সৌদি আরব কি আরব শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এগোবে?
- প্রকাশের সময় : ০৭:২৮:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
- / ৮৩ বার পঠিত
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান সংঘাত বন্ধে সৌদি আরবের কূটনৈতিক তত্পরতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্ দেশ হিসেবে এই দেশটির প্রতি সবার প্রত্যাশার মাত্রা সঙ্গত কারণে কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে হামাস তাদের হাতে আটক দুই বৃদ্ধ ইসরায়েলী নারীকে মুক্তি দেয়। এ নিয়ে আলোচনায় কাতার ও মিশর মধ্যস্থতা করেছিল। ২৩ অক্টোবর গণমাধ্যম সংবাদটি প্রাধান্য পায়। পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এদিন তার ইনস্টাগ্রামে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি ছবি পোস্ট করেন। বিন সালমান এদিন ঘোষণা করেন আগামী বছর থেকে তার দেশ নিয়মিত ইস্পোর্ট ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজন করবে।
গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধের তিন সপ্তাহ পার হলেও সংঘাত বন্ধে রিয়াদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে সৌদি আরব কূটনৈতিকভাবে হলেও ইসরায়েলের হামলা বন্ধের চেষ্টা করবে বলে অনেকে আশা করেছিল। পর্যবেক্ষকদের ধারণা যেহেতু নিরাপত্তা প্রশ্নে রিয়াদ ওয়াশিংটনের ওপর ব্যাপক নির্ভরশীল তাই গাজায় হামলা বন্ধে তাদের পক্ষে বিশেষ কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলাকে সবরকম সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মাস খানেক আগে ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন একটি দেশের দাবি থেকে রিয়াস সরে আসবে বলে মনে হচ্ছিল। গাজায় সংঘর্ষ শুরু না হলে কি হতো বলা যায় না তবে সংঘাত বেঁধে যাওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে যেমন আগাতে পারছে না সৌদি তেমনি ফিলিস্তিনিদের ন্যয়সঙ্গত অধিকারও সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারছে না দেশটি। এ পর্যন্ত কেবল বৈঠক ও বিবৃতির মধ্যেই নিজেদের সীমিত রেখেছে।
গাজায় সংঘাত শুরুর পর সৌদি আরব যে একেবারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে তা নয়, অন্য বিবৃতি এসেছে দেশটির পক্ষ থেকে। ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি গ্রুপ হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলার পর ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক পালটা হামলা শুরু করে। ঘটনা শুরুর ঠিক পরপরই রিয়াদ এক বিবৃতিতে উত্তেজনা না বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। এ নিয়ে অনেক বৈঠক এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আলোচনাও করে তবে এর কোনোটিই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখেনি। ১৫ অক্টোবর সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিন সালমান। বৈঠকের আগে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে উত্খাতের যে কোনো পদক্ষেপের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রত্যাখ্যান সৌদি আরব, একই সঙ্গে তারা নিরীহ বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা অব্যাহত রাখারও নিন্দা জানায়। বস্তুত এটি দেশটির নীতিগত অবস্থান। এই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তবে আঞ্চলিক প্রভাবশালী ও ধনী দেশ হওয়ায় দেশটির প্রতি সবাই আশা করে যে তারা কেবল বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে কিছু করে দেখাবে।
তবে সৌদি আরব যে সংঘাত নিরসনে কোনোই ভূমিকা পালন করছে না তা নয়। ১৮ অক্টোবর রিয়াদে ওআইসির নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ওআইসির প্রায় সব পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বৈঠকে যোগ দেন। উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনে সংঘাত বন্ধের উপায় বের করা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বিমুখী আচরণের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করছে না অথচ ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। তিনি এই বৈঠকে ২০০২ সালে তত্কালীন ক্রাউন প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ ঘোষিত আরব শান্তি পরিকল্পনার কথা পুনরুল্লেখ করেন। ঐ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে আরব দেশগুলোর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলা হয়েছিল। পরিকল্পনাটি যদিও এখন কার্যত মৃত তবে বিশ্লেষকদের ধারণা একে পুনরুজ্জীবিত করার এখনই সময়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিন ইস্যুটি উপেক্ষিতই থেকে গেছে। ১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো শান্তিচুক্তিতে যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলা হয়েছিল সেটিকেও আরব দেশগুলো সমর্থন করে। তবে আরব শান্তি পরিকল্পনার মতো দুই রাষ্ট্র সমাধানের তত্ত্বটিও বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায়। বিভিন্ন বৈঠক বিবৃতি থেকে বাস্তব সমাধান না এলেও বৈঠকে আলোচিত প্রস্তাবগুলো অনেক কিছু করার আছে বলে আশা করা যায়। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
হককথা/নাছরিন