সীমান্তে শত শত অভিবাসন প্রত্যাশীকে গুলি করে হত্যা করেছে সৌদি আরব
- প্রকাশের সময় : ১১:৪৯:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩
- / ১১১ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের সীমান্ত রক্ষীরা গুলি করে হত্যা করেছে ইথিওপিয়ার শত শত অভিবাসন প্রত্যাশীকে। এসব মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে সৌদি আরবে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় প্রহরীরা তাদেরকে মেশিন গানের গুলি এবং গোলা (মর্টার) নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নতুন এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষণিক ও জরুরিভিত্তিতে তদন্ত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এতে বলা হয়েছে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ বছর জুন পর্যন্ত হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী সৌদি আরবে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদেরকে হত্যা করে এর জবাব দিয়েছে সৌদি আরব। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার রিপোর্টে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করেছে। তারা বলেছেন, অভিবাসীদেরকে হত্যা করতে সীমান্ত প্রহরীরা ব্যবহার করেছে বিস্ফোরক অস্ত্র। খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বেশ কিছু নারী ও শিশুকে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে অভিবাসী প্রত্যাশীদের কাছে সীমান্তরক্ষীরা জানতে চেয়েছে তাদের কোন অঙ্গে গুলি করবে।
ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের একজন নারী বলেছেন, নিরাপত্তা হেফাজত থেকে মুক্তি দেয়ার পরই একদল অভিবাসীর ওপর গুলি করেছে সীমান্তরক্ষীরা। তিনি বলেন, আমাদের দিকে তারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়েছে। সে কথা মনে হলেই কাঁদি। একজন ছেলেকে দেখেছি সাহায্য চেয়ে চিৎকার করতে। গুলিতে দুটি পা-ই হারিয়েছে সে। আর্তনাদ করছিল। বলছিল, তোমরা কি আমাকে এখানে ফেলে যাচ্ছো? দয়া করে আমাকে ফেলে যেও না। কিন্তু ওই ছেলেটিকে আমরা সাহায্য করতে পারিনি। কারণ, সবাই যে যার জীবন রক্ষার জন্য দৌড়াচ্ছিলাম। এই রিপোর্ট ভয়াবহ ইস্টার্ন রুটের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। হর্ন অব আফ্রিকা থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত বিস্তৃত এই রুট। এখানে কীভাবে আইন লঙ্ঘন বৃদ্ধি পেয়েছে তার একটি প্রকৃত চেহারা ওই রিপোর্ট।
উল্লেখ্য, ইথিওপিয়ার হাজার হাজার শরণার্থীর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে সৌদি আরব। দুই বছর ধরে উত্তর ইথিওপিয়ায় নৃশংস গৃহযুদ্ধ হয়। তার শেষ হয় ২০২২ সালে। এর ফলে দেশটি থেকে পালিয়ে গেছেন কয়েক লাখ মানুষ। প্রায় সাড়ে সাত লাখ ইথিওপিয়ানের বসবাস সৌদি আরবে। তবে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) ২০২২ সালের পরিসংখ্যানে বলছে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন প্রায় সাড়ে চার লাখ ইথিওপিয়ান। কিন্তু সৌদি আরবে তরুণ বা যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে হাজারো অভিবাসীকে পুশব্যাক করেছে রিয়াদ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যে পরিমাণ মানুষকে এবং যে প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে, তা যদি সৌদি আরব সরকারের নীতির অংশ হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ নিয়ে কথা বলেছে ইথিওপিয়ার ৩৮ জন অভিবাসীর সঙ্গে। কীভাবে অভিবাসীদের দিকে সৌদি আরবের সীমান্ত রক্ষাকারী প্রহরীরা গুলি করেছে অথবা বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন তারা। তাদের নির্যাতনের শিকার নারী, পুরুষ ও শিশুরা পাহাড়ি উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তাদের অনেকে আহত। অনেকের অঙ্গহানি হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন। ২০২১ সালের মে থেকে এ বছর জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্য সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত কমপক্ষে ৩৫০টি ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ বছর জুলাই পর্যন্ত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত কয়েক বর্গ কিলোমিটারের ছবি পর্যবেক্ষণ করেছে তারা।
তাতে দেখা গেছে নিহত ও আহত অভিবাসীদের মৃতদেহ পড়ে আছে বিভিন্ন স্থানে, ক্যাম্পে, মেডিকেল ফ্যাসিলিটিতে, অভিবাসীদের আশ্রয়শিবিরের কাছে তার আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আল থাবিতে অভিবাসীদের একটি ক্যাম্প শনাক্ত করেছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে তা দেখা যায়। এর সঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বর্ণনা মিলে যায়। এই ক্যাম্পটি ভেঙে দেয়া হয় এপ্রিলের শুরুতে। সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী নয় এমন নৌযানে করে জিবুতি থেকে গালফ অব অ্যাডেন পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে পথে বের হন আশ্রয়প্রার্থীরা। ইয়েমেনের পাচারকারীরা তাদেরকে নিয়ে যায় সা’দা গভর্নরেটে। অনেকে বলেছেন, পাচার থেকে ঘুষ বা চাঁদা দাবি করে কাজ করছে হুতি বাহিনী। তারা এসব আশ্রয়প্রার্থীকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখে। দাবি করা অর্থ না দিলে তাদেরকে সেখানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হুতি নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন বিষয়ক অফিস পাচারকারীদের পর্যায়ক্রমিকভাবে সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতায় অভিবাসীদেরকে সৌদি আরবে পৌঁছে দেয়া হয়। এতে সপ্তাহে তাদের আয় হয় ৫০ হাজার ডলার। ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর থেকে সানা’র নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হুতিদের হাতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ক গবেষক নাদিয়া হার্ডনম্যান বলেন, বাকি বিশ্বের দৃষ্টির বাইরে প্রত্যন্ত সীমান্ত অঞ্চলে শত শত অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীকে হত্যা করছে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা। দেশটি পেশাদারী গলফ, ফুটবল ক্লাব এবং বড় রকমের
বিনোদনমূলক ইভেন্ট আয়োজনে শত শত কোটি ডলার খরচ করছে। কিন্তু এসব ভয়াবহ অপরাধ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সৌদি আরব দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না। তাই অভিবাসীদের হত্যার যেকোনো পলিসি অবিলম্বে এবং জরুরিভিত্তিতে বাতিল করতে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পাশাপাশি এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ করেছে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই রিপোর্টকে সৌদি সরকারের একজন মুখপাত্র অপ্রমাণিত, বিশ্বস্ত সূত্রভিত্তিক নয় বলে বর্ণনা করেছেন। সূত্র : মানবজমিন
সুমি/হককথা