নিউইয়র্ক ০৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘হিন্দু’ শব্দ আরবি, এটি কেন তারা ছুড়ে ফেলছে না : ইরফান হাবিব

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
  • / ২২ বার পঠিত

ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। ছবি : আল জাজিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদানের তথ্যসূত্রও মুছে ফেলেছে। সরকার পরিচালিত শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা পাঠ্যবই সংশোধন করেছে, এতে প্রাচীন ভারতকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অনেক সময় ঐতিহাসিক তথ্যের সমর্থন ছাড়াই তা করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদরা বলছেন, স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সংশোধন বিজেপির ইসলামবিদ্বেষী উদ্যোগের একটি অংশ। যার মাধ্যমে ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের অবস্থান অস্বীকার করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে মুঘলদের ইতিহাস লিখে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, বিজেপির ইতিহাস পুনর্লিখনের উদ্যোগ সম্পর্কে এবং ২০ কোটি মুসলিমের বসবাস থাকা দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে জ্ঞানের বিস্তারে এর প্রভাব কেমন হবে।

বিজেপি সরকারের মুঘল ও মুসলিম শাসকদের ইতিহাস পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইরফান হাবিব বলেছেন, বিষয়টি শুধু মুঘল শাসকদের বাদ দেওয়া নয়। তারা আসলে চেষ্টা করছে ভারতের ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িক করে তুলতে, মুসলিমদের বাদ দিয়ে অথবা কলঙ্কিত করে। কিন্তু এটি বিজেপির উদ্যোগের একটি অংশ মাত্র, উদ্যোগের অপর অংশ শুধু বাদ দেওয়া নয়, পৌরাণিক আখ্যান তৈরি করা।

ভারতের পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেছেন, ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের সিলেবাসের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতে ইতিহাস থেকে জাতপ্রথা বাদ দেওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, মধ্যযুগে মুসলিমরা জাতপ্রথা চালু করেছে। প্রতিটি গুণের জন্য প্রাচীন ভারতের সভ্যতাকে কৃতিত্ব দেওয়া হবে। ইউজিসির সুপারিশকৃত বিএ (ব্যাচেলর অব আর্টস)-এর খসড়া সিলেবাসে বলা হচ্ছে, আর্যদের আদি নিবাস ভারত। বলা হয়েছে, ভারত থেকেই আর্যরা বিশ্বকে সভ্য করতে যাত্রা শুরু করে।

তিনি বলেছেন, ইতিহাসবিদদের কাজ হলো ফ্যাক্ট প্রতিষ্ঠা করা, তারা ফ্যাক্ট তৈরি করতে পারেন না। চাইলেই আর্য গোত্র গঠন করা যায় না। এটি সংস্কৃতের প্রতি অপমান। কারণ, প্রাচীন সংস্কৃত রচনায় আর্য হলো ইরানে। ইরান হলো আর্য-এর বহুবাচক। প্রকৃত অর্থে ইরান শব্দের অর্থ হলো আর্যদের ভূমি। এখন হিটলারের মতো আর্যদের একটি গোত্র তৈরি করা হচ্ছে। প্রাচীন ইরানি ও ঋগ্বেদ সংস্কৃতি আর খুব কাছাকাছি ভাষা। আর্য অর্থ হলো খুব শ্রদ্ধাশীল ও মহৎ ব্যক্তি। এর অর্থ গোত্র নয়। এখানে দেখা যায়, এটি শুধু মুসলিমবিরোধী নয়, এটি যুক্তিবিরোধীও।

