নিউইয়র্ক ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘শামীমা বেগমকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১৫৭ বার পঠিত

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ছাত্রী শামীমা বেগমের শাশুড়ি বলেছেন, জীবন পুনরায় ঢেলে সাজানোর জন্য তার পুত্রবধূকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত।

শামীমা বেগমের ডাচ জিহাদি স্বামী ইয়াগো রিদিজকের মা অ্যাঙ্কি রিদিজক জোর দিয়ে বলেন, সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য এই দম্পতিকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তবে তাদের মৌলবাদী হয়ে ওঠার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দেন স্কুলশিক্ষার্থী শামীমা বেগম। সেখানে পৌঁছে আইএসের এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন তিনি এবং জন্ম দেন তিন সন্তানের। যদিও তার কোনও সন্তানই এখন বেঁচে নেই। আইএসে যোগ দেওয়ায় ব্রিটেনের সরকার শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল এবং যুক্তরাজ্যে তার ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের খেলাফতের পতনের পর সিরিয়া এবং ইরাক থেকে শত শত ইউরোপীয় নিজ নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন। আইএসে যোগ দেওয়া ইউরোপীয়রা তাদের দেশের সরকারের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমও সেই শত শত ইউরোপীয়দের একজন যাদের ভাগ্য ঝুলে আছে আদালতে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার এক শিবিরে গর্ভবতী শামীমাকে খুঁজে পান ব্রিটেনের একজন সাংবাদিক। ওই সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইএসে যোগ দেওয়া নিয়ে তার কোনও অনুশোচনা না থাকায় ব্রিটেনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে সেই সময়।

যুক্তরাজ্যে ফেরার ওপর ব্রিটেনের হোম অফিসের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন শামীমা বেগম। নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

২৩ বছর বয়সী এই তরুণী বর্তমানে সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের পরিচালিত এক শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন। এক সময় বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার বলা হতো কুর্দিদের এই শরণার্থী শিবিরকে। শামীমা বেগম ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পৌঁছানোর কয়েকদিন পর ২৩ বছর বয়সী ডাচ জিহাদি ইয়াগো রিদিজককে বিয়ে করেন। তখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণীর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।

এই দম্পতি এখনও আইনি দৃষ্টিতে বিবাহিত হলেও ২০১৯ সালে সিরিয়ায় স্থল যুদ্ধে আইএস হেরে যাওয়ার পর থেকে তাদের আর সাক্ষাৎ হয়নি। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলকে শামীমা বেগমের শাশুড়ি অ্যাঙ্কি রিদিজক বলেন, আমার মতে শামীমাকে দেশে ফেরার এবং জীবন পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।

যদিও গত সপ্তাহে প্রচারিত বিবিসির একটি ডকুমেন্টারিতে শামীমা বেগম তার স্বামীর সাথে থাকতে চান না বলে জানিয়েছিলেন। অ্যাঙ্কি রিদিজক বলেন, তার ছেলে আবারও শামীমার সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু ব্রিটেন তার সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করছে না।

ডকুমেন্টারিতে আইএস জিহাদি স্বামীর সঙ্গে আপত্তিকর সম্পর্কের বিবরণ দিয়েছেন শামীমা বেগম। এর আগে রিদিজক আইএসে যোগ দেওয়ার পর তার জীবন সম্পর্কে অনেক খোলামেলা কথা বলেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একবার বলেছিলেন, তিনি একজন নারীকে পাথর মেরে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন এবং খুন হওয়া আইএস বন্দীদের লাশের স্তূপ দেখেছিলেন।

বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়াই করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে আইএস বন্দীদের লাশের স্তূপ দেখার পর থেকে এই গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি কুর্দি নিয়ন্ত্রিত কারাগারে বন্দী রয়েছেন তিনি। নেদারল্যান্ডসে ফিরলে আইএসে যোগদানের অভিযোগে ছয় বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

শামীমা বেগমের শাশুড়ি বলেন, প্রথম থেকেই আমরা কোনও ধরনের প্রচারে না জড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শামীমাকে নিয়ে ইয়াগো একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।

ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখলের পর সেখানে কঠোর শরিয়া আইনের প্রয়োগ ও খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে আইএস। নিজেদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর তারা ইরাকে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়।

একই সঙ্গে পশ্চিমা সাংবাদিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার কর্মীদের নৃশংসভাবে শিরশ্ছেদ ও টেলিভিশনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। আইএসের জিহাদীদের কাছে এসব ঘটনা ছিল একেবারে সাধারণ। সূত্রঃ ঢাকা পোষ্ট

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘শামীমা বেগমকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত’

