নিউইয়র্ক ০৪:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফ্রান্সে নাটকীয়তা অনিশ্চয়তা

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪
  • / ৮০ বার পঠিত

চরম নাটকীয়তা ফ্রান্সে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট।ক্ষমতার লাইমলাইটে এসেও তার ধারেকাছে ভিড়তে পারলেন না অভিবাসন বিরোধী উগ্র ডানপন্থি নেত্রী মেরি লা পেন ও তার জোট। রাজনীতির এক জটিল অঙ্কে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। উল্টো যারা মোটেও আলোচনায় ছিল না, সেই বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট উঠে এসেছে শীর্ষে। আর শীর্ষে থাকা ন্যাশনাল র‌্যালি ও তার জোটকে নামিয়ে দিয়েছে একেবারে তিন নম্বরে। পুরো ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়িয়েছে বামপন্থিদের দিকে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সব ওলটপালট হয়ে গেছে। কোনো হিসাব, পূর্বাভাস, ভবিষ্যদ্বাণী কিছুই ধোপে টেকেনি। তবে এই যে ঘূর্ণিচক্র এটা সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের জোট আনসেমবলের সর্বশেষ কৌশলে। তাদের কমপক্ষে ২১৭ জন প্রার্থী নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নির্বাচনের আগে।

উদ্দেশ্য মেরি লা পেনের ন্যাশনাল র‌্যালির বিজয় রথ থামিয়ে দেয়া। তা কাজ করেছে টনিকের মতো। ফলে ফ্রান্স জুড়ে রোববার রাতব্যাপী বামপন্থি সমর্থকদের উল্লাস দেখা দিয়েছে। তারা আকাশে আতশবাজি পুড়িয়ে, রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে বিজয়কে সেলিব্রেট করেছেন। অন্যদিকে ন্যাশনাল র‌্যালি শিবিরে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক নীরবতা। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের এই জোট গঠন এবং প্রার্থী প্রত্যাহারের কৌশলের নিন্দা জানিয়েছেন ন্যাশনাল র‌্যালি দলের প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা।

এখন ক্ষমতা নিয়ে শুরু হতে পারে নতুন এক সমীকরণ। নিউ পপুলার ফ্রন্ট নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে কমপক্ষে ২৮৯ আসন পেতে হয়। কিন্তু তারা পেয়েছে ১৮২ আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক অনেক দূরত্ব এর। ফলে চলছে সমঝোতা। সোমবার সারাদিন দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলে। পার্লামেন্ট এখন বড় তিনটি ভাগে বিভক্ত। একদিকে বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট, দ্বিতীয়ত ম্যাক্রনের আনসেমবল (১৬৮ আসন) এবং মেরি লা পেনের ন্যাশনাল র‌্যালি (১৪৩ আসন)। রোববার রাতেই প্রধানমন্ত্রী গাব্রিয়েল আটাল সকাল হলেই পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তিনি এদিন পদত্যাগপত্র জমা দিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে গেলে তাকে এ পদে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান ম্যাক্রন।

ওদিকে আগে থেকেই নির্ধারিত ২০২৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন ম্যাক্রন। অনলাইন ফ্রান্স ২৪ বলছে, রোববার রাতে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর প্যারিসের বিখ্যাত স্ট্যালিনগ্রাদ স্কোয়ারে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন নিউ পপুলার ফ্রন্টের নেতা জ্যাঁ-লুক মেলেঞ্চন। এ সময় তিনি অবিলম্বে বামপন্থিদের নিয়ে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাক্রনকে। বলেছেন, এ জন্য নিউ পপুলার ফ্রন্ট প্রস্তুত। ঐক্যবদ্ধ বামপন্থিরা দেখিয়ে দিয়েছে তারা ঐতিহাসিক ঘটনায় এক সমান। দেশের সামনে যে ফাঁদ পাতা হয়েছিল তারা তাকে ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এতে ফ্রান্স প্রজাতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, সরকারে যেতে পারলে নিউ পপুলার ফ্রন্ট মূল অর্থনৈতিক নীতির বিষয়ে ডিক্রি জারি করতে মোটেও কালক্ষেপণ করবে না।