ভারতের জ্ঞান ব্যবস্থা এবং কীভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা এটি নতুন করে গড়ে তুলছে তা সম্পর্কে এই ইতিহাসবিদ বলেছেন, ঐতিহাসিক সূত্রকে আমি স্বীকৃতি দেই। হতে পারে হিন্দু সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা, মুসলিম সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা, এমনকি মার্কসবাদী ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। যখন বিজেপির মতাদর্শিক সংস্থা উগ্র হিন্দুবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে, যাতে দাবি করা হয় মান সিং তাজমহল নির্মাণ করেছেন, ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদার তাদের লিখেছেন, ‘আমি এখন আপনাদের সাময়িকী পড়বো না এবং আপনারা আমার লেখা প্রকাশের অধিকার পাবেন না।’ ইতিহাসের হিন্দু সাম্প্রদায়িক ঘরানা থেকে এসেছেন মজুমদার। কিন্তু তিনি একজন পেশাদার এবং কোনও অপ্রমাণিত ফ্যাক্ট গ্রহণ করেনি, হোক তা প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় ভারতের।

উগ্র হিন্দুরা সব সময় মুঘলকে বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এখন তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও ১৮ শতকের শাসক টিপু সুলতানকে আক্রমণ করছে এবং বিচ্ছিন্ন করে দেখছে। এই বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেন, আজাদকে বাদ দেওয়া মুসলিমবিরোধী। তারা দেখাতে চায় না ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও মুসলিম জড়িত ছিলেন। টিপু সুলতানের ক্ষেত্রে তা জাতীয় ইস্যুর একেবারে বিপরীত। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু (ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) ও অন্যরা সব সময় টিপুকে নিয়ে ভালো কথা বলেছেন। টিপুর হাতে মালাবার বিদ্রোহ দমনকে ন্যায্যতা দেওয়া যায় না। কিন্তু ওই সময়ের সব শাসকের ক্ষেত্রে এমনটি বলা যায়। কিন্তু মাইশোরের অর্থনীতিকে তিনি আধুনিক করেছেন এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে তার লড়াইকে খারিজ করে দেওয়া যায় না। ইন্ডিয়ান হিস্টরি কংগ্রেস কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত টিপুকে তিন খণ্ডের কথা বলতে পারি। ফলে ভারতীয় ইতিহাসবিদরা বিজেপির সঙ্গে একমত নন।

শহর ও সড়কের মুসলিম নাম মুছে ফেলা হচ্ছে। মুসলিম এবং তাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য নিয়ে মানুষের স্মৃতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তারা চাইছে জনগণের স্মৃতি মুছে দিতে। আওরঙ্গবাদের আদি নাম ছিল খিরকি এবং এটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক আফ্রিকান মুসলিম মালিক আম্বার। ফলে মালিক আম্বার একজন বহিরাগত, কারণ তিনি আফ্রিকান এবং একজন মুসলিম। ফলে তার নামে নামকরণ হতে পারে না। এটিকে আম্বারনগর বলা যাবে না, যদিও ইতিহাসে আগ্রহী হলে এটিই বলা উচিত অথবা এটিকে খিরকি বলা যায়। কিন্তু সাম্বাজিনগর (আওরঙ্গবাদের নতুন নাম) কোনও অর্থ বহন করে না। কারণ, সাম্বাজি কখনও আওরঙ্গবাদ যাননি।

