যুদ্ধের মধ্যেই রমজানকে স্বাগত জানাবেন ফিলিস্তিনিরা
- প্রকাশের সময় : ১২:০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
- / ৩৮ বার পঠিত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যুদ্ধের ভীতি ও অনাহারের মধ্যেই নিরানন্দ মনোভাবে রোজা রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। স্বাভাবিক অবস্থায় পবিত্র রমজান মাসে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কোনও চুক্তি না হওয়ায় এবারের রমজান মাস যুদ্ধের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনের মানুষদের। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইসলামের একটি পবিত্রতম স্থান জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। রমজানে প্রতি দিন লাখ লাখ মুসল্লি মসজিদে নামাজে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বিরোধে গুরুত্বপূর্ণ আল আকসা মসজিদ। স্থানটি ইহুদিদের কাছেও পবিত্র। তারা এটিকে টেম্পল মাউন্ট বলে অভিহিত করে। ২০২১ সালে ইসরায়েল ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মসজিদটি।
ওই সময় দশ দিনের যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ছয় মাসে গড়িয়েছে। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার পর এই আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের পরিসংখ্যান অনুসারে, হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ১২০০। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে সেখানে দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কায় সতর্কতা জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ। ইতোমধ্যে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলে কট্টরপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছিলেন, আল আকসায় মুসল্লিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ চান তিনি। যদিও পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, মুসল্লিদের সংখ্যা গত বছরের সমান সংখ্যায় থাকবে। আল আকসা মসজিদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জেরুজালেম ওয়াক্ফ এর মহা পরিচালক আজ্জাম আল-খাতিব বলেছেন, এটি আমাদের মসজিদ এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। এই মসজিদে মুসলিমদের উপস্থিতি আমাদের সুরক্ষিত করতে হবে। মসজিদে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির প্রবেশ করতে পারা উচিত।
ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে সোমবার থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। কিন্তু আগের বছরগুলোর তুলনায় বিপরীত চিত্র পশ্চিম তীরেও। সচরাচর রমজানের শুরুতে ওল্ড সিটিতে যে সাজ-সজ্জা থাকে, এবার তা করা হয়নি। দখলকৃত পশ্চিম তীরেও গাজার মতো নিরানন্দ আবহ। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বা ইহুদি সেটেলারদের সঙ্গে হামলা ও সংঘর্ষে প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ওল্ড সিটির কমিউনিটি নেতা আম্মার সিডার বলেছেন, আমাদের শিশু ও বয়স্ক এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবার জেরুজালেমের পুরনো শহরে সাজ-সজ্জা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, রমজানকে শান্তিপূর্ণ রাখতে তারা কাজ করছে এবং উসকানিমূলক পদক্ষেপ ঠেকাতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ থেকে শুরু করে ক্র্যাকডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রেখে রমজানের নামাজ পড়তে অনুমতি দেওয়া হবে। মুসলিম বিশ্বের কাছে আল আকসায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ তিক্ত বিষয়গুলোর একটি। গত মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ রমজানের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের আল আকসা মসজিদ অভিমুখে মিছিল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বছর ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদের ভেতরে প্রবেশের পর সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সময় সৌদি আরবসহ আরব লিগ ঘটনাটির নিন্দা জানিয়েছিল। ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেক রাফাতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে প্লাস্টিকের তাঁবুতে বসবাস করছেন। তারা তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছেন।
পাঁচ সন্তানের মা মাহা বলেন, রমজানকে স্বাগত জানানোর মতো কোনও প্রস্তুতি আমরা নেইনি। কারণ গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা অনাহারে কাটাচ্ছি। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে নিজের বাড়িতে বিভিন্ন সাজ-সজ্জা করা হতো। ফ্রিজে ইফতারের বিভিন্ন সামগ্রী মজুত থাকত।
মাহা বলেছেন, কোনও খাবার নেই। আমাদের শুধু রয়েছে ক্যানের খাবার ও চাল। আকাশচুম্বী দামে বিক্রি হচ্ছে খাদ্যপণ্য। রবিবার গাজা শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুই বছরের মধ্যে পশ্চিম তীরে সহিংসতা রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। গাজার রাফাতে ইসরায়েলি অভিযান সম্প্রসারিত হলে জেননি, তুলকারম, নাবলুস ও অন্যান্য শহরে সহিংসতা আরও বাড়তে পারার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনিদের দ্বারা গাড়িচাপা বা ছুরিকাঘাতের আশঙ্কায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে।
গাজায় বাস্তুচ্যুত নেহাদ এল-জেদ বলেছেন, প্রতি বছরের মতো এবারের পরিস্থিতি না হলেও রমজান একটি আশীর্বাদের মাস। কিন্তু আমরা অটল ও ধৈর্য ধরছি। আমরা স্বাভাবিকভাবে রমজানকে স্বাগত জানাবো। তিনি আরও বলেন, আগামী রমজানে আমরা আশা করি গাজায় ফিরতে পারব। আশা করি ধ্বংসযজ্ঞ ও গাজার অবরোধের পরিবর্তন হবে এবং ভালো অবস্থায় ফিরব। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।