তবে অন্য বাম দলগুলোকে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছেন মধ্য-বামপন্থি রাফায়েল গ্লুকসম্যান। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাচনে সোশ্যালিস্টস হিসেবে ভালো পারফর্ম করেছেন। প্রকাশ্যে তিনি তার মিত্রদের আহ্বান জানিয়েছেন ‘প্রাপ্তবয়স্কদের’ মতো আচরণ করতে। তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের পার্লামেন্ট বিভক্ত। আমাদেরকে আলোচনায় লিপ্ত হতে হবে। ফলে ফ্রান্সের রাজনীতির হিসাব মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে। সরকার কে বা কারা গঠন করবে, তা নিশ্চিত নয়। যদি বামপন্থিদের সঙ্গে সরকার গঠন করেন ম্যাক্রন, তবুও সংশয় থেকে যাবে। কারণ, বামপন্থিদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নীতির ব্যাপক পার্থক্য আছে। পার্লামেন্টে সরকারবিরোধী কোনো জোট যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

তাতে ম্যাক্রন যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন তার মেয়াদ, সে পর্যন্ত টিকে না-ও থাকতে পারেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন কী করবেন তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। ফ্রান্স ২৪ বলছে, মিত্ররা জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন বলেছেন তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগে চাইছেন পার্লামেন্ট নিজের মতো করে সুসংগঠিত হোক। কোনো দলই পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এবং তিনটি বড় ব্লকের সামনে সুস্পষ্ট আগামী নেই। এ কারণে সামনের বছরগুলোতে ফ্রান্সকে অচলাবস্থা গ্রাস করবে। এক্ষেত্রে ইংরেজিতে ‘গ্রিডলক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এমন এক পরিস্থিতি যেখানে কোনো একটি শহরের সব সড়ক গাড়িতে আটকে থাকে। কোনো রকম গাড়ির নড়াচড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একে এককথায় অচলাবস্থা বলা যায়।

ম্যাক্রনের নীতির সঙ্গে বাম বা ডানপন্থিদের কারও নীতির মিল খায় না। এ অবস্থায় কী হবে ফ্রান্সের তা নিয়ে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ চলছে। ফলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সামনে এক বড় রকম আঘাত এসে হাজির হয়েছে। এর ফলে ইউরো জোনে এই দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়তে পারে। ২৬শে জুলাই প্যারিসে অলিম্পিক গেমস। তার আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে পারে কয়েক সপ্তাহ। এমন অবস্থায় উগ্র বামপন্থি ফ্রান্স আনবোউড পার্টির ডানিয়েলে ওবোনো উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি ফ্রান্স ২৪’কে বলেছেন, নতুন সরকারকে অবশ্যই একটি উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট যে কর্মসূচি সামনে তুলে ধরেছে।

কিন্তু ফ্রান্স ম্যাক্রন কি তা মেনে নেবেন! আবার বামপন্থি ফ্রান্স আনবোউড পার্টির প্রধান জ্যাঁ-লুক মেলেঞ্চন রোববার প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের মাথা নত করে পরাজয় গ্রহণ করে নেয়ার আহ্বান জানান। এবং নিউ পপুলার ফ্রন্টকে জোট সরকার গঠনের আহ্বান জানান। কিন্তু একই দিন রাতে তার বক্তব্য ভিন্ন। তিনি ম্যাক্রনের সঙ্গে সরকার গঠনের কথা বলেছেন। এ জন্য রাজনীতির মাঠ এলোমেলো হয়ে আছে। কোন দলকে কে বিশ্বাসে নেবে, তা খুব মুশকিল বলা। একইভাবে রোববারই উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালির প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা ‘অসম্মানজনক জোটে’র নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ফরাসিদেরকে নীতি পুনর্গঠন থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এই দলটির বিজয় থামিয়ে দিতে জোট করা হয়েছে।
ওদিকে এমন সব নাটকীয়তায় এবং অস্থিরতায় ফ্রান্সের শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বিএনপি পরিবাস-এর শেয়ার শতকরা ১.২ ভাগ পতন হয়। অন্যদিকে সোকজেন-এর শেয়ার পড়ে যায় শতকরা ১.৪ ভাগ। অন্যদিকে উগ্র ডানপন্থি মেরি লা পেনের দলের পরাজয়ের ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সূত্র: মানবজমিন।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ফ্রান্সে নাটকীয়তা অনিশ্চয়তা