আরোও পড়ুন। ৮ দিনের রিমান্ডে ইমরান খান, সহিংসতায় নিহত ৪

তিনি আরও বলেছেন, তাজমহল থেকে ডলার আয় হয়। কিন্তু তারা নীরবে একটি জনপ্রিয় ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে তাজমহল মূলত একটি শিব মন্দির। ব্রিটিশরা তাজকে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় একটি কন্ডাক্টর স্থাপন করেছিল। এখন বিজেপি ও তাদের সমর্থকরা এই কন্ডাক্টরকে একটি ত্রিশুল (হিন্দু প্রতীক) হিসেবে দাবি করছে। এমন জনপ্রিয় ভুল ধারণা তারা তৈরি করছে। বিজেপি কেন ইতিহাসের পুনর্লিখন করতে চাইছে? এই উদ্যোগের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে: মুঘলদের কলুষিত এবং হিন্দুদের অতীত গৌরবকে মহিমান্বিত করা। এমন প্রশ্নের জবাবে ইরফান হাবিব বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো মুঘলসহ মুসলিমদের কলুষিত করা। তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। হিন্দু আরবি শব্দ। কিন্তু তারা কেন এটিকে আগে ছুড়ে ফেলছে না? ভারতে সেমিটিক ধারণা হিসেবে ধর্মের আগমন। এখন বিজেপি সেটি অনুসারে হিন্দুবাদকে নির্মাণের চেষ্টা করছে। বস্তুত, ১৪-১৫ শতক পর্যন্ত সংস্কৃত সাহিত্যে হিন্দু শব্দের কোনও ব্যবহার ছিল না। এমনকি বিজয়নগরের সম্রাটরা নিজেদের হিন্দু রায় সুরাত্রান হিসেবে পরিচয় দিতেন, হিন্দু রায় এখানে সুলতানের মতো। শব্দের অগ্রগতি কীভাবে হয় তা খুব মজার বিষয়। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, ইসলাম থেকে আসা ধারণা ভারতীয় ধর্মের ইতিহাসে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ইরফান হাবিব এই বিষয়ে আরও বলেন, ভারত গণতন্ত্রের জননী, এমন কল্পকাহিনিও তারা ছড়াচ্ছে। কোনও ইতিহাসবিদ স্বীকার করেন না ভারত গণতন্ত্রের জননী। ঋগ্বেদের রাজাদের কথা বলা হয়েছে, যার অর্থ আসলে আদিবাসী প্রধান। হ্যাঁ, প্রাচীন গ্রিস ও রোমে গণতন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যাবে, কিন্তু ভারতে পাওয়া যাবে না। এটি চীন ও ইরানেও কখনও পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, ওই সময়ের সংস্কৃত নাম হলো মহাজানপাদা, এর অর্থ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নয়। এর অর্থ হলো আদিবাসী। প্রাচীন ভারতে গণতন্ত্র ছিল বলে কোনও ইতিহাসবিদের লেখা আমি পড়িনি। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জাতপ্রথাকে মুছে ফেলার অর্থ হলো ইতিহাসকে একেবারে অস্বীকার করা।

বিজেপির ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে সঠিক করার দাবি এবং পৌরাণিক আখ্যানকে ইতিহাস বলে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেছেন, আসামের অহমিদের উদাহরণ দেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অহমি ভাষণ লক্ষ করলে দেখা যায়, তারা অহমিকে মহান জাতীয়তাবাদী ও মুঘলদের বিদেশি হিসেবে হাজির করছেন। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন অহমি একটি থাই ভাষা। ফলে তাদের পূর্বসূরিরা নিজেদের থাই অহম বলে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু এখন তারা হিন্দু ও মুসলিম। নিশ্চিতভাবে তারা থাই ছিল, কিন্তু হিন্দু ছিল না। ফলে তারা শুধু যে ইতিহাসকে নতুন করে লিখছে তা না, তারা মিথও তৈরি করছে। তারা যদি দাবি করে যে মুঘলদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে তারা ভুলে যাচ্ছে যে ১৬৭৯ সালে গুয়াহাটি মুঘলদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুঘলদের ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে কী হারাবে? তাজমহল থাকবে না, রেডফোর্ট থাকবে না এবং বিশ্বের একটি প্রাচীন পরিসংখ্যান আইন-ই-আকবরি থাকবে না।

একটি স্পষ্ট সংখ্যালঘুবিরোধী পক্ষপাতমূলক অবস্থানসহ জ্ঞান উৎপাদনে রাষ্ট্রের একচেটিয়াকরণের ফলে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজে প্রভাবের বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেন, এটি নিছক পক্ষপাতিত্ব নয়, এটি মিথ্যাচার ও মিথ্যাকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে। আর্য ইস্যুটি নাৎসিদের মতো। আপনি একজন আর্য হলে কী হবে? কীভাবে বড় ও মহান হবেন যদি আপনি আর্য হন? সিন্ধু সভ্যতাকে সংস্কৃত দাবি করা এবং এটিকে সরস্বতী বলা অযৌক্তিক। তাজমহল একটি সম্পদ, কিন্তু ইতিহাস থেকে তা বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

