ডিং উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কাতার। এর মধ্যে অন্যতম হলো আল-জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, যা কাতারকে একটি মিডিয়া শক্তি হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়া, কাতার এয়ারওয়েজ প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজন করাও ছিল দেশটির বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কাতার এয়ারওয়েজ অত্যাধুনিক সেবা নিয়ে দ্রুতই আন্তর্জাতিক বিমানের বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে কাতার তার আধুনিক অবকাঠামো প্রদর্শন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সূত্র : বাংলাভিশন।