হিজাব বিতর্ক: নিষেধাজ্ঞার নিন্দা মালালার, এবার মধ্যপ্রদেশেও?

- প্রকাশের সময় : ০৬:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ৪০ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরার অধিকারের জন্য লড়াই করা ছয় ভারতীয় শিক্ষার্থীর সমর্থনে মুখ খুলেছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে, এবার মধ্যপ্রদেশ ও পুদুচেরিতেও হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ক্যাম্পাসে হিজাব পরা এক ছাত্রীকে ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
মুসকান নামের ছাত্রীটি পাল্টা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছেন।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটি সরকারি কলেজের ওই শিক্ষার্থীদের কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে আসা প্রতিবাদ হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কর্ণাটক হাইকোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে বুধবার। আদালতে একজন শিক্ষার্থীর দায়ের করা পিটিশনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, হিজাব পরা ভারতের সংবিধানে নিশ্চিত করা একটি মৌলিক ধর্মীয় অধিকার।
একটি কলেজে শুরু হওয়া এই বিরোধ রাজ্যের মধ্যে আরও কয়েক জায়গায় ছড়িয়েছে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এর পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া লোকজনের মধ্যে মঙ্গলবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সব স্কুল ও কলেজ তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রাজ্য সরকার।
কয়েকটি শিক্ষায়তনে কিছু শিক্ষার্থী পাল্টা হিসেবে হিন্দুত্ববাদের প্রতীক হিসেবে পরিচিত গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরে ক্যাম্পাসে আসছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মালালা মঙ্গলবার ‘মুসলিম নারীদের প্রান্তে ঠেলে দেওয়া বন্ধ করার জন্য’ কিছু করতে ভারতের নেতাদের আহ্বান জানান।
১৫ বছর বয়সে মালালা মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকারের পক্ষে কথা বলার জন্য পাকিস্তানে তালেবানের আক্রমণের শিকার হন। তালেবান সদস্যরা তাকে গুলি করলে গুরুতর আহত হয়েছিলেন প্রত্যন্ত সোয়াত অঞ্চলের বাসিন্দা মালালা।
২৪ বছর বয়সী এই অধিকার কর্মী টুইট করে বলেছেন, ‘মেয়েদের হিজাব পরে ক্লাসে যেতে দিতে অস্বীকার করা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। … নারীদের বস্তু হিসাবে দেখা অব্যাহত রয়েছে। পোশাক কম বা বেশি পরা উভয়ের জন্য। ’
কলেজে মুসকান, তাকে দেখে ছাত্ররা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে। সেও পাল্টা ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেয়
এর পর মধ্যপ্রদেশ ও পুদুচেরি?
এদিকে কর্নাটকের সীমানা অতিক্রম করে হিজাব বিতর্ক ঢুকে পড়েছে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশে। স্কুল, কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করতে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার অভিন্ন পোশাক বিধি এবং শৃঙ্খলার দোহাই দিয়েছেন।
রাজ্যটিতে এই নিয়ম চালু হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে পারমার বলেন, ‘হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অঙ্গ নয়। তাই স্কুলে এটা পরা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। ঐতিহ্য মানুন বাড়িতে, স্কুলে নয়। এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। কড়া অভিন্ন পোশাক বিধি আনছি আমরা। ‘
হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে পুদুচেরিতেও। বিরোধী দল কংগ্রেস এই প্রসঙ্গে বিজেপি-র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজের প্রশ্ন, ‘মন্ত্রী কি জানাবেন, সরকারের অগ্রাধিকার কী? পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে ভালো শিক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা, না কি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিষ স্কুলে, কলেজে ছড়িয়ে দেওয়া? শিখদের পাগড়ি ও মুসলিম নারীদের হিজাব পরা তো শতকের পর শতক ধরে চলে আসছে। আজ হঠাৎ আপত্তির নেপথ্য উদ্দেশ্য কী?’
এদিকে দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরিহিতদের ক্লাস করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুদুচেরির শিক্ষা দফতর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর এক স্থানীয় নেতা বলেছেন, ‘মেয়েটি গত তিন বছর ধরে রোজ এভাবেই ক্লাসে যোগ দিচ্ছে। এখন হঠাৎ আপত্তি করার কারণ কী?’ তাঁর দাবি, আরও কয়েকটি স্কুল থেকে একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু স্কুলে আরএসএস-এর আদলে পড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ‘ড্রিলে’ অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ওই এসএফআই নেতার দাবি, এই সব কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে ধর্মীয় বিভাজন উসকে দিয়ে শিক্ষায়ও হিন্দুত্ববাদ ছড়াতে চাইছে বিজেপি। সূত্র: বিবিসি, আনন্দবাজার
হককথা/এমউএ