নিউইয়র্ক ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হামাসের অভিযানের নেপথ্যে ‘স্মার্ট পরিকল্পনা’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩
  • / ১১০ বার পঠিত

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ‘আল-আকসার তুফান’ নামক নজিরবিহীন অভিযানে হতবাক হয়ে গেছে তেলআবিব সরকার। হামাসের সামরিক শাখা কাস্সাম ব্রিগেড গত শনিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক রকেট ও স্থল হামলা চালায়।

কাস্সাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ আল-জাইফ, যিনি খুব কমই মিডিয়ার সামনে আসেন, তিনি এ আক্রমণকে ‘আল-আকসার তুফান’ নামে অভিহিত করে বলেছেন, আল-আকসা মসজিদে উগ্র ইহুদিদের ক্রমাগত আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এ অভিযান চালানো হয়েছে। উগ্র ইহুদিদের আল-আকসা মসজিদ অবমাননার বিরুদ্ধে এটিই ছিল ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া। ফিলিস্তিনিদের এ অভিযানে ইসরাইল কার্যত হতভম্ব হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা এমন এক সময় ‘আল-আকসা তুফান’ নামের এ অভিযান চালিয়েছে, যখন তাদের অভিযান চালানোর ইচ্ছার কোনো আলামতই পাওয়া যায়নি। আচমকা আক্রমণে ইসরাইল এমন ভয়াবহ রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। গত ৭৫ বছরের দখলদারত্বের ইতিহাসে এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের কাছে ইসরাইলিদের জন্য বড় ধরনের সামরিক পরাজয়। ফিলিস্তিনিদের নজিরবিহীন এ অভিযানে নিহত ইসরাইলির সংখ্যা প্রাথমিক হিসাবে ৩০০। ওই অভিযানে আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৫৯০ ইহুদিবাদী।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এত বড় এ ঘটনায় ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ফিলিস্তিনিরা আকাশ ও স্থলপথে এ অভিযান চালিয়েছে। একইসঙ্গে তারা বিভিন্ন টানেলও ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিরা মেরকাভা ট্যাঙ্কসহ প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম হাতিয়ে নিয়েছে, যেসব অস্ত্রের কারণে ইসরাইল গর্ব করত। ফিলিস্তিনিরা অন্তত ৫০ জন ইসরাইলিকে আটক করেছে। এর মধ্যে এক জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন ইসরাইলি সেনাও রয়েছে। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ইসরাইলের ব্যয়বহুল আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এ সময় অচল ছিল এবং ফিলিস্তিনের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সহজে আকাশসীমা অতিক্রম করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

আটক ইসরাইলি ট্যাঙ্ক

তবে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ইসরাইলের ভেতরে বিশাল এলাকায় বিপুলসংখ্যক হামাস সদস্য ঢুকে তারা কিছু সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা কয়েক ডজন ইসরাইলি সৈন্যকে বন্দি করা ছাড়াও সাঁজোয়া যান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দখল করে এবং সেগুলোকে গাজায় ফিরিয়ে এনে এলাকার রাস্তায় প্রদর্শন করে।

‘আল-আকসার তুফান’ অভিযানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা এখানে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে ‘স্মার্ট পরিকল্পনা’ ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ এমন সময় এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়, যখন ইহুদিরা ঐতিহ্যবাহী ‘সুকোত’ উৎসব পালনে ব্যস্ত এবং ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অভিযান পরিচালনায় ভূমি ও আকাশপথ দুটিই ব্যবহার করা হয়েছে। হামাস বাহিনী কয়েক ডজন ইসরাইলি সৈন্যকে বন্দি করার পর জানিয়েছে, তেলআবিব যদি তাদের মুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দিতে হবে।

এমন সময় ফিলিস্তিনিরা এ সফল অভিযান চালিয়েছে, যখন ইসরাইল ও সৌদি আরব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকার ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে। তবে কোনোকিছুই ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