প্রকাশের সময় : ১১:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ছাত্রী শামীমা বেগমের শাশুড়ি বলেছেন, জীবন পুনরায় ঢেলে সাজানোর জন্য তার পুত্রবধূকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত।

শামীমা বেগমের ডাচ জিহাদি স্বামী ইয়াগো রিদিজকের মা অ্যাঙ্কি রিদিজক জোর দিয়ে বলেন, সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য এই দম্পতিকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তবে তাদের মৌলবাদী হয়ে ওঠার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দেন স্কুলশিক্ষার্থী শামীমা বেগম। সেখানে পৌঁছে আইএসের এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন তিনি এবং জন্ম দেন তিন সন্তানের। যদিও তার কোনও সন্তানই এখন বেঁচে নেই। আইএসে যোগ দেওয়ায় ব্রিটেনের সরকার শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল এবং যুক্তরাজ্যে তার ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের খেলাফতের পতনের পর সিরিয়া এবং ইরাক থেকে শত শত ইউরোপীয় নিজ নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করেছেন। আইএসে যোগ দেওয়া ইউরোপীয়রা তাদের দেশের সরকারের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমও সেই শত শত ইউরোপীয়দের একজন যাদের ভাগ্য ঝুলে আছে আদালতে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার এক শিবিরে গর্ভবতী শামীমাকে খুঁজে পান ব্রিটেনের একজন সাংবাদিক। ওই সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইএসে যোগ দেওয়া নিয়ে তার কোনও অনুশোচনা না থাকায় ব্রিটেনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে সেই সময়।

যুক্তরাজ্যে ফেরার ওপর ব্রিটেনের হোম অফিসের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন শামীমা বেগম। নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

২৩ বছর বয়সী এই তরুণী বর্তমানে সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের পরিচালিত এক শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন। এক সময় বিশ্বের উন্মুক্ত কারাগার বলা হতো কুর্দিদের এই শরণার্থী শিবিরকে। শামীমা বেগম ২০১৫ সালে সিরিয়ায় পৌঁছানোর কয়েকদিন পর ২৩ বছর বয়সী ডাচ জিহাদি ইয়াগো রিদিজককে বিয়ে করেন। তখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণীর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।

এই দম্পতি এখনও আইনি দৃষ্টিতে বিবাহিত হলেও ২০১৯ সালে সিরিয়ায় স্থল যুদ্ধে আইএস হেরে যাওয়ার পর থেকে তাদের আর সাক্ষাৎ হয়নি। ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলকে শামীমা বেগমের শাশুড়ি অ্যাঙ্কি রিদিজক বলেন, আমার মতে শামীমাকে দেশে ফেরার এবং জীবন পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া উচিত।

যদিও গত সপ্তাহে প্রচারিত বিবিসির একটি ডকুমেন্টারিতে শামীমা বেগম তার স্বামীর সাথে থাকতে চান না বলে জানিয়েছিলেন। অ্যাঙ্কি রিদিজক বলেন, তার ছেলে আবারও শামীমার সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু ব্রিটেন তার সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করছে না।

ডকুমেন্টারিতে আইএস জিহাদি স্বামীর সঙ্গে আপত্তিকর সম্পর্কের বিবরণ দিয়েছেন শামীমা বেগম। এর আগে রিদিজক আইএসে যোগ দেওয়ার পর তার জীবন সম্পর্কে অনেক খোলামেলা কথা বলেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একবার বলেছিলেন, তিনি একজন নারীকে পাথর মেরে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন এবং খুন হওয়া আইএস বন্দীদের লাশের স্তূপ দেখেছিলেন।

বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়াই করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে আইএস বন্দীদের লাশের স্তূপ দেখার পর থেকে এই গোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি কুর্দি নিয়ন্ত্রিত কারাগারে বন্দী রয়েছেন তিনি। নেদারল্যান্ডসে ফিরলে আইএসে যোগদানের অভিযোগে ছয় বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

শামীমা বেগমের শাশুড়ি বলেন, প্রথম থেকেই আমরা কোনও ধরনের প্রচারে না জড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শামীমাকে নিয়ে ইয়াগো একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বলে আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।

ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ দখলের পর সেখানে কঠোর শরিয়া আইনের প্রয়োগ ও খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে আইএস। নিজেদের খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর তারা ইরাকে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়।

একই সঙ্গে পশ্চিমা সাংবাদিক ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার কর্মীদের নৃশংসভাবে শিরশ্ছেদ ও টেলিভিশনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে। আইএসের জিহাদীদের কাছে এসব ঘটনা ছিল একেবারে সাধারণ। সূত্রঃ ঢাকা পোষ্ট