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

চরম নাটকীয়তা ফ্রান্সে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট।ক্ষমতার লাইমলাইটে এসেও তার ধারেকাছে ভিড়তে পারলেন না অভিবাসন বিরোধী উগ্র ডানপন্থি নেত্রী মেরি লা পেন ও তার জোট। রাজনীতির এক জটিল অঙ্কে ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। উল্টো যারা মোটেও আলোচনায় ছিল না, সেই বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট উঠে এসেছে শীর্ষে। আর শীর্ষে থাকা ন্যাশনাল র‌্যালি ও তার জোটকে নামিয়ে দিয়েছে একেবারে তিন নম্বরে। পুরো ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়িয়েছে বামপন্থিদের দিকে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সব ওলটপালট হয়ে গেছে। কোনো হিসাব, পূর্বাভাস, ভবিষ্যদ্বাণী কিছুই ধোপে টেকেনি। তবে এই যে ঘূর্ণিচক্র এটা সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের জোট আনসেমবলের সর্বশেষ কৌশলে। তাদের কমপক্ষে ২১৭ জন প্রার্থী নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন নির্বাচনের আগে।

উদ্দেশ্য মেরি লা পেনের ন্যাশনাল র‌্যালির বিজয় রথ থামিয়ে দেয়া। তা কাজ করেছে টনিকের মতো। ফলে ফ্রান্স জুড়ে রোববার রাতব্যাপী বামপন্থি সমর্থকদের উল্লাস দেখা দিয়েছে। তারা আকাশে আতশবাজি পুড়িয়ে, রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে বিজয়কে সেলিব্রেট করেছেন। অন্যদিকে ন্যাশনাল র‌্যালি শিবিরে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক নীরবতা। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের এই জোট গঠন এবং প্রার্থী প্রত্যাহারের কৌশলের নিন্দা জানিয়েছেন ন্যাশনাল র‌্যালি দলের প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা।

এখন ক্ষমতা নিয়ে শুরু হতে পারে নতুন এক সমীকরণ। নিউ পপুলার ফ্রন্ট নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে কমপক্ষে ২৮৯ আসন পেতে হয়। কিন্তু তারা পেয়েছে ১৮২ আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক অনেক দূরত্ব এর। ফলে চলছে সমঝোতা। সোমবার সারাদিন দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলে। পার্লামেন্ট এখন বড় তিনটি ভাগে বিভক্ত। একদিকে বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট, দ্বিতীয়ত ম্যাক্রনের আনসেমবল (১৬৮ আসন) এবং মেরি লা পেনের ন্যাশনাল র‌্যালি (১৪৩ আসন)। রোববার রাতেই প্রধানমন্ত্রী গাব্রিয়েল আটাল সকাল হলেই পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তিনি এদিন পদত্যাগপত্র জমা দিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে গেলে তাকে এ পদে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান ম্যাক্রন।

ওদিকে আগে থেকেই নির্ধারিত ২০২৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন ম্যাক্রন। অনলাইন ফ্রান্স ২৪ বলছে, রোববার রাতে নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর প্যারিসের বিখ্যাত স্ট্যালিনগ্রাদ স্কোয়ারে উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন নিউ পপুলার ফ্রন্টের নেতা জ্যাঁ-লুক মেলেঞ্চন। এ সময় তিনি অবিলম্বে বামপন্থিদের নিয়ে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাক্রনকে। বলেছেন, এ জন্য নিউ পপুলার ফ্রন্ট প্রস্তুত। ঐক্যবদ্ধ বামপন্থিরা দেখিয়ে দিয়েছে তারা ঐতিহাসিক ঘটনায় এক সমান। দেশের সামনে যে ফাঁদ পাতা হয়েছিল তারা তাকে ভণ্ডুল করে দিয়েছে। এতে ফ্রান্স প্রজাতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, সরকারে যেতে পারলে নিউ পপুলার ফ্রন্ট মূল অর্থনৈতিক নীতির বিষয়ে ডিক্রি জারি করতে মোটেও কালক্ষেপণ করবে না।

