ইমরানকে কারাগারে রেখেই পাকিস্তানে নির্বাচন আজ
- প্রকাশের সময় : ০১:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৭ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে। চারটি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে যিনি এগিয়ে আছেন, সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে একের এক মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা নির্বাচন নয়, সিলেকশন। নির্বাচনে যে নওয়াজ শরিফ ও তার দল জয় পাবে, সেটা আগেই বলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যেখানে কোনো সরকারই ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ ভোগ করতে পারেনি। কোনো না কোনো অজুহাতে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে বা হতে হয়েছে।
দেশটির সামরিক বাহিনী মুখ্য সব রাজনীতিকদের মুক্তি আর জেলবন্দির পেছন ভূমিকা পালন করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। যদিও সামরিক বাহিনী প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। অথচ নওয়াজ শরিফই একসময় সামরিক বাহিনীর চক্ষুশূল ছিলেন বলে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। এদিকে নির্বাচনের আগের দিনই বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ২৮ জনের প্রাণ গেছে।
নির্বাচন আয়োজনে এক বছর বিলম্ব ঘটে। অর্থনৈতিক সংকট এবং জঙ্গি হামলায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানে ভবিষ্যত্টাই হুমকির মুখে। কারণ নির্বাচনে যিনিই জিতুন না কেন, তিনি দেশটির এই সংকট কতটা মোকাবিলা করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে। পাকিস্তানে বর্তমানে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ। তাঁর আমলে নওয়াজ শরিফকে একের পর এক মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয় আইন পরিবর্তন করে। আর ইমরান খানকে উলটো গ্রেফতার করে কারাগারে ঢুকিয়ে বিভিন্ন মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৭৪ বছর বয়সী নওয়াজ শরিফ চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টায় আছেন। বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে তাকে ক্ষমতায় বসানো হচ্ছে। যদিও নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ বিলাওয়াল ইতিমধ্যে নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করেছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, একজনকে ক্ষমতায় বসানোর সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও হবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
পাকিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়া বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে কী হবে তা এখনই বলে দেওয়া যায়। সেনা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে কাকে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চায় এবং সম্ভবত সেই মানুষটি হলেন নওয়াজ শরিফ। তাই ৮ ফেব্রুয়ারি (আজ) যা হবে, তা ইলেকশন না বলে সিলেকশন বা বাছাই করে নেওয়া বলাটাই ভালো।
নিরাপত্তার প্রশ্ন
নির্বাচনের এক দিন আগে গতকাল বেলুচিস্তানে দুটি বিস্ফোরণ কেড়ে নিল ২৮টি প্রাণ। অথচ বুধবার থেকেই প্রায় ৫ লাখ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। প্রায় ৯০ হাজার ভোটকেন্দ্রে বিতরণ করা হয় ব্যালট পেপার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারসহ নানা ধরনের বিতর্কিত ঘটনায় মোড়া এবারের নির্বাচন। প্রশ্ন উঠছে নির্বাচনি নিরাপত্তা নিয়েও। ভোটের আগে অন্তত দুই জন প্রার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া, দেশ জুড়ে একাধিক হামলার ঘটনার কথা জানা গেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটি, যার মধ্যে ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের ভোটাধিকার রয়েছে। নির্বাচনের ময়দানে আছেন প্রায় ১৮ হাজার প্রার্থী। ২৬৬টি আসনে লড়াই হচ্ছে, আরও ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুর জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া, ৭৪৯টি আঞ্চলিক সংসদেরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে একই দিনে।
ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নির্বাচনে নিজস্ব ক্রিকেট ব্যাট মার্কায় ভোট চাইতে পারছে না। ফলে দলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা বাধ্য হয়ে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে আসরে নেমেছেন। নির্বাচন কমিশনই তাদের শাকসবজির মতো বিভিন্ন চিহ্ন বরাদ্দ করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ প্রশাসনও তাদের ঠিকমতো নির্বাচনি প্রচার করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনও ইমরান খানের দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের ‘হয়রানির প্যাটার্ন’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তা পাকিস্তানে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ অবশ্য যাবতীয় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ করে নির্বাচনের ওপর নজর রাখার সুযোগ করে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংগঠন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করার ডাক দিয়েছে। —ডন, বিবিসি ও ডয়চেভেলে
হককথা/নাছরিন