শ্রীলংকায় বোমা হামলায় ৩ শতাধিক নিহত : দেশজুড়ে কারফিউ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ : শেখ সেলিমের নাতি জায়ান সহ নিহতের সংখ্যা ৩ শতাধিক, জামাতা সহ আহত কমপক্ষে ৪৫০
- প্রকাশের সময় : ০৪:৩৯:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯
- / ৫৫৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: শোকে ছেয়ে গেছে শ্রীলংকা। সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ শতাধিক। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫০ জন। আহতাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এগিয়ে গেছেন আহতদের সেবায়। রক্তদানের লাইনে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের দীর্ঘ লাইন। কমপক্ষে আটটি বিস্ফোরণে রোববার দিনটি শ্রীলংকায় গৃহযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিস্ফোরণ হয়েছে নেগোম্ব, বাত্তিকালোয়া ও কলম্বোর তিনটি গির্জায়। এ ছাড়া বিস্ফোরণ হয়েছে হোটেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাংগ্রি লা, কিংসবারি ও সিনামন গ্রান্ড হোটেল।
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জারি করা হয়েছে কারফিউ। অস্থায়ী সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ২৭ জন বিদেশী নাগরিক রয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয় নি।
শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি নিহত এবং জামাতা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সেলিমের নাতির নাম জায়ান চৌধুরী ও জামাতা নাম মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। এ তথ্য জানিয়েছে শ্রীলঙ্কাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তারা উঠেছিলেন কলম্বোর পাঁচ তারকা একটি হোটেলে।
এদিকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। তবে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নয় যে, এই হামলা কে বা কারা চালিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলা সম্ভবত একই গ্রুপ চালিয়েছে।
শ্রীলংকার পাঁচ তারকা হোটেল সিনামন গ্রান্ড হোটেল। সকালে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানো লোকজন। লম্বা সেই লাইনে অন্য সবার মাঝে ছদ্মবেশ ধারণ করে দাঁড়িয়েছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলের রেস্তোরাঁয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই হোটেলের একজন ম্যানেজার এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সময় রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটার দিকে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে অন্য সব মানুষের সঙ্গে দাঁড়ানো ছিল এক আত্মঘাতী হামলাকারী। সেই ওই হোটেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। তার আগে চেকপোস্টে সে মিথ্যে ঠিকানা দেয়।
হামলাকারী আজম ছিল ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাবি করে, কলম্বোতে ব্যবসার জন্য গিয়েছে সে। তারপরই ওই লাইনে দাঁড়িয়ে হামলা চালায় সে। ওই ম্যানেজার আরো বলেছেন, হামলার আগের রাতে হামলাকারী নিজেকে মোহাম্মদ আজম মোহাম্মদ বলে নাম নিবন্ধিত করে। সে ব্রেকফাস্ট বুফের লাইনে দাঁড়ানোর পর যখন তাকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে তার পিছনে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সে নিজে ও হোটেলের অনেক অতিথি নিহত হন।
ওই ম্যানেজার ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে- বেশ বিশৃংখল অবস্থা চলছিল। তখন ছিল সকাল সাড়ে আটটা। সবাই ব্যস্ত ছিলেন। পরিবার নিয়ে এসেছেন বেশির ভাগ মানুষ। এ সময় ওই হামলাকারী লাইনে এসে প্রবেশ করে। আস্তে আস্তে সে সামনে চলে যায়। যখন খাবার দেয়া হবে তার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সে বিস্ফোরণ ঘটনায়। অতিথিদেরকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন আমাদের ম্যানেজাররা। তাদের একজনও তাৎক্ষণিকভাবে মারা গেছেন।
জানা গেছে, রোববার ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে তিনটি গির্জা ও কয়েকটি হোটেলে বোমা হামলা হয়। এর মধ্যে ওই হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান চৌধুরী। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন। বোমা হামলায় পর মশিউল হক চৌধুরী আহত হন এবং জায়ানকে অনেকক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাসপাতালে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর আগে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল শিশু জায়ান। রাতে শিশুটির মৃত্যুর খবর পায় পরিবারের সদস্যরা। এই খবরে তারা কলম্বোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে একাধিক গণমাধ্যমে জানিয়েছে।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ব্রুনাইয়ে সরকারি সফরে আছেন। সন্ধ্যায় দেশটির রাজধানী বন্দর সেরি বেগাবানের এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার আটটি স্থানে সংঘটিত বোমা হামলায় বহু লোক নিহত ও আহত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা হলো শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের পরিবার শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার শিকার হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সেলিমের মেয়েজামাই ও নাতি এ সময় একটি রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলেন। সেখানে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে মেয়েজামাই আহত হন এবং আজ (রোববার) বিকেল পর্যন্ত নাতির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
রোববার ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে বোমা হামলা হয়। এর মধ্যে হোটেল শাংরি-লার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তার ভিড়ের সময়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।