ইরানের পার্স টুডে থেকে

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হামাসের অভিযানের নেপথ্যে ‘স্মার্ট পরিকল্পনা’

প্রকাশের সময় : ০৬:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ‘আল-আকসার তুফান’ নামক নজিরবিহীন অভিযানে হতবাক হয়ে গেছে তেলআবিব সরকার। হামাসের সামরিক শাখা কাস্সাম ব্রিগেড গত শনিবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক রকেট ও স্থল হামলা চালায়।

কাস্সাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ আল-জাইফ, যিনি খুব কমই মিডিয়ার সামনে আসেন, তিনি এ আক্রমণকে ‘আল-আকসার তুফান’ নামে অভিহিত করে বলেছেন, আল-আকসা মসজিদে উগ্র ইহুদিদের ক্রমাগত আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এ অভিযান চালানো হয়েছে। উগ্র ইহুদিদের আল-আকসা মসজিদ অবমাননার বিরুদ্ধে এটিই ছিল ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া। ফিলিস্তিনিদের এ অভিযানে ইসরাইল কার্যত হতভম্ব হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা এমন এক সময় ‘আল-আকসা তুফান’ নামের এ অভিযান চালিয়েছে, যখন তাদের অভিযান চালানোর ইচ্ছার কোনো আলামতই পাওয়া যায়নি। আচমকা আক্রমণে ইসরাইল এমন ভয়াবহ রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। গত ৭৫ বছরের দখলদারত্বের ইতিহাসে এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের কাছে ইসরাইলিদের জন্য বড় ধরনের সামরিক পরাজয়। ফিলিস্তিনিদের নজিরবিহীন এ অভিযানে নিহত ইসরাইলির সংখ্যা প্রাথমিক হিসাবে ৩০০। ওই অভিযানে আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৫৯০ ইহুদিবাদী।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এত বড় এ ঘটনায় ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ফিলিস্তিনিরা আকাশ ও স্থলপথে এ অভিযান চালিয়েছে। একইসঙ্গে তারা বিভিন্ন টানেলও ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিরা মেরকাভা ট্যাঙ্কসহ প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম হাতিয়ে নিয়েছে, যেসব অস্ত্রের কারণে ইসরাইল গর্ব করত। ফিলিস্তিনিরা অন্তত ৫০ জন ইসরাইলিকে আটক করেছে। এর মধ্যে এক জেনারেলসহ বেশ কয়েকজন ইসরাইলি সেনাও রয়েছে। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ইসরাইলের ব্যয়বহুল আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এ সময় অচল ছিল এবং ফিলিস্তিনের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সহজে আকাশসীমা অতিক্রম করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।

আটক ইসরাইলি ট্যাঙ্ক

তবে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ইসরাইলের ভেতরে বিশাল এলাকায় বিপুলসংখ্যক হামাস সদস্য ঢুকে তারা কিছু সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা কয়েক ডজন ইসরাইলি সৈন্যকে বন্দি করা ছাড়াও সাঁজোয়া যান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দখল করে এবং সেগুলোকে গাজায় ফিরিয়ে এনে এলাকার রাস্তায় প্রদর্শন করে।

‘আল-আকসার তুফান’ অভিযানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ফিলিস্তিনিরা এখানে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে ‘স্মার্ট পরিকল্পনা’ ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ এমন সময় এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়, যখন ইহুদিরা ঐতিহ্যবাহী ‘সুকোত’ উৎসব পালনে ব্যস্ত এবং ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। অভিযান পরিচালনায় ভূমি ও আকাশপথ দুটিই ব্যবহার করা হয়েছে। হামাস বাহিনী কয়েক ডজন ইসরাইলি সৈন্যকে বন্দি করার পর জানিয়েছে, তেলআবিব যদি তাদের মুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দিতে হবে।

এমন সময় ফিলিস্তিনিরা এ সফল অভিযান চালিয়েছে, যখন ইসরাইল ও সৌদি আরব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকার ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছে। তবে কোনোকিছুই ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

ইরানের পার্স টুডে থেকে