১৯৩০ দশকের নাৎসি জার্মানির মতো প্রোপাগান্ডা ও ইতিহাসের পুনর্লিখন বিজেপি করছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আরএসএস নেতা এমএস গলওয়াকার নাৎসিদের প্রশংসা করেছেন। নিশ্চিতভাবে আরএসএস প্রতিষ্ঠাতারা এটি দ্বারা অনেক অনুপ্রাণিত। ১৯৭০ দশকে গলওয়াকার ইহুদিদের প্রতি হিটলারের আচরণের প্রশংসা করেছিলেন, এখন ইসরায়েল সম্পর্কে তারা যা-ই বলুক না কেন।

মুঘল ও মুসলিম শাসকদের অধীনে গণহারে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করার বিষয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অভিযোগের বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেছেন, এটি বেশ অযৌক্তিক। যখন মোহাম্মদ বিন কাশিমকে সিন্ধুতে পাঠান হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ, তখন তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন হিন্দুদের সঙ্গে খ্রিষ্টান ও পারসিদের মতো আচরণ করার জন্য। এর অর্থ হলো: সহিষ্ণু হতে হবে। মোহাম্মদ বিন কাশিম কোনও মন্দির ধ্বংস করেননি। প্রকৃতপক্ষে মন্দির ধ্বংস করেছে ধর্মবিরোধীরা। ফলে তারা একটি ভুল চিত্র তুলে ধরছে।

তিনি আরও বলেছেন, হাজ্জাজের নীতি কোনও মহান ধর্মীয় চেতনা থেকে নয়, নিরেট বাস্তবিক বোধ থেকে চালিত। কোনও দেশ দখল করলে সব মানুষকে বিরোধী করে তোলা উচিত না। মুলতানি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিয়েছেন মুসলিম শাসকরা এবং মুঘলদের প্রশাসনে অনেক হিন্দু কর্মকর্তা ছিলেন। সাধারণ একজন মুসলিমের নেতা হওয়ার সুযোগ ছিল খুব কম। মুঘলদের প্রথম অর্থমন্ত্রী আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন হিন্দু, প্রখ্যাত ভাইসরয় ছিলেন ডেক্কানের রাজা জয় সিং। অবশ্যই মুঘলরা গণতান্ত্রিক ছিল না, কিন্তু তারা জোর করে মানুষকে ধর্মান্তরিত করেনি।

ইরফান হাবিব বলেন, আওরঙ্গজেবের সময়ে ভারত নিয়ে ইউরোপীয়দের বক্তব্য পড়লে দেখা যায়, তারা বলছে, ওই সময় সব ধর্ম পালনের অনুমতি ছিল। মন্দিরে যাওয়া যেত, মসজিদে যাওয়া যেত, গির্জায় যাওয়া যেত। ইউরোপ বা ইসলামি বিশ্বে এমন সমান্তরাল কিছু ছিল না। পারসিয়ানদের সূত্র হিসেবে ধরলে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। আমি বলবো, এখন যে ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যায় তা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। মন্দির ধ্বংস হয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। একই সময়ে আওরঙ্গজেবের বৈষম্যমূলক নীতিকে কেউ সমর্থন করে না। যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নেই সেখানকার সঙ্গে ভারতের অবস্থান তুলনা করা হবে ভুল। ১৮ শতকের আওরঙ্গজেবের ভারতের সঙ্গে অপর দেশের তুলনা করলে ভারতকে সহিষ্ণু মনে হবে। সূত্র: আল জাজিরা
সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘হিন্দু’ শব্দ আরবি, এটি কেন তারা ছুড়ে ফেলছে না : ইরফান হাবিব

