চীন, রাশিয়া ও ইরান ‘আতঙ্কে’ অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে: রিপোর্ট
- প্রকাশের সময় : ১১:০০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
- / ১০৬ বার পঠিত
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপর্যয়মূলক রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসী ভঙ্গির কারণে পাঁচ বছরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ায় অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সোমবার বলেছে, ২০১৪-১৮ সালের তুলনায় ২০১৯-২৩ সালের ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ইউরোপে অস্ত্র কেনার মাত্রা দ্বিগুণ বেড়েছে। ইউক্রেন বৃহত্তম আঞ্চলিক ও বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি হয়েছে এশিয়ায়, ৩৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে এশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।
এসআইপিআরআই-এর অস্ত্র হস্তান্তর কর্মসূচির একজন সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, এগুলোর পেছনে একটি মূল কারণ হলো চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বেগ। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর কোরিয়া ও চীনে পৌঁছাতে সক্ষম ৪০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের অর্ডার দিয়ে অস্ত্র আমদানি আড়াই গুণ বাড়িয়েছে জাপান। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কাতার, মিসর ও সৌদি আরবও মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে। যা বৈশ্বিক আমদানির প্রায় ৩০ শতাংশ।
ওয়েজম্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এটা শুধু ইরানের ভয় নয়। এটি আসলে যুদ্ধের ভয়। ১০ বছরে সৌদি আরব প্রকৃতপক্ষে সেই অস্ত্রগুলো মূলত ইয়েমেনসহ নিজেদের পরিচালিত অন্যান্য অভিযানগুলোতে ব্যবহার করেছে। একে প্রক্সির মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে দেশটির সরাসরি সংঘর্ষ হিসেবে মনে করা হয়। অবশ্য আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে যুদ্ধ বিমানের অর্ডার দিয়ে অবরোধ আরোপ করার পর কাতার তার অস্ত্র আমদানি চারগুণ বাড়িয়েছে।
গ্রিসের আমেরিকান কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক কনস্টান্টিনোস ফিলিস বলেন, ‘আমরা একটি পরিবর্তনশীল বিশ্বে রয়েছি। এটি প্রবাহমান ও অস্থির। জাতিসংঘেরও একটি ভূমিকা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি তাদের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে পারবে কিনা তা নিয়ে পশ্চিমাপন্থী রাষ্ট্রগুলো নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।’ ফিলিস আরও বলেন, তারা বলছে ‘আমি যদি পুনরায় অস্ত্র না দেই, আমাকে রক্ষা করার মতো কেউ নেই। আগের মতো বহুপাক্ষিক শক্তিশালী ব্যবস্থাও নেই। তাই আমাকে ভবিষ্যতের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’।
শীর্ষ রপ্তানিকারক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
পশ্চিমা মিত্ররাও সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। মিত্ররা ব্যয় বাড়ানোর কারণে শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার পথ প্রশস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। ফলস্বরূপ, বিশ্ব বাজারে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩২ শতাংশ।
আরেকটা কারণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যাদের কাছে রপ্তানিযোগ্য পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান এফ-৩৫ লাইটনিং ২ রয়েছে। আর অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রই এখন তাদের বিমানবাহিনীকে স্টিলথ প্রযুক্তিকে স্থানান্তর করতে শুরু করেছে।
এফ-৩৫, ইউরোফাইটার টাইফুন ও ফ্রান্সের রাফালেসহ ইউরোপে প্রায় পরবর্তী প্রজন্মের আটশত যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে পশ্চিমা প্রধান মিত্রদের কাছে বিক্রি বাড়ার ধরণ দেখে অনুমান করা যায় কারণগুলো রাজনৈতিক। এতে অন্যান্য পশ্চিমা অস্ত্র উৎপাদনকারীদেরও লাভ হয়েছে। রাশিয়াকে পেছনে ফেলে রপ্তানিকারক হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে আসার জন্য রপ্তানি প্রায় অর্ধেক বাড়িয়েছে ফ্রান্স। ইতালিও তাদের রপ্তানি প্রায় দ্বিগুণ করেছে। ফরাসি যুদ্ধবিমানের অর্ডার এসেছে প্রচুর। পাঁচ বছরে ৪.৫ প্রজন্মের ২৩টি রাফালে যুদ্ধবিমানের বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪-তে। বর্তমানে আরও ১৯৩টির অর্ডার রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ডসহ ২০১৯-২৩ সাল পর্যন্ত শুধু ইউরোপ থেকে বিশ্বের ৩১ শতাংশ অস্ত্র রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াও একটি প্রধান রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পোল্যান্ডের সঙ্গে ট্যাংক, কামান, বিমান ও রকেট আর্টিলারির বড় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দেশটি। এর বিপরীতে চীন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বিক্রি করেছে। দেশটির মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ পাকিস্তানে যাচ্ছে এবং বাকি অংশের বেশিরভাগ যাচ্ছে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে। রাশিয়া একসময় অস্ত্র বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটি তার রপ্তানি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ১১ শতাংশে নিয়ে এসেছে।
রাশিয়ান রপ্তানি আংশিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কারণ গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে চীন ক্রমবর্ধমানভাবে তার নিজস্ব অস্ত্র তৈরি করছে। সেইসঙ্গে রাশিয়ার বড় ক্রেতা ভারত রুশ প্রযুক্তি ও সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।
ওয়েজম্যান বলেন, ‘রাশিয়ার সরঞ্জাম থেকে ভারত দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এমন কিছু অর্ডার রয়েছে যা এখনো ডেলিভারি করতে পারেনি মস্কো। উদাহরণস্বরূপ, পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন যা রাশিয়া এই বছর বা পরের দিকে সরবরাহ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ফ্রিগেট ও কয়েকটি বিমান রয়েছে। ২০ বছরে ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মতো দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়েছে ভারত।’ সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।