নিউইয়র্ক ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

১৯০ বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে যে দেশে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৩১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৮৫ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক শাসনের অধীনে থাকা কিংবা সরকার পরিবর্তনের পেছনে সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বেশি প্রভাব থাকা দেশের নাম বললে সবার প্রথমে আসবে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের নাম। দেশটির ইতিহাসে বেশিরভাগ সময় জুড়ে আছে সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের থেকেও বেশি সেনাবাহিনীর প্রভাব আছে এমন দেশও বিদ্যমান। অবাক করার মতো তথ্য হলো পৃথিবীতে এমন এক দেশ রয়েছে যে দেশে ১৯০ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এবং প্রতিবারই সরকার পরিবর্তন ঘটেছে।

সেনা অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বেশি নজির রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটিতে প্রায় ২০০ বার (১৯০ বার) সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের এক প্রান্তে অবস্থিত বলিভিয়া ১৮২৫ সাল পর্যন্ত স্পেনের অধীনে ছিল। ওই বছরের আগস্ট মাসে স্বাধীন হয় দেশটি।

স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বলিভিয়ার রাজনীতিতে বহু পালাবদল ঘটেছে। ১৯০ বার সেনা অভ্যুত্থান ঘটা দেশটিতে ২০১৯ সালে শেষবার সামরিক ক্যু দেখা গেছে। যদিও ২০১৯ সালের সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে বলিভিয়া সরকার নিজে থেকেই হার স্বীকার করে নেয় এবং প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে দেশটিতে সেনাশাসন জারি রয়েছে।

একটি দেশে যখন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে তখন বেশিরভাগ সময় তা হয়ে উঠে রক্তক্ষয়ী। নির্বাচিত সরকারকে অস্ত্রের জোরে পরাজিত করে ক্ষমতায় বসেন সেনাপ্রধান। সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষে দেশের জনগণ যদি সরকারের পক্ষ নেয়, তবে তারাও আক্রান্ত হয়। ক্ষমতা দখল করে দেশে সেনাশাসন জারি করেন সেনাবাহিনীর প্রধান। বিশ্বব্যাংকের মতে, যে দেশের মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) খুব কম থাকে সেই দেশেই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেশে দারিদ্র বেড়ে গেলে, ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এইচডিআই কমে আসে।

বলিভিয়ায় নড়বড়ে সরকার এবং বার বার সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কিন্তু দারিদ্র নয়। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে কফি উৎপন্ন হয়। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে তৃতীয় বলিভিয়ায় কফির বীজ নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। কফি উৎপাদনে শীর্ষে কলম্বিয়া এবং পেরু। এই কফির ওপর বাইরের দেশগুলোর নজর বহু দিনের। এর জন্য বাইরে থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে বলিভিয়া। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে টিকে থাকতে পারেননি বটে, তবে দেশটিতে ১৯৯৯ সালের পর কোনো অভ্যুত্থানও ঘটেনি।

সামরিক অভ্যুত্থানে সাধারণত সেনাবাহিনীর জয় নিশ্চিত। তবে এই পরিস্থিতি থেকেও সরকারে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদি অন্য কোনো মিত্র দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আক্রান্ত দেশটির সরকারকে সাহায্য করে, বাইরে থেকে যদি সামরিক সাহায্য আসে, সে ক্ষেত্রে সেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক নজির ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান থেকে শুরু করে মিয়ানমার, অনেক দেশেই এই ধরনের সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে বার বার। সম্প্রতি, সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানে ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল । অপরদিকে ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৯ বছর সেনা শাসনের অধীনে ছিল মায়ানমার। ২০২১ সাল থেকে ফের দেশটি সামরিক বাহিনীর শাসনাধীন। এছাড়া, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায়ই সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

১৯০ বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে যে দেশে

প্রকাশের সময় : ০৩:৩১:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক শাসনের অধীনে থাকা কিংবা সরকার পরিবর্তনের পেছনে সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বেশি প্রভাব থাকা দেশের নাম বললে সবার প্রথমে আসবে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের নাম। দেশটির ইতিহাসে বেশিরভাগ সময় জুড়ে আছে সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের থেকেও বেশি সেনাবাহিনীর প্রভাব আছে এমন দেশও বিদ্যমান। অবাক করার মতো তথ্য হলো পৃথিবীতে এমন এক দেশ রয়েছে যে দেশে ১৯০ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে এবং প্রতিবারই সরকার পরিবর্তন ঘটেছে।

সেনা অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বেশি নজির রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটিতে প্রায় ২০০ বার (১৯০ বার) সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমের এক প্রান্তে অবস্থিত বলিভিয়া ১৮২৫ সাল পর্যন্ত স্পেনের অধীনে ছিল। ওই বছরের আগস্ট মাসে স্বাধীন হয় দেশটি।

স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বলিভিয়ার রাজনীতিতে বহু পালাবদল ঘটেছে। ১৯০ বার সেনা অভ্যুত্থান ঘটা দেশটিতে ২০১৯ সালে শেষবার সামরিক ক্যু দেখা গেছে। যদিও ২০১৯ সালের সেনা অভ্যুত্থান রক্তক্ষয়ী ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে বলিভিয়া সরকার নিজে থেকেই হার স্বীকার করে নেয় এবং প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে দেশটিতে সেনাশাসন জারি রয়েছে।

একটি দেশে যখন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে তখন বেশিরভাগ সময় তা হয়ে উঠে রক্তক্ষয়ী। নির্বাচিত সরকারকে অস্ত্রের জোরে পরাজিত করে ক্ষমতায় বসেন সেনাপ্রধান। সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষে দেশের জনগণ যদি সরকারের পক্ষ নেয়, তবে তারাও আক্রান্ত হয়। ক্ষমতা দখল করে দেশে সেনাশাসন জারি করেন সেনাবাহিনীর প্রধান। বিশ্বব্যাংকের মতে, যে দেশের মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) খুব কম থাকে সেই দেশেই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেশে দারিদ্র বেড়ে গেলে, ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এইচডিআই কমে আসে।

বলিভিয়ায় নড়বড়ে সরকার এবং বার বার সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ কিন্তু দারিদ্র নয়। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে কফি উৎপন্ন হয়। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে তৃতীয় বলিভিয়ায় কফির বীজ নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। কফি উৎপাদনে শীর্ষে কলম্বিয়া এবং পেরু। এই কফির ওপর বাইরের দেশগুলোর নজর বহু দিনের। এর জন্য বাইরে থেকে বলিভিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়েও নড়বড়ে বলিভিয়া। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে টিকে থাকতে পারেননি বটে, তবে দেশটিতে ১৯৯৯ সালের পর কোনো অভ্যুত্থানও ঘটেনি।

সামরিক অভ্যুত্থানে সাধারণত সেনাবাহিনীর জয় নিশ্চিত। তবে এই পরিস্থিতি থেকেও সরকারে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। যদি অন্য কোনো মিত্র দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আক্রান্ত দেশটির সরকারকে সাহায্য করে, বাইরে থেকে যদি সামরিক সাহায্য আসে, সে ক্ষেত্রে সেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক নজির ছড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান থেকে শুরু করে মিয়ানমার, অনেক দেশেই এই ধরনের সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে বার বার। সম্প্রতি, সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানে ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল । অপরদিকে ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৯ বছর সেনা শাসনের অধীনে ছিল মায়ানমার। ২০২১ সাল থেকে ফের দেশটি সামরিক বাহিনীর শাসনাধীন। এছাড়া, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায়ই সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সুমি/হককথা