প্রকাশের সময় : ০২:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদানের তথ্যসূত্রও মুছে ফেলেছে। সরকার পরিচালিত শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা পাঠ্যবই সংশোধন করেছে, এতে প্রাচীন ভারতকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অনেক সময় ঐতিহাসিক তথ্যের সমর্থন ছাড়াই তা করা হচ্ছে। ইতিহাসবিদরা বলছেন, স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সংশোধন বিজেপির ইসলামবিদ্বেষী উদ্যোগের একটি অংশ। যার মাধ্যমে ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের অবস্থান অস্বীকার করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে মুঘলদের ইতিহাস লিখে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, বিজেপির ইতিহাস পুনর্লিখনের উদ্যোগ সম্পর্কে এবং ২০ কোটি মুসলিমের বসবাস থাকা দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে জ্ঞানের বিস্তারে এর প্রভাব কেমন হবে।

বিজেপি সরকারের মুঘল ও মুসলিম শাসকদের ইতিহাস পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইরফান হাবিব বলেছেন, বিষয়টি শুধু মুঘল শাসকদের বাদ দেওয়া নয়। তারা আসলে চেষ্টা করছে ভারতের ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িক করে তুলতে, মুসলিমদের বাদ দিয়ে অথবা কলঙ্কিত করে। কিন্তু এটি বিজেপির উদ্যোগের একটি অংশ মাত্র, উদ্যোগের অপর অংশ শুধু বাদ দেওয়া নয়, পৌরাণিক আখ্যান তৈরি করা।

ভারতের পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেছেন, ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের সিলেবাসের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এতে ইতিহাস থেকে জাতপ্রথা বাদ দেওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, মধ্যযুগে মুসলিমরা জাতপ্রথা চালু করেছে। প্রতিটি গুণের জন্য প্রাচীন ভারতের সভ্যতাকে কৃতিত্ব দেওয়া হবে। ইউজিসির সুপারিশকৃত বিএ (ব্যাচেলর অব আর্টস)-এর খসড়া সিলেবাসে বলা হচ্ছে, আর্যদের আদি নিবাস ভারত। বলা হয়েছে, ভারত থেকেই আর্যরা বিশ্বকে সভ্য করতে যাত্রা শুরু করে।

তিনি বলেছেন, ইতিহাসবিদদের কাজ হলো ফ্যাক্ট প্রতিষ্ঠা করা, তারা ফ্যাক্ট তৈরি করতে পারেন না। চাইলেই আর্য গোত্র গঠন করা যায় না। এটি সংস্কৃতের প্রতি অপমান। কারণ, প্রাচীন সংস্কৃত রচনায় আর্য হলো ইরানে। ইরান হলো আর্য-এর বহুবাচক। প্রকৃত অর্থে ইরান শব্দের অর্থ হলো আর্যদের ভূমি। এখন হিটলারের মতো আর্যদের একটি গোত্র তৈরি করা হচ্ছে। প্রাচীন ইরানি ও ঋগ্বেদ সংস্কৃতি আর খুব কাছাকাছি ভাষা। আর্য অর্থ হলো খুব শ্রদ্ধাশীল ও মহৎ ব্যক্তি। এর অর্থ গোত্র নয়। এখানে দেখা যায়, এটি শুধু মুসলিমবিরোধী নয়, এটি যুক্তিবিরোধীও।

