নিউইয়র্ক ০৮:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিল উত্তর কোরিয়া

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৪৬ বার পঠিত

চার বছর বিরতির পর আবারও বিদেশি পর্যটকদের স্বাগত জানাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশটি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার সীমিত সংখ্যক ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে দেশটির ‘র‍্যাসন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে’ পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ট্যুর ম্যানেজার রোয়ান বেয়ার্ড এই প্রথম একটি পর্যটক দলের সদস্য হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কর্মকর্তারা প্রথমে তাঁকে রুশ নাগরিক ভেবেছিলেন। পরে তাঁর অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট দেখে কর্মকর্তারা বেশ আগ্রহ দেখান।

রোয়ান বেয়ার্ড একটি পর্যটন প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলেন, যারা বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) র‍্যাসন অঞ্চলে পর্যটকদের আনুষ্ঠানিক প্রবেশের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর কোম্পানি ইয়াং পাইওনিয়ার ট্যুরস এবং চীনা আরেকটি কোম্পানি প্রথম দল হিসেবে সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যাবেন। তাঁদের ভ্রমণসূচিতে স্থানীয় বিয়ার পান, বিদেশি ভাষা স্কুল, তায়কোয়ান্দো একাডেমি এবং উত্তর কোরিয়া, চীন ও রাশিয়ার সীমান্ত সংযোগস্থল পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল। পর্যটন পুনরুদ্ধার করতে ধীর গতিতে এগোচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ১৯৯১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে র‍্যাসন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হলেও রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের তুলনায় এই অঞ্চল তুলনামূলক কম জনপ্রিয়। তবে এখন পর্যন্ত পিয়ংইয়ংকে শুধুমাত্র রুশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মহামারির আগে ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি ভ্রমণকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিলেন চীনা পর্যটক। সেই বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ চীনা উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করেন। বর্তমানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও চীনা পর্যটকদের র‍্যাসনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

বেয়ার্ড জানান, প্রথম ট্যুরগুলোর চাহিদা অত্যধিক। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাদের ইনবক্সে অসংখ্য বুকিংয়ের অনুরোধ এসেছে। প্রধানত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপের পর্যটকেরা উত্তর কোরিয়ায় ভ্রমণে আগ্রহী। তবে দেশটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং ২০১৭ সাল থেকে নিজেদের নাগরিকদের উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও উত্তর কোরিয়ায় কিছু বিধিনিষেধ এখনো বহাল রয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে বিদেশিদের প্রবেশ এখনো নিষিদ্ধ। আর ঘুরে বেড়ানোর সময় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি, যেমন—মাস্ক পরিধান ও তাপমাত্রা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে।

চীনের কোরীয় ট্যুরসের প্রধান প্রতিনিধি জেরগো ভ্যাকজি জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার ট্যুর গাইডরা দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটক সামলাতে কিছুটা নার্ভাস বোধ করছেন। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নিয়ে তাঁদের সংকোচ ও জড়তা ছিল। তবে তাঁরা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে বেশ উৎসাহী ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া পর্যটন শিল্প পুনরায় চালু করে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে, পর্যটন খাত থেকে দেশটি বছরে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি ডলার আয় করতে পারে। তবে কিছু সমালোচক মনে করেন, পর্যটন থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশটির সামরিক কর্মসূচিতে ব্যয় হতে পারে। তবে বেয়ার্ড এ ধারণা নাকচ করে বলেন, এই অর্থ মূলত পর্যটন অবকাঠামো ও স্থানীয় কর্মীদের বেতনে ব্যবহৃত হয়। উত্তর কোরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও কিছু পরিবর্তন এনেছে। দেশটির প্রচারমাধ্যমে এখন দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘রিপাবলিক অব কোরিয়া’ নামে সম্বোধন করা হচ্ছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়াকে তারা ‘সাউথ চোসন’ নামে সম্বোধন করত।

পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার পর্যটন উন্মুক্ত করার এই পদক্ষেপ তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পরিবর্তনের প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে। কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের গবেষক ড. ইয়ি জি সান বলেন, পর্যটকদের প্রত্যাবর্তন উত্তর কোরিয়াকে ‘বিপজ্জনক দেশ’ থেকে ‘নিরাপদ ভ্রমণ গন্তব্য’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বিদেশি পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিল উত্তর কোরিয়া

