রুশবিরোধী পাল্টা ইউক্রেনীয় হামলা, কোনো পক্ষই সাফল্য পায়নি

- প্রকাশের সময় : ০১:৩০:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
- / ৭৮ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রুশবিরোধী পাল্টা ইউক্রেনীয় হামলা ও অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু, কোনো পক্ষই উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য পায়নি। রাশিয়া বলছে, তারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর অভিযান ব্যর্থ করে দিয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেনীয় সরকার বলছে, তারা রুশ প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তাতে গত ২৪ ঘন্টায় মিশ্র অগ্রগতি হয়েছে।
আরোও পড়ুন । ভয়াবহ গতি নিয়ে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়, তীব্র হবে আরও
এক বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বার্তা সংস্থা বলছে, কিছু এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্ভবত ভালো অগ্রগতি ঘটিয়েছে এবং রুশ প্রতিরক্ষা ব্যুহের প্রথম স্তরটি ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে অন্য কিছু জায়গায় তাদের অগ্রগতি ছিল অপেক্ষাকৃত ধীর গতির। কিয়েভ বলেছে, শুক্রবার পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাখমুত শহরের কাছে আরও জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে। রাশিয়া বলছে, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পাল্টা অভিযান বা ‘কাউন্টার-অফেন্সিভ’ ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একই দাবি করছেন। শনিবার ব্রিটিশ সরকারের বিবৃতিতে রাশিয়ার অর্জনকেও ‘মিশ্র’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
অন্যদিকে ইউক্রেন তাদের পাল্টা অভিযান যে শুরু হয়েছে এ কথাও বলেনি এবং বলার সম্ভাবনাও নেই। তবে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে পাল্টা অভিযান শুরু হয়ে গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এখনও স্বাধীনভাবে করা রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। ইউক্রেনীয় বাহিনীও তাদের চলমান অভিযান সম্পর্কে তেমন কোনো কিছুই বলছে না। ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বদিকে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ভূমি পুনর্দখল করার জন্য ইউক্রেনের বাহিনী এই সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।
রুশ ড্রোনের টুকরোর আঘাতে ওডেসায় তিন জনের মৃত্যু
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওডেসা শহরের আকাশে একটি রুশ ড্রোনকে গুলি করে ধ্বংস করার পর, এর টুকরো পড়ে একটি আবাসিক ব্লকে আগুন লেগে গেছে। এতে তিনজন নিহত এবং ২৬ জন আহত হন। আহতদের মথ্যে একজন গর্ভবতী নারী এবং দু’টি শিশু রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্য আরেক ঘটনায় মধ্য ইউক্রেনের পোল্টভা অঞ্চলের একটি বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে রুশ বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে। স্থানীয় গভর্নর দিমিত্রো লুনিন বলেন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন দিয়ে এ হামলা চালানো হয়। এতে বিমানঘাঁটির অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের কী প্রভাব পড়েছে যুদ্ধে?
বিবিসির বিশ্লেষক পল অ্যাডামস বলছেন, ইউক্রেনের অভিযান সম্ভবত এ সপ্তাহ শেষে বা তার ঠিক আগে আগে শুরু হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবারেই টেলিগ্রামে প্রচারিত এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, তারা নিশ্চিত যে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তবে মঙ্গলবার নাগাদ বড় খবর হয়ে দাঁড়ায় নোভা কাখোভকায় নিপ্রো নদীর ওপরকার বাঁধ ধ্বংসের ঘটনাটি। এর প্রতিক্রিয়ায় নদীর দু’পাশের প্রায় ৫৯৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়।
পল অ্যাডামস লিখেছেন, রাশিয়া যতই অস্বীকার করুক, এটা মোটেই একটি আপতিক ঘটনা বা কো-ইনসিডেন্স বলে মনে হচ্ছে না। এই বাঁধটি এত দিন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং তার ওপর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি যে ইউক্রেনের আক্রমণের লক্ষ্য হবে সেরকম একটা সম্ভাবনা ছিল । তার কথায়, এমন জোর সম্ভাবনা আছে যে রুশ বাহিনী হয়তো বাঁধটিকে উড়িয়ে দিয়েছে, যাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অন্তত একটি আক্রমণের সম্ভাবনা বানচাল করে দেওয়া যায়। কিয়েভ এ জায়গাটির ব্যাপারে আগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
এপ্রিলের শেষ দিকে একবার ইউক্রেনীয় বাহিনী এ নদীটি পার হয়েছিল, তা ছাড়া নিপ্রো বদ্বীপ এলাকায় কয়েকটি ছোট দ্বীপের নিয়ন্ত্রণও দখল করেছিল। এ জায়গাটির ব্যাপারে কিয়েভের সামরিক পরিকল্পনা কী? তা জানা যায় না। তবে সেসব এখন অর্থহীন – কারণ বাঁধ ধ্বংসের পর যে বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হয়েছে, তাতে তাদের নদী পার হওয়া আপাততঃ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর কিয়েভ কর্তৃপক্ষকে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছে এবং অন্যদিকে যুদ্ধ দৃশ্যত আরও তীব্র হচ্ছে পূর্বদিকে। সূত্র : বিবিসি
বেলী/হককথা