হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে এখনই ভাবছে না ভারত, বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার প্রস্তাব বিবেচনা করবে
- প্রকাশের সময় : ১২:০৬:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৭ বার পঠিত
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই–আগস্ট সহিংসতা কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরাকরের পক্ষ থেকেও এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
তবে শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার দাবির বিষয়টি এখনো ধারণার পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
তবে তিনি স্বীকার করেছেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে ভারতের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। দেশে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হলেও তিনি এখনো সেখানে আছেন এবং পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী মাসেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর অবস্থানের ব্যাপারে ভারত এখনো প্রকাশ্যে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।
আজ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ইএএম) মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এটি এমন একটি বিষয় যা ‘নিছক অনুমান মূলক’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার কারণে খুব অল্প সময়ের নোটিশে ভারতে এসেছেন। এ বিষয়ে আমাদের আর কিছু যোগ করার নেই।’
মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় প্রকল্পগুলো সেখানকার অস্থিরতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। একবার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে গেলে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলে, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কাজগুলো শুরু হব এবং কীভাবে প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, আমরা তাঁদের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কীভাবে সেটি করতে পারি তা দেখব।
জয়সওয়াল বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অশান্তির পরে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিরাজ করছে সব দেশের জন্যই সেটি সমস্যা। ঢাকার ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ‘তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে’। ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকার হাইকমিশন থেকে সমস্ত কম দরকারি কর্মী এবং তাঁদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার।
বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে জয়সওয়াল বলেন, ‘তাদের বর্ণনাটি বিভ্রান্তিকর এবং এতে মনে হয় যে, বন্যার জন্য ভারত কোনো না কোনোভাবে দায়ী। এটি সঠিক নয় এবং এতে স্পষ্ট করে যে, তারা ভারত সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তথ্য উপেক্ষা করা হয়েছে।’
মুখপাত্র পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশে বন্যা অবিরাম এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে হয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে আন্ত নদীর বাঁধ খোলার কারণে নয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, বন্যার জন্য ভারত দায়ী এমন কোনো ইঙ্গিত ‘বিভ্রান্তিকর’।
তিনি বলেন, সিএনএনের প্রতিবেদনে এই সত্যটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে যে, পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বিদ্যমান যৌথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘নিয়মিত এবং সময়োপযোগী তথ্য ও পর্যালোচনা মূলক তথ্য বিনিময়’ হচ্ছে।
বন্যা মোকাবিলায় একটি নতুন দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জয়সওয়াল বলেন, দুই দেশ ইতিমধ্যে বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া স্থাপন করেছে। উভয় পক্ষ ৫৪টি নদীর পানি ভাগ করে এবং এই প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সময়মতো এবং নিয়মিত ভিত্তিতে তথ্য বিনিময় করে আসছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে বা…মোকাবিলায় আরও সহায়তা করতে পারে এমন কোনো নতুন ব্যবস্থা থাকলে, সেটি আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে এগিয়ে নিতে পারি, যোগ করেন জয়সওয়াল।
এদিকে ঢাকায় ভারতীয় দূত এবং ড. ইউনূসের মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠকে সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের জন্য জনগণের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে দিল্লি।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে সীমিত ভিসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভিসা শুধু জরুরি বা চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে। আইন–শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলেই সব ভিসা পরিষেবা চালু করা যেতে পারে। সূত্র: আজকের পত্রিকা।