শত্রুভাবাপন্ন চীন-অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০২৩
- / ৯৭ বার পঠিত
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : সাত বছরের মধ্যে প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শনিবার চীন সফরে আসছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। এমনিতেই এই দুটি দেশের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক। চীনকে কাউন্টার দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত কোয়াডের সদস্য অস্ট্রেলিয়া। তাদেরকে পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন সাবমেরিন তৈরিতে প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ দেয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। তা নিয়ে চীন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এসব সম্পর্ক বড় নয়। এটাই প্রমাণ করতে যাচ্ছে চীন ও অস্ট্রেলিয়া। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্যানবেরা যখন সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছে এবং চীনের সঙ্গে যখন নিজেদের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে, তখন তিন দিনের এই সফরে চীন আসছেন অ্যান্থনি আলবানেজ।
অনলাইন বিবিসি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একে অন্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে এসেছে চীন ও অস্ট্রেলিয়া। ধারণা করা হয় একে অন্যের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে নেতিবাচক। কিন্তু যখন বাণিজ্যের কথা আসে, তখন দেশ দুটি একে অন্যকে এড়িয়ে চলার সামর্থ রাখে না। ২০২০ সালে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল সর্বোচ্চ বা পিকে। অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই গেছে চীনে। তুলনামূলকভাবে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির শতকরা প্রায় ৯ ভাগ এবং বৃটেনের শতকরা প্রায় ৫ ভাগ বিক্রি হয়েছে চীনে।
চীনকে প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার : ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সেসব বিষয় এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাণিজ্যিক সুবিধাকে দৃশ্যত সবচেয়ে শক্তিধর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে সরকার। ক্যানবেরায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ জ্যান গোলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ওই দাবি চীন সরকারকে গভীরভাবে হতাশ করেছিল। তার পরপরই চীনের রাষ্ট্রদূত একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার কিছু শিল্পখাত দুর্ভোগে পড়তে পারে।
ঠিকই অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২০০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক পণ্যের ওপর চীন শুল্ক আরোপ করে এবং বিধিনিষেধ দেয়। গরুর মাংস, ওয়াইন, কয়লা, কাঠ এবং চিংড়ি ছাড়া বেশির ভাগ পণ্য এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রফেসর গোলি বলেন, আসলে একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল চীন সরকার। তা হলো অস্ট্রেলিয়া সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে তারা খুশি নয়। এটা বোঝাতে তারা অর্থনৈতিক ক্ষতি করার পথটি বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায়ী অংশীদারের এমন পদক্ষেপে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। তারপর চীন অনেক বিধিনিষেধ পরিবর্তন করেছে। শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি অস্ট্রেলিয়ার নতুন নির্বাচিত সরকারের জন্য সহায়ক হয়েছে।
গত বছর বালিতে জি-২০শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ। এর পরপরই তিনি বলেন, আমরা যখন সংলাপ করবো, গঠনমূলক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আলোচনা করবো তখন সবসময়ই আমাদের সম্পর্ক ভাল থাকবে।
আলবানিজ মনে করিয়ে দেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া এই তিন দেশে একসঙ্গে তাদের মোট যে বাণিজ্য তার চেয়ে চীনের সঙ্গে অধিক বেশি। তিনি চীন ও অস্ট্রেলিয়াকে দুটি উচ্চ অর্থনীতির পরিপূরক দেশ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা তার সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
চীনের তথাকথিত অর্থনৈতিক ক্ষতি করার উদ্যোগ সফল হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবু বিভিন্ন ইস্যুতে প্রকাশ্যে বেইজিংয়ের সমালোচনা করে এখনও অস্ট্রেলিয়া। তবে চীনের বাণিজ্যিক বিধিনিষেধের কারণে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসা ও এর সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।
প্রফেসর গোলি বলেন, চীনকে ছাড়া আমরা টিকে থাকতে পারবো না। আমি মনে করি আলবানিজ সরকার পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তাতে কিছু ত্যাগ করতে হবে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ককে উন্নত করতে হবে।
অস্ট্রেলিয়াকে প্রয়োজন চীনের: অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের রিসার্স ফেলো বেনজামিন হার্শকোভিচ বলেন, গভীরভাবে অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল চীন ও অস্ট্রেলিয়া। বিস্তৃত ও বর্ধনশীল অর্থনীতির চাকাকে সঠিক পথে রাখতে হলে কাঁচামালের ওপর উচ্চ মাত্রায় অস্ট্রেলিয়ার ওপর নির্ভরশীল চীন। উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ আকরিক লোহা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস যায় চীনে। এ দুটি পণ্যের ওপর চীন কখনো কোনো বিধিনিষেধ দেয়নি। কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেখান যে, বাণিজ্যে বিধিনিষেধ দিয়ে ক্যানবেরাকে বেইজিংয়ের কাছাকাছি আনতে বাধ্য করতে পারেনি চীন। এতে উল্টো প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বেনজামিন হার্শকোভিচ বলেন, চীন সরকার অনুধাবন করতে শুরু করে যে, তারা যে অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে অস্ট্রেলিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের আরও কাছাকাছি ঠেলে দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ক্যানবেরাকে দূরে সরাতে চায় বেইজিং।
হককথা/নাছরিন