নিউইয়র্ক ০২:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সিরিয়ায় নতুন অস্থিরতা: কী ঘটছে, কেন ঘটছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • / ৪১ বার পঠিত

সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আসাদপন্থী সশস্ত্র যোদ্ধাদের ভয়াবহ লড়াইয়ে উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুস অঞ্চলগুলো লাশের শহরে পরিণত হয়েছে। চার দিন পর অভিযান শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে আহমেদ আল-শারা নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বিরোধী যোদ্ধাদের আক্রমণে সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের তিন মাস পর এমন অস্থিরতা দেখা দিল।

লাতাকিয়া অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এই চার দিনে প্রকাশ্যে হত্যা, অপহরণ, চুরি, হয়রানির কথা উঠে এসেছে। কী ঘটছে, কেন ঘটছে, কে এটা ঘটাচ্ছে – সহিংসতা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে :

কী হচ্ছে সিরিয়ায়?
গত ৬ মার্চ থেকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার উপকূলীয় শহরগুলোতে লড়াই করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে লাতাকিয়া, বানিয়াস, তারতুস এবং জাবলেহ শহরে।
বাশার আল-আসাদের আলাউইত সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই শহরগুলোতে বেশি বসবাস করে। এদের মধ্য থেকে অনেকেই নতুন সরকারের বিরোধিতা ঘোষণা করে, বিশেষ করে আসাদের প্রাক্তন সহযোগিরা। অন্তর্বর্তী সরকার এদের আসাদের ‘অবশিষ্টাংশ’ বলে উল্লেখ করে।

সংঘাত কীভাবে শুরু হয়?
গত ৬ মার্চ আসাদপন্থী বন্দুকধারীরা উত্তর-পশ্চিমে লাতাকিয়া এবং এর আশেপাশের এলাকায় সামরিক বাহিনীর লোকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমপক্ষে ১৬ সদস্যকে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, ৬ মার্চের হামলাই প্রথম নয়। আসাদের পতনের পর থেকে এর আগেও সরকারি বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে।

কতজন মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে?
লাশের সংখ্যা এখনো এখনো বেড়ে চলছে। তবে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর ৯ মার্চের প্রতিবেদন অনুসারে, কমপক্ষে ১ হাজার ৩১১ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক, ২৩০ জন বিভিন্ন শাখার নিরাপত্তাকর্মী এবং প্রায় ২৫০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা।

কেন বিশেষ করে এই এলাকা?
লাতাকিয়া-তারতুস অক্ষটি সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর অবস্থিত, যার মধ্যে বানিয়াস এবং জাবলেহ অবস্থিত। এই দুটি আলাউই-সংখ্যাগরিষ্ঠ গভর্নরেটকে দীর্ঘদিন ধরে আসাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। আসাদের পতনের পর পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করেছিলেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ হবে। বানিয়াসে সিরিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারও রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, সশস্ত্র যোদ্ধারা শোধনাগারে আক্রমণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের প্রতিহত করা হয়।

কে লড়ছে?
আসাদের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাকে একজন অজ্ঞাত নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অজ্ঞাতপরিচয় সংগঠও রয়েছে, যারা অতর্কিত নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ‘প্রতিশোধ’ নিতে যায়। আলাউত সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যরা জানিয়েছেন, আদাদপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আলাউইট বেসামরিক নাগরিকদের হয়রানি ও অপহরণ করছে। সিরিয়ার সরকারের অনুমান, উপকূলীয় এলাকায় ৫,০০০ সশস্ত্র ব্যক্তি রয়েছে।

‘শাসনের অবশিষ্টাংশ’ কারা?
গত মাস থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আসাদের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা মুকদাদ ফতেহা উপকূলীয় অঞ্চলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছেন। আসাদের রিপাবলিকান গার্ডে থাকা ফ্লেইহা তার বার্তায় দাবি করেছেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য বার্তায় আসাদের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস সুলেমান ডাল্লার নাম উল্লেখ করে ‘সিরিয়া মুক্তির জন্য সামরিক কাউন্সিল’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার কী বলেছে?
ক্রমবর্ধমান সহিংসতা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। গতকাল রোববার শারা সংকট মোকাবেলায় দুটি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন। একটি হলো বিচারক ও আইনজীবীদের একটি স্বাধীন কমিটি, যারা ৬ মার্চের হামলা এবং এর ফলে সংঘটিত সহিংসতার তদন্ত করবে। সেই সঙ্গে উচ্চতর জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক শান্তির লক্ষ্যে দায়ীদের জবাবদিহি করবে। দ্বিতীয়টি হলো ‘নাগরিক শান্তির জন্য সুপ্রিম কমিটি’, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাবে। দামেস্কের একটি মসজিদে বক্তৃতা দেওয়ার সময় শারা সংকটের তীব্রতা স্বীকার করেন এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান।

উপকূলীয় এলাকার বেসামরিক লোকেরা কী করছে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাতাকিয়ার একজন বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, আমি কখনো বাইরে যাই না এবং জানালাও খুলি না। এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আলাউইসদের জন্য কোনো নিরাপত্তা নেই।আসাদের সম্প্রদায়ের যারা রয়ে গেছে, তারা আতঙ্কের মধ্যে বসবাসের কথা বলেছ। এই ভয়ে তাদের মনে যে, সশস্ত্র যোদ্ধারা তাদের বাড়িতে আক্রমণ করবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সিরিয়ায় নতুন অস্থিরতা: কী ঘটছে, কেন ঘটছে