প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চার বছর বিরতির পর আবারও বিদেশি পর্যটকদের স্বাগত জানাতে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশটি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার সীমিত সংখ্যক ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে দেশটির ‘র‍্যাসন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে’ পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ট্যুর ম্যানেজার রোয়ান বেয়ার্ড এই প্রথম একটি পর্যটক দলের সদস্য হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে কর্মকর্তারা প্রথমে তাঁকে রুশ নাগরিক ভেবেছিলেন। পরে তাঁর অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট দেখে কর্মকর্তারা বেশ আগ্রহ দেখান।

রোয়ান বেয়ার্ড একটি পর্যটন প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলেন, যারা বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) র‍্যাসন অঞ্চলে পর্যটকদের আনুষ্ঠানিক প্রবেশের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর কোম্পানি ইয়াং পাইওনিয়ার ট্যুরস এবং চীনা আরেকটি কোম্পানি প্রথম দল হিসেবে সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যাবেন। তাঁদের ভ্রমণসূচিতে স্থানীয় বিয়ার পান, বিদেশি ভাষা স্কুল, তায়কোয়ান্দো একাডেমি এবং উত্তর কোরিয়া, চীন ও রাশিয়ার সীমান্ত সংযোগস্থল পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল। পর্যটন পুনরুদ্ধার করতে ধীর গতিতে এগোচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ১৯৯১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে র‍্যাসন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হলেও রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের তুলনায় এই অঞ্চল তুলনামূলক কম জনপ্রিয়। তবে এখন পর্যন্ত পিয়ংইয়ংকে শুধুমাত্র রুশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মহামারির আগে ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি ভ্রমণকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিলেন চীনা পর্যটক। সেই বছর প্রায় সাড়ে তিন লাখ চীনা উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করেন। বর্তমানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও চীনা পর্যটকদের র‍্যাসনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

বেয়ার্ড জানান, প্রথম ট্যুরগুলোর চাহিদা অত্যধিক। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাদের ইনবক্সে অসংখ্য বুকিংয়ের অনুরোধ এসেছে। প্রধানত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপের পর্যটকেরা উত্তর কোরিয়ায় ভ্রমণে আগ্রহী। তবে দেশটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং ২০১৭ সাল থেকে নিজেদের নাগরিকদের উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও উত্তর কোরিয়ায় কিছু বিধিনিষেধ এখনো বহাল রয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে বিদেশিদের প্রবেশ এখনো নিষিদ্ধ। আর ঘুরে বেড়ানোর সময় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি, যেমন—মাস্ক পরিধান ও তাপমাত্রা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে।

চীনের কোরীয় ট্যুরসের প্রধান প্রতিনিধি জেরগো ভ্যাকজি জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার ট্যুর গাইডরা দীর্ঘ বিরতির পর পর্যটক সামলাতে কিছুটা নার্ভাস বোধ করছেন। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নিয়ে তাঁদের সংকোচ ও জড়তা ছিল। তবে তাঁরা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে বেশ উৎসাহী ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া পর্যটন শিল্প পুনরায় চালু করে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে, পর্যটন খাত থেকে দেশটি বছরে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি ডলার আয় করতে পারে। তবে কিছু সমালোচক মনে করেন, পর্যটন থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশটির সামরিক কর্মসূচিতে ব্যয় হতে পারে। তবে বেয়ার্ড এ ধারণা নাকচ করে বলেন, এই অর্থ মূলত পর্যটন অবকাঠামো ও স্থানীয় কর্মীদের বেতনে ব্যবহৃত হয়। উত্তর কোরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও কিছু পরিবর্তন এনেছে। দেশটির প্রচারমাধ্যমে এখন দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘রিপাবলিক অব কোরিয়া’ নামে সম্বোধন করা হচ্ছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়াকে তারা ‘সাউথ চোসন’ নামে সম্বোধন করত।

পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার পর্যটন উন্মুক্ত করার এই পদক্ষেপ তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পরিবর্তনের প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে। কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের গবেষক ড. ইয়ি জি সান বলেন, পর্যটকদের প্রত্যাবর্তন উত্তর কোরিয়াকে ‘বিপজ্জনক দেশ’ থেকে ‘নিরাপদ ভ্রমণ গন্তব্য’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সহায়তা করতে পারে।