তবে অন্য বাম দলগুলোকে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছেন মধ্য-বামপন্থি রাফায়েল গ্লুকসম্যান। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাচনে সোশ্যালিস্টস হিসেবে ভালো পারফর্ম করেছেন। প্রকাশ্যে তিনি তার মিত্রদের আহ্বান জানিয়েছেন ‘প্রাপ্তবয়স্কদের’ মতো আচরণ করতে। তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে আছি। কিন্তু আমাদের পার্লামেন্ট বিভক্ত। আমাদেরকে আলোচনায় লিপ্ত হতে হবে। ফলে ফ্রান্সের রাজনীতির হিসাব মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে। সরকার কে বা কারা গঠন করবে, তা নিশ্চিত নয়। যদি বামপন্থিদের সঙ্গে সরকার গঠন করেন ম্যাক্রন, তবুও সংশয় থেকে যাবে। কারণ, বামপন্থিদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নীতির ব্যাপক পার্থক্য আছে। পার্লামেন্টে সরকারবিরোধী কোনো জোট যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

তাতে ম্যাক্রন যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন তার মেয়াদ, সে পর্যন্ত টিকে না-ও থাকতে পারেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন কী করবেন তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। ফ্রান্স ২৪ বলছে, মিত্ররা জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন বলেছেন তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগে চাইছেন পার্লামেন্ট নিজের মতো করে সুসংগঠিত হোক। কোনো দলই পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এবং তিনটি বড় ব্লকের সামনে সুস্পষ্ট আগামী নেই। এ কারণে সামনের বছরগুলোতে ফ্রান্সকে অচলাবস্থা গ্রাস করবে। এক্ষেত্রে ইংরেজিতে ‘গ্রিডলক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ এমন এক পরিস্থিতি যেখানে কোনো একটি শহরের সব সড়ক গাড়িতে আটকে থাকে। কোনো রকম গাড়ির নড়াচড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একে এককথায় অচলাবস্থা বলা যায়।

ম্যাক্রনের নীতির সঙ্গে বাম বা ডানপন্থিদের কারও নীতির মিল খায় না। এ অবস্থায় কী হবে ফ্রান্সের তা নিয়ে নানামাত্রিক বিশ্লেষণ চলছে। ফলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সামনে এক বড় রকম আঘাত এসে হাজির হয়েছে। এর ফলে ইউরো জোনে এই দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়তে পারে। ২৬শে জুলাই প্যারিসে অলিম্পিক গেমস। তার আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে পারে কয়েক সপ্তাহ। এমন অবস্থায় উগ্র বামপন্থি ফ্রান্স আনবোউড পার্টির ডানিয়েলে ওবোনো উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি ফ্রান্স ২৪’কে বলেছেন, নতুন সরকারকে অবশ্যই একটি উচ্চাভিলাষী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট যে কর্মসূচি সামনে তুলে ধরেছে।

কিন্তু ফ্রান্স ম্যাক্রন কি তা মেনে নেবেন! আবার বামপন্থি ফ্রান্স আনবোউড পার্টির প্রধান জ্যাঁ-লুক মেলেঞ্চন রোববার প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের মাথা নত করে পরাজয় গ্রহণ করে নেয়ার আহ্বান জানান। এবং নিউ পপুলার ফ্রন্টকে জোট সরকার গঠনের আহ্বান জানান। কিন্তু একই দিন রাতে তার বক্তব্য ভিন্ন। তিনি ম্যাক্রনের সঙ্গে সরকার গঠনের কথা বলেছেন। এ জন্য রাজনীতির মাঠ এলোমেলো হয়ে আছে। কোন দলকে কে বিশ্বাসে নেবে, তা খুব মুশকিল বলা। একইভাবে রোববারই উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালির প্রেসিডেন্ট জর্ডান বারডেলা ‘অসম্মানজনক জোটে’র নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ফরাসিদেরকে নীতি পুনর্গঠন থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এই দলটির বিজয় থামিয়ে দিতে জোট করা হয়েছে।
ওদিকে এমন সব নাটকীয়তায় এবং অস্থিরতায় ফ্রান্সের শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বিএনপি পরিবাস-এর শেয়ার শতকরা ১.২ ভাগ পতন হয়। অন্যদিকে সোকজেন-এর শেয়ার পড়ে যায় শতকরা ১.৪ ভাগ। অন্যদিকে উগ্র ডানপন্থি মেরি লা পেনের দলের পরাজয়ের ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সূত্র: মানবজমিন।