নিউইয়র্ক ১২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মাটির তৈরি সব বহুতল ভবন টিকে আছে হাজার বছর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৪২ বার পঠিত

মাটির তৈরি আকাশছোঁয়া সব ভবন। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন উঁচু ভবনের নগরী, যেখানে সমস্ত বহুতল ভবন কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি। কোনো কোনো ভবনের উচ্চতা প্রায় ১১ তলার সমান। আকাশচুম্বী এসব ভবনের বয়সও প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর। এত বছর পরেও কীভাবে এসব ভবন এখনো টিকে আছে তা আশ্চর্যের বটে। মাটির তৈরি এসব ভবনই এখন এই শহরের শোভা। ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাদরামাউত উপত্যকার এক বিস্ময়কর শহর শিবাম। এই শহরকে বলা হয় মরুভূমির ম্যানহাটন বা পৃথিবীর প্রথম উঁচু ভবনবিশিষ্ট শহর। ১৯৮২ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শিবামের স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণপ্রক্রিয়া, ইতিহাস ও টিকে থাকার রহস্য এক অনন্য বিস্ময়।

শিবামের ভবনগুলো শুধু সুউচ্চই নয়, এর নকশাও অত্যন্ত কৌশলী। শহরটি একটি পাথুরে উচ্চভূমিতে অবস্থিত, যার চারপাশে রয়েছে বিশাল বন্যার ওয়াদি বা শুকনো নদী ও খাল। যা এই শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করে, আবার কৃষির জন্য পানির উৎসের কাছাকাছিও রাখে। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া এই শহরটিকে আবার পুনঃনির্মাণ করা হয় ১৬শ শতাব্দীতে। ১ হাজার ৭০০ বছর আগে তৈরি এই মাটির দালানগুলো আজও দাঁড়িয়ে আছে, যা মানব সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। আধুনিক প্রযুক্তির আগে কীভাবে মানুষ টিকে থাকার জন্য স্থাপত্যশৈলীকে অভিযোজিত করেছিল, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শিবাম শহর।

শিবামের নকশা শুধু সুন্দরই নয়, এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাও বটে। শিবামের প্রতিটি দালানই একেকটি দুর্গের মতো। শহরটি একটি আয়তাকার গ্রিডে সাজানো এবং একটি প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থা শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করত এবং উচ্চতা থেকে শত্রুদের আগমন সহজেই দেখা যেত। এই শহর মূলত হাদরামাউত উপত্যকার বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল, যেখানে ব্যবসায়ীরা একত্রে বসবাস করতেন।
এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের সংযোগস্থল হওয়ায় শিবাম ঐতিহাসিকভাবে অনেকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ফলে স্থানীয়রা আত্মরক্ষার জন্যই শহরটিকে উঁচু ও সুরক্ষিত এই কাঠামোয় গড়ে তোলে। শিবামের বহুতল দালানের সংখ্যা প্রায় ৫০০টিরও বেশি। সাধারণত ৫-১১ তলা, কিছু ভবনের উচ্চতা ৩০ মিটার পর্যন্ত। ভবনগুলো খেজুর কাঠের ফ্রেম দিয়ে শক্তিশালী করা এবং প্রতি কয়েক বছর পর পর নতুন কাদা দিয়ে সংস্কার করা হয়। প্রথম তলায় পশুর জন্য গোয়ালঘর বা দোকান থাকে, ওপরের তলাগুলো বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানকার বাড়িগুলো কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি করার বিশেষ কিছু কারণও আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে মানিয়ে নেওয়া। শিবাম মরুভূমির শহর, যেখানে বৃষ্টি খুবই কম হয়, কিন্তু যখন হয়, তখন তা হয় প্রবল। তাছাড়া, এখানে প্রচণ্ড গরম ও ধূলিঝড় লেগেই থাকে। কাঁচা মাটির দেয়াল গরমে ঘরকে শীতল রাখে এবং শীতকালে উষ্ণতা ধরে রাখে।

এছাড়া, ভূমিকম্প প্রতিরোধেও মাটির দালান বেশ কার্যকর। শিবামের আশেপাশে পাথরের যোগান কম থাকায় এবং কাঠের অভাব থাকায় স্থানীয়রা সহজলভ্য কাদা, খড় ও খেজুরগাছের কাঠ ব্যবহার করে দালান নির্মাণ করে। এর ফলে খরচ কমে এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সম্ভব হয়। মুসলিম অধ্যুষিত প্রাচীন এই শহরটি আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার মানুষ এই শহরটিতে বসবাস করে । সূত্র : কালবেলা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মাটির তৈরি সব বহুতল ভবন টিকে আছে হাজার বছর

