নিউইয়র্ক ০৬:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র আর রকেট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪৯ বার পঠিত

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ইসরায়েল ও হামাসের চলমান সংঘাতে বারবার আসছে লেবাননভিত্তিক বাহিনী ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর নাম। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরায়েলি প্রতিশোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই উত্তর সীমান্তে সংগঠনটির সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা চলছে। কয়েক দিন ধরেই ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর আসছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের পক্ষে হামাসকে মোকাবেলার পাশাপাশি যুদ্ধের আরেক ফ্রন্টে আরো শক্তিশালী হিজবুল্লাহকে সামলানো সহজ হবে না।

এ ছাড়া হিজবুল্লাহ লড়াইয়ে পূর্ণমাত্রায় যোগ দিলে সংঘাত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তসংলগ্ন লেবাননি ভূখণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় চার দশক ধরে শক্ত ঘাঁটি শিয়া মতাবলম্বী সংগঠন হিজবুল্লাহর। ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের বিরোধিতা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে সুন্নিপন্থী হামাসের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে। হামাস সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধী শিবিরকে সমর্থন করে।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় সক্রিয়ভাবে লড়াই করেছে আসাদ সরকারেরই পক্ষে। দুই সংগঠনের মধ্যে ইসলামী মতাদর্শের ভিন্নতা তো আছেই। কিন্তু ইসরায়েল-বিরোধিতার প্রশ্নে তারা এক হয়ে গেছে। হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে এখনো প্রকাশ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না।

তবে সরব রয়েছেন দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা নাইম কাসেম। সংগঠনের নিজস্ব টিভি চ্যানেল আল মানারে তিনি জানান, ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করলে তাঁরা যুদ্ধে যোগ দেবেন।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে গতকাল পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩০ জনের কাছাকাছি। সীমান্ত এলাকা থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে লেবাননেও সীমান্ত এলাকা থেকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘হিজবুল্লাহ কঠিন খেলায় মেতে উঠেছে। তারা লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হিজবুল্লাহ চলতি যুদ্ধে যোগ দিলে এমন ফল ভোগ করতে হবে, যা ‘অকল্পনীয়’।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহকে নির্মূূল করার লক্ষ্যে লেবাননে আগ্রাসন চালিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু তাদের সে অভিযান সফল তো হয়ইনি, বরং এই দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের শক্তি আরো কয়েক গুণ বাড়িয়েছে বাহিনীটি। লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর তারাই একমাত্র অস্ত্র সমর্পণ করেনি। যুদ্ধে জড়ালে ইসরায়েলের জন্য এই বাহিনী কতটা চ্যালেঞ্জের হবে, তা বোঝা যাবে ইসরায়েলেরই একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ থেকে।

তেল আবিবভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) তথ্য বলছে, হিজবুল্লাহর নিয়মিত যোদ্ধার সংখ্যা ১০ হাজারের ওপরে। তাদের হাতে রকেট রয়েছে দেড় থেকে দুই লাখের মতো। তবে রিজার্ভ সেনার সংখ্যা আমলে নিলে যোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ। আর দেড় থেকে দুই লাখ রকেটসহ মর্টার, গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তাদের। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।

হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে থাকা রকেটগুলো বিভিন্ন পাল্লার। ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার (স্বল্পপাল্লা) দূরের ৪০ হাজার, ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম (মাঝারি পাল্লা) ৮০ হাজার এবং ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার (দূরপাল্লা) দূরে আঘাত করার উপযোগী ৩০ হাজার রকেট রয়েছে এই বাহিনীর।

আইএনএসএস জানায়, ইরানের তৈরি কঠিন জ্বালানির স্বল্পপাল্লার ‘ফাতাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে হিজবুল্লাহর হাতে। এটি ৫০০ কেজির মতো বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। জিপিএস প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় নিখুঁতভাবে আঘাত করতে পারে। চীনের তৈরি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ‘সি৮০২’ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লাহর। আরো আছে রাশিয়ার তৈরি ট্যাংকবিধ্বংসী ‘ইয়াখন্ত’ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার সর্বাধুনিক সংস্করণ, যা বিমান, হেলিকপ্টার ও মানুষবিহীন ড্রোন ধ্বংস করার পাশাপাশি গোলা ছুড়তে পারে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেবানন সীমান্ত বরাবর সমরসজ্জা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন বেশ কয়েক দিন আগেই। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেছে, হামাসের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী হিজবুল্লাহ। সূত্র : আলজাজিরা, আল-আরাবিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে বিপুল ক্ষেপণাস্ত্র আর রকেট