ভারতের জ্ঞান ব্যবস্থা এবং কীভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা এটি নতুন করে গড়ে তুলছে তা সম্পর্কে এই ইতিহাসবিদ বলেছেন, ঐতিহাসিক সূত্রকে আমি স্বীকৃতি দেই। হতে পারে হিন্দু সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা, মুসলিম সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা, এমনকি মার্কসবাদী ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। যখন বিজেপির মতাদর্শিক সংস্থা উগ্র হিন্দুবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে, যাতে দাবি করা হয় মান সিং তাজমহল নির্মাণ করেছেন, ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদার তাদের লিখেছেন, ‘আমি এখন আপনাদের সাময়িকী পড়বো না এবং আপনারা আমার লেখা প্রকাশের অধিকার পাবেন না।’ ইতিহাসের হিন্দু সাম্প্রদায়িক ঘরানা থেকে এসেছেন মজুমদার। কিন্তু তিনি একজন পেশাদার এবং কোনও অপ্রমাণিত ফ্যাক্ট গ্রহণ করেনি, হোক তা প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় ভারতের।

উগ্র হিন্দুরা সব সময় মুঘলকে বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এখন তারা স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও ১৮ শতকের শাসক টিপু সুলতানকে আক্রমণ করছে এবং বিচ্ছিন্ন করে দেখছে। এই বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেন, আজাদকে বাদ দেওয়া মুসলিমবিরোধী। তারা দেখাতে চায় না ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও মুসলিম জড়িত ছিলেন। টিপু সুলতানের ক্ষেত্রে তা জাতীয় ইস্যুর একেবারে বিপরীত। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু (ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) ও অন্যরা সব সময় টিপুকে নিয়ে ভালো কথা বলেছেন। টিপুর হাতে মালাবার বিদ্রোহ দমনকে ন্যায্যতা দেওয়া যায় না। কিন্তু ওই সময়ের সব শাসকের ক্ষেত্রে এমনটি বলা যায়। কিন্তু মাইশোরের অর্থনীতিকে তিনি আধুনিক করেছেন এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে তার লড়াইকে খারিজ করে দেওয়া যায় না। ইন্ডিয়ান হিস্টরি কংগ্রেস কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত টিপুকে তিন খণ্ডের কথা বলতে পারি। ফলে ভারতীয় ইতিহাসবিদরা বিজেপির সঙ্গে একমত নন।

শহর ও সড়কের মুসলিম নাম মুছে ফেলা হচ্ছে। মুসলিম এবং তাদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য নিয়ে মানুষের স্মৃতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তারা চাইছে জনগণের স্মৃতি মুছে দিতে। আওরঙ্গবাদের আদি নাম ছিল খিরকি এবং এটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক আফ্রিকান মুসলিম মালিক আম্বার। ফলে মালিক আম্বার একজন বহিরাগত, কারণ তিনি আফ্রিকান এবং একজন মুসলিম। ফলে তার নামে নামকরণ হতে পারে না। এটিকে আম্বারনগর বলা যাবে না, যদিও ইতিহাসে আগ্রহী হলে এটিই বলা উচিত অথবা এটিকে খিরকি বলা যায়। কিন্তু সাম্বাজিনগর (আওরঙ্গবাদের নতুন নাম) কোনও অর্থ বহন করে না। কারণ, সাম্বাজি কখনও আওরঙ্গবাদ যাননি।

