রুশদের দেশান্তরী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে
- প্রকাশের সময় : ০১:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
- / ৩৭ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রশিয়ায় এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশছাড়ার ঘটনা বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়ানো এর অন্যতম উদ্দেশ্য। ইস্তাম্বুল থেকে তাশকেন্ট, বসফরাস প্রণালি থেকে চীন সীমান্ত পর্যন্ত এমন জায়গা কমই আছে যে রুশদের চোখে পড়ছে না। এদের সবাই যে তরুণ বয়সি তা নয়, ৪০ বা ৫০-এর কোঠায় যাদের বয়স তারাও আছে। সবাই চায় একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন বেছে নিতে। পরিস্থিতি ১৯৬০-এর দশকের ভিয়েতনাম যুদ্ধ বা ৮০-এর দশকের আফগান যুদ্ধের ঠিক তুলনীয় নয়। তখনও বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ ছিল তবে তা ছিল কেবল তরুণদের জন্য। বর্তমানে দেশান্তরীদের বেশিরভাগই ইন্টারনেট ভিত্তিক জব করে। যারাঅন্য চাকরি করে তাদের দেশত্যাগের হারতুলনামূলক কম। কারণ পরিবারসহ দেশান্তরী হওয়া কঠিন কাজ। গত সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশ যাওয়ার এই প্রবণতা বেড়েছে।
তুরস্ক, মন্টেনিগ্রো ও থাইল্যান্ড ঐতিহ্যগতভাবে রুশ অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্য। তবে তারা এখন ককেশাস ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও যাচ্ছে। সোভিয়েত আমলে জাতিগত রুশরা রাশিয়ান এসএফএসআর (রুশ ফেডারেশনের সাবেক নাম) থেকে নিয়মিতভাবে অন্য প্রজাতন্ত্রগুলোতে অভিবাসী হতো। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর গত তিন দশকে সাবেক প্রজাতন্ত্রগুলো থেকে রুশ ফেডারশনে আবার ফেরত গেছে। কারণ এই সময়ে রাশিয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ আবার তাদের আদি বাসভূমি থেকে বের আনা শুরু করেছে। এ যেন ইতিহাসের পুনরাবর্তন।
উজবেকিস্তান রুশদের সাদরে গ্রহণে করছে। সোভিয়েত আমলে সেখানে রুশভাষী স্কুলের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০-তে গিয়ে পৌঁছেছিল। এখন অবস্থা আবার সেরকম হতে চলেছে। বর্তমানে সেখানে রুশ ভাষায় পড়ানো হয় এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৯০০। ঠিক কত সংখ্যক রুশ দেশ ছেড়েছে তা জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে সংখ্যাটি ১০ লাখের কম হবে না। অনেকে রাশিয়ার ভেতর অনেক দূরদূরান্ত থেকে গাড়ি চালিয়ে এসে সীমান্তে গাড়ি রেখে সাইকেল নিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে বাকি পথ পাড়ি দেয়। সবাইরই গন্তব্য যে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো তা নয়। অনেকে তুরস্ক এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যাচ্ছে।
আরোও পড়ুন । মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকই মারা গেছেন : ডব্লিউএইচও
দেশত্যাগের ফলে রাশিয়া থেকে মেধা পাচারের অবস্থা তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সেটা হয়েছিল। ১৯৯১ সালের পর থেকে মধ্য এশিয়া থেকে অনেক উচ্চাভিলাষী মেধাবীর রাশিয়ায় যাওয়া শুরু করেছিল। এখন ঠিক তার বিপরীত অবস্থা। ইতিহাসে দেখা যায় ভাষা ও অর্থকে কেন্দ্র করে মানুষের সম্পর্ক আবর্তিত হয়েছে। মানুষ সাধারণত এমন জায়গা বেছে নেয় যেখানে ভাষা নিয়ে সমস্যা হয় না এবং অর্থ উপার্জনের যথেষ্ট সুযোগ থাকে। রুশ ফেডারেশন যেহেতু অন্যান্য সাবেক প্রজাতন্ত্র থেকে আর্থিক ও নানা দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল তাই সেখানে সীমান্তের ওপাশ থেকে নিয়মিত অভিবাসী আগমন ঘটে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ধীরে ধীরে সেই চিত্র বদলে যায়। এর ফলে সাবেক প্রজাতন্ত্রগুলোর ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে।
১০০ বছর আগে ১৯২০-এর দশকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মার্কসবাদী বিপ্লবীরা বিপ্লবের মশাল বিশ্বের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে দিতে দূরদূরান্তে পাড়ি দিয়েছিলেন। যেমন লিও ট্রটস্কি (যদিও লেনিনের সঙ্গে তার মতবিরোধ ঘটে কিন্তু তিনি ছিলেন একজন মার্কসবাদে উজ্জীবিত বিপ্লবী) ইস্তাম্বুল হয়ে মেক্সিকোতে অভিবাসী হন। তার সমাধি সেখানেই অবস্থিত। কিন্তু আজকের রুশদের জগত অনেকটাই সীমিত। তারা কেবল আলমাটি বা তাশকেন্টে বসেই ভাগ্য বদলাবার স্বপ্ন দেখতে পারে। তবে ধনীরা মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ বা দূর প্রাচ্যেও সম্পত্তি গড়ছেন। পশ্চিমের দুয়ার যেন তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাদের কিরগিজ কেএফসিতে বসে খেয়ে অথবা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে ইনস্টাগ্রামিং করেই এর সাদ মেটাচ্ছে।
এই অভিবাসীরা অনলাইনে রুবল (রুশ মুদ্রা) আয় করছে কিন্তু বিল দিচ্ছে উজবেক সোমে (উজবেক মুদ্রা)। যে যেই দেশে আছে সেখানকার স্থানীয় মুদ্রায় খরচ পরিশোধ করছে। ফলে সেই সব দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় চাহিদা বাড়ার ফলে মুদ্রাস্ফীতি। যেমন তুরস্কসহ ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোতে বেড়েছে বাড়িঘরের দাম। অর্থনীতিবিদদের মতে এটি ক্ষতিকর মুদ্রাস্ফীতি নয় (ক্ষতিকর মুদ্রাস্ফীতি হলো খরচ বৃদ্ধি হেতু দাম বেড়ে যাওয়া)। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও কর্ম সংস্থান বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
সাথী / হককথা