প্রকাশের সময় : ১০:৫১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আসাদপন্থী সশস্ত্র যোদ্ধাদের ভয়াবহ লড়াইয়ে উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুস অঞ্চলগুলো লাশের শহরে পরিণত হয়েছে। চার দিন পর অভিযান শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে আহমেদ আল-শারা নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বিরোধী যোদ্ধাদের আক্রমণে সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতনের তিন মাস পর এমন অস্থিরতা দেখা দিল।

লাতাকিয়া অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এই চার দিনে প্রকাশ্যে হত্যা, অপহরণ, চুরি, হয়রানির কথা উঠে এসেছে। কী ঘটছে, কেন ঘটছে, কে এটা ঘটাচ্ছে – সহিংসতা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে :

কী হচ্ছে সিরিয়ায়?
গত ৬ মার্চ থেকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার উপকূলীয় শহরগুলোতে লড়াই করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে লাতাকিয়া, বানিয়াস, তারতুস এবং জাবলেহ শহরে।
বাশার আল-আসাদের আলাউইত সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই শহরগুলোতে বেশি বসবাস করে। এদের মধ্য থেকে অনেকেই নতুন সরকারের বিরোধিতা ঘোষণা করে, বিশেষ করে আসাদের প্রাক্তন সহযোগিরা। অন্তর্বর্তী সরকার এদের আসাদের ‘অবশিষ্টাংশ’ বলে উল্লেখ করে।

সংঘাত কীভাবে শুরু হয়?
গত ৬ মার্চ আসাদপন্থী বন্দুকধারীরা উত্তর-পশ্চিমে লাতাকিয়া এবং এর আশেপাশের এলাকায় সামরিক বাহিনীর লোকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমপক্ষে ১৬ সদস্যকে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, ৬ মার্চের হামলাই প্রথম নয়। আসাদের পতনের পর থেকে এর আগেও সরকারি বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে।

কতজন মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে?
লাশের সংখ্যা এখনো এখনো বেড়ে চলছে। তবে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর ৯ মার্চের প্রতিবেদন অনুসারে, কমপক্ষে ১ হাজার ৩১১ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক, ২৩০ জন বিভিন্ন শাখার নিরাপত্তাকর্মী এবং প্রায় ২৫০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা।

কেন বিশেষ করে এই এলাকা?
লাতাকিয়া-তারতুস অক্ষটি সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর অবস্থিত, যার মধ্যে বানিয়াস এবং জাবলেহ অবস্থিত। এই দুটি আলাউই-সংখ্যাগরিষ্ঠ গভর্নরেটকে দীর্ঘদিন ধরে আসাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। আসাদের পতনের পর পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করেছিলেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ হবে। বানিয়াসে সিরিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগারও রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, সশস্ত্র যোদ্ধারা শোধনাগারে আক্রমণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের প্রতিহত করা হয়।

কে লড়ছে?
আসাদের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সশস্ত্র যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাকে একজন অজ্ঞাত নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অজ্ঞাতপরিচয় সংগঠও রয়েছে, যারা অতর্কিত নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ‘প্রতিশোধ’ নিতে যায়। আলাউত সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যরা জানিয়েছেন, আদাদপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আলাউইট বেসামরিক নাগরিকদের হয়রানি ও অপহরণ করছে। সিরিয়ার সরকারের অনুমান, উপকূলীয় এলাকায় ৫,০০০ সশস্ত্র ব্যক্তি রয়েছে।

‘শাসনের অবশিষ্টাংশ’ কারা?
গত মাস থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আসাদের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা মুকদাদ ফতেহা উপকূলীয় অঞ্চলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছেন। আসাদের রিপাবলিকান গার্ডে থাকা ফ্লেইহা তার বার্তায় দাবি করেছেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যান্য বার্তায় আসাদের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস সুলেমান ডাল্লার নাম উল্লেখ করে ‘সিরিয়া মুক্তির জন্য সামরিক কাউন্সিল’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার কী বলেছে?
ক্রমবর্ধমান সহিংসতা সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। গতকাল রোববার শারা সংকট মোকাবেলায় দুটি নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন। একটি হলো বিচারক ও আইনজীবীদের একটি স্বাধীন কমিটি, যারা ৬ মার্চের হামলা এবং এর ফলে সংঘটিত সহিংসতার তদন্ত করবে। সেই সঙ্গে উচ্চতর জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক শান্তির লক্ষ্যে দায়ীদের জবাবদিহি করবে। দ্বিতীয়টি হলো ‘নাগরিক শান্তির জন্য সুপ্রিম কমিটি’, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাবে। দামেস্কের একটি মসজিদে বক্তৃতা দেওয়ার সময় শারা সংকটের তীব্রতা স্বীকার করেন এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান।

উপকূলীয় এলাকার বেসামরিক লোকেরা কী করছে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাতাকিয়ার একজন বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, আমি কখনো বাইরে যাই না এবং জানালাও খুলি না। এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আলাউইসদের জন্য কোনো নিরাপত্তা নেই।আসাদের সম্প্রদায়ের যারা রয়ে গেছে, তারা আতঙ্কের মধ্যে বসবাসের কথা বলেছ। এই ভয়ে তাদের মনে যে, সশস্ত্র যোদ্ধারা তাদের বাড়িতে আক্রমণ করবে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।