আরোও পড়ুন। ৮ দিনের রিমান্ডে ইমরান খান, সহিংসতায় নিহত ৪

তিনি আরও বলেছেন, তাজমহল থেকে ডলার আয় হয়। কিন্তু তারা নীরবে একটি জনপ্রিয় ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে তাজমহল মূলত একটি শিব মন্দির। ব্রিটিশরা তাজকে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় একটি কন্ডাক্টর স্থাপন করেছিল। এখন বিজেপি ও তাদের সমর্থকরা এই কন্ডাক্টরকে একটি ত্রিশুল (হিন্দু প্রতীক) হিসেবে দাবি করছে। এমন জনপ্রিয় ভুল ধারণা তারা তৈরি করছে। বিজেপি কেন ইতিহাসের পুনর্লিখন করতে চাইছে? এই উদ্যোগের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে: মুঘলদের কলুষিত এবং হিন্দুদের অতীত গৌরবকে মহিমান্বিত করা। এমন প্রশ্নের জবাবে ইরফান হাবিব বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো মুঘলসহ মুসলিমদের কলুষিত করা। তাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। হিন্দু আরবি শব্দ। কিন্তু তারা কেন এটিকে আগে ছুড়ে ফেলছে না? ভারতে সেমিটিক ধারণা হিসেবে ধর্মের আগমন। এখন বিজেপি সেটি অনুসারে হিন্দুবাদকে নির্মাণের চেষ্টা করছে। বস্তুত, ১৪-১৫ শতক পর্যন্ত সংস্কৃত সাহিত্যে হিন্দু শব্দের কোনও ব্যবহার ছিল না। এমনকি বিজয়নগরের সম্রাটরা নিজেদের হিন্দু রায় সুরাত্রান হিসেবে পরিচয় দিতেন, হিন্দু রায় এখানে সুলতানের মতো। শব্দের অগ্রগতি কীভাবে হয় তা খুব মজার বিষয়। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, ইসলাম থেকে আসা ধারণা ভারতীয় ধর্মের ইতিহাসে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ইরফান হাবিব এই বিষয়ে আরও বলেন, ভারত গণতন্ত্রের জননী, এমন কল্পকাহিনিও তারা ছড়াচ্ছে। কোনও ইতিহাসবিদ স্বীকার করেন না ভারত গণতন্ত্রের জননী। ঋগ্বেদের রাজাদের কথা বলা হয়েছে, যার অর্থ আসলে আদিবাসী প্রধান। হ্যাঁ, প্রাচীন গ্রিস ও রোমে গণতন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যাবে, কিন্তু ভারতে পাওয়া যাবে না। এটি চীন ও ইরানেও কখনও পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, ওই সময়ের সংস্কৃত নাম হলো মহাজানপাদা, এর অর্থ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নয়। এর অর্থ হলো আদিবাসী। প্রাচীন ভারতে গণতন্ত্র ছিল বলে কোনও ইতিহাসবিদের লেখা আমি পড়িনি। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জাতপ্রথাকে মুছে ফেলার অর্থ হলো ইতিহাসকে একেবারে অস্বীকার করা।

বিজেপির ঐতিহাসিক ভুলগুলোকে সঠিক করার দাবি এবং পৌরাণিক আখ্যানকে ইতিহাস বলে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেছেন, আসামের অহমিদের উদাহরণ দেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অহমি ভাষণ লক্ষ করলে দেখা যায়, তারা অহমিকে মহান জাতীয়তাবাদী ও মুঘলদের বিদেশি হিসেবে হাজির করছেন। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন অহমি একটি থাই ভাষা। ফলে তাদের পূর্বসূরিরা নিজেদের থাই অহম বলে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু এখন তারা হিন্দু ও মুসলিম। নিশ্চিতভাবে তারা থাই ছিল, কিন্তু হিন্দু ছিল না। ফলে তারা শুধু যে ইতিহাসকে নতুন করে লিখছে তা না, তারা মিথও তৈরি করছে। তারা যদি দাবি করে যে মুঘলদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে তারা ভুলে যাচ্ছে যে ১৬৭৯ সালে গুয়াহাটি মুঘলদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুঘলদের ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে কী হারাবে? তাজমহল থাকবে না, রেডফোর্ট থাকবে না এবং বিশ্বের একটি প্রাচীন পরিসংখ্যান আইন-ই-আকবরি থাকবে না।

একটি স্পষ্ট সংখ্যালঘুবিরোধী পক্ষপাতমূলক অবস্থানসহ জ্ঞান উৎপাদনে রাষ্ট্রের একচেটিয়াকরণের ফলে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজে প্রভাবের বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেন, এটি নিছক পক্ষপাতিত্ব নয়, এটি মিথ্যাচার ও মিথ্যাকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে। আর্য ইস্যুটি নাৎসিদের মতো। আপনি একজন আর্য হলে কী হবে? কীভাবে বড় ও মহান হবেন যদি আপনি আর্য হন? সিন্ধু সভ্যতাকে সংস্কৃত দাবি করা এবং এটিকে সরস্বতী বলা অযৌক্তিক। তাজমহল একটি সম্পদ, কিন্তু ইতিহাস থেকে তা বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