প্রকাশের সময় : ০৩:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাটির তৈরি আকাশছোঁয়া সব ভবন। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন উঁচু ভবনের নগরী, যেখানে সমস্ত বহুতল ভবন কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি। কোনো কোনো ভবনের উচ্চতা প্রায় ১১ তলার সমান। আকাশচুম্বী এসব ভবনের বয়সও প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছর। এত বছর পরেও কীভাবে এসব ভবন এখনো টিকে আছে তা আশ্চর্যের বটে। মাটির তৈরি এসব ভবনই এখন এই শহরের শোভা। ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাদরামাউত উপত্যকার এক বিস্ময়কর শহর শিবাম। এই শহরকে বলা হয় মরুভূমির ম্যানহাটন বা পৃথিবীর প্রথম উঁচু ভবনবিশিষ্ট শহর। ১৯৮২ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শিবামের স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণপ্রক্রিয়া, ইতিহাস ও টিকে থাকার রহস্য এক অনন্য বিস্ময়।

শিবামের ভবনগুলো শুধু সুউচ্চই নয়, এর নকশাও অত্যন্ত কৌশলী। শহরটি একটি পাথুরে উচ্চভূমিতে অবস্থিত, যার চারপাশে রয়েছে বিশাল বন্যার ওয়াদি বা শুকনো নদী ও খাল। যা এই শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করে, আবার কৃষির জন্য পানির উৎসের কাছাকাছিও রাখে। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া এই শহরটিকে আবার পুনঃনির্মাণ করা হয় ১৬শ শতাব্দীতে। ১ হাজার ৭০০ বছর আগে তৈরি এই মাটির দালানগুলো আজও দাঁড়িয়ে আছে, যা মানব সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। আধুনিক প্রযুক্তির আগে কীভাবে মানুষ টিকে থাকার জন্য স্থাপত্যশৈলীকে অভিযোজিত করেছিল, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শিবাম শহর।

শিবামের নকশা শুধু সুন্দরই নয়, এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাও বটে। শিবামের প্রতিটি দালানই একেকটি দুর্গের মতো। শহরটি একটি আয়তাকার গ্রিডে সাজানো এবং একটি প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থা শত্রুদের আক্রমণ থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করত এবং উচ্চতা থেকে শত্রুদের আগমন সহজেই দেখা যেত। এই শহর মূলত হাদরামাউত উপত্যকার বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল, যেখানে ব্যবসায়ীরা একত্রে বসবাস করতেন।
এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের সংযোগস্থল হওয়ায় শিবাম ঐতিহাসিকভাবে অনেকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ফলে স্থানীয়রা আত্মরক্ষার জন্যই শহরটিকে উঁচু ও সুরক্ষিত এই কাঠামোয় গড়ে তোলে। শিবামের বহুতল দালানের সংখ্যা প্রায় ৫০০টিরও বেশি। সাধারণত ৫-১১ তলা, কিছু ভবনের উচ্চতা ৩০ মিটার পর্যন্ত। ভবনগুলো খেজুর কাঠের ফ্রেম দিয়ে শক্তিশালী করা এবং প্রতি কয়েক বছর পর পর নতুন কাদা দিয়ে সংস্কার করা হয়। প্রথম তলায় পশুর জন্য গোয়ালঘর বা দোকান থাকে, ওপরের তলাগুলো বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানকার বাড়িগুলো কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি করার বিশেষ কিছু কারণও আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে মানিয়ে নেওয়া। শিবাম মরুভূমির শহর, যেখানে বৃষ্টি খুবই কম হয়, কিন্তু যখন হয়, তখন তা হয় প্রবল। তাছাড়া, এখানে প্রচণ্ড গরম ও ধূলিঝড় লেগেই থাকে। কাঁচা মাটির দেয়াল গরমে ঘরকে শীতল রাখে এবং শীতকালে উষ্ণতা ধরে রাখে।

এছাড়া, ভূমিকম্প প্রতিরোধেও মাটির দালান বেশ কার্যকর। শিবামের আশেপাশে পাথরের যোগান কম থাকায় এবং কাঠের অভাব থাকায় স্থানীয়রা সহজলভ্য কাদা, খড় ও খেজুরগাছের কাঠ ব্যবহার করে দালান নির্মাণ করে। এর ফলে খরচ কমে এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সম্ভব হয়। মুসলিম অধ্যুষিত প্রাচীন এই শহরটি আজও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার মানুষ এই শহরটিতে বসবাস করে । সূত্র : কালবেলা।