রিয়াদে ৯০টি দেশের বৈঠক : স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মাঠে এবার সৌদি আরব
- প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্য জয়ের আশা নিয়ে শুরু করা যুদ্ধে এবার সর্বহারা হয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে ইসরায়েলের খুনে নেতা নেতানিয়াহুকে। লেবাননে অসম্মানজনক যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনার মধ্যেই আরও খারাপ খবর এসেছে ইসরায়েলের জন্য। এত দিন দাবি জানিয়ে এলেও এবার প্রথমবারের মতো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সরাসরি মাঠে নেমেছে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ সৌদি আরব। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি দেশকে এনে এক টেবিলে বসিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমান।
মুসলিম দেশগুলোর অন্যতম দুই স্তম্ভ সৌদি ও ইরানের মধ্যে কয়েক দশক ধরেই ছিল বৈরী সম্পর্ক। আর এই শত্রæতা উস্কে দেওয়ার পেছনে অব্যাহতভাবে কাজ করে গেছে ইসরায়েল ও এর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকানরা এমন এক সন্দেহ ঢুকিয়েছিল যে, সৌদি আরব মনে করত ফিলিস্তিনকে ব্যবহার করে আসলে ইরান মধ্যপ্রাচ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। আর এ জন্য ইরান নিয়ন্ত্রিত হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের ছিল তীব্র শত্রæতা। ইরানকে দমনের নামে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক মেরামতে দূতিয়ালীও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এক বছর ধরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যায় এবার ভুল ভেঙেছে সৌদি আরবের। মোহাম্মদ বিন সালমান বুঝতে পেরেছেন, ইরানের সঙ্গে বৈরিতা জিইয়ে রেখে এতদিন নিজেদের আগ্রাসন বাড়িয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই শক্তিশালী মুসলিম দেশের বিভেদকে কাজে লাগিয়ে ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরান, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়াকে মুছে ফেলতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তবে দেরিতে হলেও ঘুম ভেঙেছে সৌদি আরবের। ইরানের বাড়ানোর বন্ধুত্বের হাতে হাত মিলিয়ে এবার মুসলিম বিশ্ব এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। গাজাজুড়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যায় সৌদির সমর্থন আদায় করা তো দূরের কথা, মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েল এখন শুধুই ঘৃণার নাম। বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব এত তীব্রতা আগে কখনোই পায়নি।
মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের আগ্রাসন চিরতরে বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছে সৌদি আরব। গেল সেপ্টেম্বরেই সৌদি যুবরাজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে কোনোদিনই সম্পর্ক স্থাপন করবে না সৌদি আরব। এবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ৯০টির বেশি দেশকে রিয়াদে এক করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদির উদ্যোগে দ্বিরাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্বের নতুন এই আন্তর্জাতিক জোটটি গেল মাসেই আত্মপ্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আদায়ে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়ার মতো দেশগুলো এক কাতারে সমবেত হয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর বুধবারের এই বৈঠকে ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরব। ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের ভূমি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করাই ইসরায়েলের যে এই নির্বিচার গণহত্যার উদ্দেশ্য সে কথাটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ওই ৯০ জাতির বৈঠকে। তবে সৌদি আরব স্পষ্টভাবে বলেছে, সেটা তারা আর হতে দেবে না। ফিলিস্তিনজুড়ে ইসরায়েলের দানবীয় আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রæত অস্ত্রবিরতি কার্যকরে নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিরীহ ফিলিস্তিনীদের ওপর নেতানিয়াহুর আগ্রাসন বন্ধে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই বলেও স্পষ্ট বার্তা দেয় সৌদি।
জাতিসংঘের ১৯৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে সব আন্তর্জাতিক আইনকে তুচ্ছ করে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ফিলিস্তিনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার মিশনে নেমেছে নেতানিয়াহু। এক বছরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ত্রাণ ও অবরোধে গাজার সব মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও। (দৈনিক বাংলা)