১৯৩০ দশকের নাৎসি জার্মানির মতো প্রোপাগান্ডা ও ইতিহাসের পুনর্লিখন বিজেপি করছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আরএসএস নেতা এমএস গলওয়াকার নাৎসিদের প্রশংসা করেছেন। নিশ্চিতভাবে আরএসএস প্রতিষ্ঠাতারা এটি দ্বারা অনেক অনুপ্রাণিত। ১৯৭০ দশকে গলওয়াকার ইহুদিদের প্রতি হিটলারের আচরণের প্রশংসা করেছিলেন, এখন ইসরায়েল সম্পর্কে তারা যা-ই বলুক না কেন।

মুঘল ও মুসলিম শাসকদের অধীনে গণহারে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করার বিষয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অভিযোগের বিষয়ে ইরফান হাবিব বলেছেন, এটি বেশ অযৌক্তিক। যখন মোহাম্মদ বিন কাশিমকে সিন্ধুতে পাঠান হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ, তখন তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন হিন্দুদের সঙ্গে খ্রিষ্টান ও পারসিদের মতো আচরণ করার জন্য। এর অর্থ হলো: সহিষ্ণু হতে হবে। মোহাম্মদ বিন কাশিম কোনও মন্দির ধ্বংস করেননি। প্রকৃতপক্ষে মন্দির ধ্বংস করেছে ধর্মবিরোধীরা। ফলে তারা একটি ভুল চিত্র তুলে ধরছে।

তিনি আরও বলেছেন, হাজ্জাজের নীতি কোনও মহান ধর্মীয় চেতনা থেকে নয়, নিরেট বাস্তবিক বোধ থেকে চালিত। কোনও দেশ দখল করলে সব মানুষকে বিরোধী করে তোলা উচিত না। মুলতানি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিয়েছেন মুসলিম শাসকরা এবং মুঘলদের প্রশাসনে অনেক হিন্দু কর্মকর্তা ছিলেন। সাধারণ একজন মুসলিমের নেতা হওয়ার সুযোগ ছিল খুব কম। মুঘলদের প্রথম অর্থমন্ত্রী আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন হিন্দু, প্রখ্যাত ভাইসরয় ছিলেন ডেক্কানের রাজা জয় সিং। অবশ্যই মুঘলরা গণতান্ত্রিক ছিল না, কিন্তু তারা জোর করে মানুষকে ধর্মান্তরিত করেনি।

ইরফান হাবিব বলেন, আওরঙ্গজেবের সময়ে ভারত নিয়ে ইউরোপীয়দের বক্তব্য পড়লে দেখা যায়, তারা বলছে, ওই সময় সব ধর্ম পালনের অনুমতি ছিল। মন্দিরে যাওয়া যেত, মসজিদে যাওয়া যেত, গির্জায় যাওয়া যেত। ইউরোপ বা ইসলামি বিশ্বে এমন সমান্তরাল কিছু ছিল না। পারসিয়ানদের সূত্র হিসেবে ধরলে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। আমি বলবো, এখন যে ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যায় তা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। মন্দির ধ্বংস হয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। একই সময়ে আওরঙ্গজেবের বৈষম্যমূলক নীতিকে কেউ সমর্থন করে না। যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নেই সেখানকার সঙ্গে ভারতের অবস্থান তুলনা করা হবে ভুল। ১৮ শতকের আওরঙ্গজেবের ভারতের সঙ্গে অপর দেশের তুলনা করলে ভারতকে সহিষ্ণু মনে হবে। সূত্র: আল জাজিরা
সুমি/হককথা