প্রকাশের সময় : ০৫:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ইসরায়েল ও হামাসের চলমান সংঘাতে বারবার আসছে লেবাননভিত্তিক বাহিনী ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর নাম। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে ইসরায়েলি প্রতিশোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই উত্তর সীমান্তে সংগঠনটির সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা চলছে। কয়েক দিন ধরেই ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর আসছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের পক্ষে হামাসকে মোকাবেলার পাশাপাশি যুদ্ধের আরেক ফ্রন্টে আরো শক্তিশালী হিজবুল্লাহকে সামলানো সহজ হবে না।

এ ছাড়া হিজবুল্লাহ লড়াইয়ে পূর্ণমাত্রায় যোগ দিলে সংঘাত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তসংলগ্ন লেবাননি ভূখণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় চার দশক ধরে শক্ত ঘাঁটি শিয়া মতাবলম্বী সংগঠন হিজবুল্লাহর। ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের বিরোধিতা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে সুন্নিপন্থী হামাসের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে। হামাস সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরোধী শিবিরকে সমর্থন করে।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় সক্রিয়ভাবে লড়াই করেছে আসাদ সরকারেরই পক্ষে। দুই সংগঠনের মধ্যে ইসলামী মতাদর্শের ভিন্নতা তো আছেই। কিন্তু ইসরায়েল-বিরোধিতার প্রশ্নে তারা এক হয়ে গেছে। হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে এখনো প্রকাশ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না।

তবে সরব রয়েছেন দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা নাইম কাসেম। সংগঠনের নিজস্ব টিভি চ্যানেল আল মানারে তিনি জানান, ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করলে তাঁরা যুদ্ধে যোগ দেবেন।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে গতকাল পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৩০ জনের কাছাকাছি। সীমান্ত এলাকা থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে লেবাননেও সীমান্ত এলাকা থেকে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘হিজবুল্লাহ কঠিন খেলায় মেতে উঠেছে। তারা লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হিজবুল্লাহ চলতি যুদ্ধে যোগ দিলে এমন ফল ভোগ করতে হবে, যা ‘অকল্পনীয়’।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহকে নির্মূূল করার লক্ষ্যে লেবাননে আগ্রাসন চালিয়েছিল ইসরায়েল। কিন্তু তাদের সে অভিযান সফল তো হয়ইনি, বরং এই দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের শক্তি আরো কয়েক গুণ বাড়িয়েছে বাহিনীটি। লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর তারাই একমাত্র অস্ত্র সমর্পণ করেনি। যুদ্ধে জড়ালে ইসরায়েলের জন্য এই বাহিনী কতটা চ্যালেঞ্জের হবে, তা বোঝা যাবে ইসরায়েলেরই একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ থেকে।

তেল আবিবভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) তথ্য বলছে, হিজবুল্লাহর নিয়মিত যোদ্ধার সংখ্যা ১০ হাজারের ওপরে। তাদের হাতে রকেট রয়েছে দেড় থেকে দুই লাখের মতো। তবে রিজার্ভ সেনার সংখ্যা আমলে নিলে যোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ। আর দেড় থেকে দুই লাখ রকেটসহ মর্টার, গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তাদের। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কয়েক শ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।

হিজবুল্লাহর ভাণ্ডারে থাকা রকেটগুলো বিভিন্ন পাল্লার। ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার (স্বল্পপাল্লা) দূরের ৪০ হাজার, ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম (মাঝারি পাল্লা) ৮০ হাজার এবং ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার (দূরপাল্লা) দূরে আঘাত করার উপযোগী ৩০ হাজার রকেট রয়েছে এই বাহিনীর।

আইএনএসএস জানায়, ইরানের তৈরি কঠিন জ্বালানির স্বল্পপাল্লার ‘ফাতাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে হিজবুল্লাহর হাতে। এটি ৫০০ কেজির মতো বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। জিপিএস প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় নিখুঁতভাবে আঘাত করতে পারে। চীনের তৈরি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ‘সি৮০২’ ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লাহর। আরো আছে রাশিয়ার তৈরি ট্যাংকবিধ্বংসী ‘ইয়াখন্ত’ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার সর্বাধুনিক সংস্করণ, যা বিমান, হেলিকপ্টার ও মানুষবিহীন ড্রোন ধ্বংস করার পাশাপাশি গোলা ছুড়তে পারে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেবানন সীমান্ত বরাবর সমরসজ্জা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন বেশ কয়েক দিন আগেই। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেছে, হামাসের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী হিজবুল্লাহ। সূত্র : আলজাজিরা, আল-আরাবিয়া