মোদি-বাইডেন বৈঠকের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি ঢাকার

- প্রকাশের সময় : ১১:০৬:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
- / ৫৪ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরের দিকে বাংলাদেশের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মোদির বৈঠকে আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসে কি না, সেটাই সবচেয়ে কৌতূহলের বিষয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে সরকার। শ্রমমানের ইস্যুতে বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরতে জেনেভা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে সামাজিক নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকারের অর্জন তুলে ধরবেন তিনি।
এদিকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে বাংলাদেশের তরফে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিস্তারিত অবহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন। উত্তর প্রদেশের বানারসে জি-২০ সম্মেলনের একটি কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছেন তিনি। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাদাভাবে এ প্রসঙ্গে তিনি আলোচনা করতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
বানারস থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি জেনেভা যাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে যোগদানের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে থাকবেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ৫ জুন জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন শুরু হয়েছে। ১৬ জুন সম্মেলন শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ জুন সম্মেলনে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার, বিশেষ করে শ্রমিকদের জন্য ন্যায়বিচর প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরবেন। অপরদিকে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আয়োজন করা হচ্ছে কমনওয়েলথ বিনিয়োগ সম্মেলন। এছাড়াও কূটনৈতিক তৎপরতায় আরও নতুন নতুন কর্মকাণ্ড আগামী দিনগুলোয় যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের বিষয়টি বাইডেনের কাছে তুলতে পারেন মোদি। বাংলাদেশের তরফে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারকে অনানুষ্ঠানিকভাবে পুরো বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। মোদিকে বাইডেন সরকার খুব মর্যাদা দিচ্ছে। ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তিনি ভাষণ দেবেন। ভারতের প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী এই সম্মান পাচ্ছেন। একই দিনে মোদির সম্মানে নৈশভোজে থাকবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন। ২৩ জুন ওয়াশিংটনের রোনাল্ড রিগ্যান ভবন ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারে স্থানীয় ভারতীয়দের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন মোদি। তবে বাংলাদেশে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে মোদি ও বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠক।
বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এই নীতি মোতাবেক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত নই।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শীতল সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালের ঘটনা শেখ হাসিনা ভুলতে পারেন না। আমি থাকার সময়ও দেখেছি, বিএনপির সঙ্গেই আমেরিকানদের ভাব বেশি। তাছাড়া চীনকে ঠেকাতেও তারা মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে। যুক্তরাষ্ট্রে নানা রকম লবিস্ট গ্রুপ আছে। তারা ভারতের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে নানা রকম কথা বলতেই থাকে। এবার শেখ হাসিনা সম্পর্কে আমেরিকানদের মাথায় কী ঢুকেছে জানি না। তবে ভারত অবশ্যই শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিল্লির কাছে খুবই স্পর্শকাতর। শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে চীন সব সময়েই গোয়েন্দা ঢোকানোর চেষ্টা করে। তার ওপর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতি খারাপ হোক, সেটা ভারত কখনোই চাইবে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভারত শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল।’
বাংলাদেশে ভারতের আরেক সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বৈঠকটি উচ্চপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। অবশ্যই আঞ্চলিক বিষয়গুলো সেখানে আলোচনা হবে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে কি না, সেটা স্পেকুলেট করা কঠিন। ভারত ও বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয় কি না, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
বিজেপি সরকারের উচ্চপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরুণ কে সাহ্নি যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো অযাচিত চাপের ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ থাকবে। এক্ষেত্রে আমেরিকা কিংবা জাপান কোনো ভুল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলে সেটা সংশোধনের পরামর্শ আঞ্চলিক দেশ হিসাবে ভারতের থাকবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী মোদির পরামর্শ থাকবে।’ভারতের থিংকট্যাংক গেটওয়ে হাউজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অমিত ভাণ্ডারি যুগান্তরকে বলেন, ‘বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে মোদি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলবেন, এটা খুবই যৌক্তিক। বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল থাকুক, সেটা ভারত প্রত্যাশা করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা এবং অর্থনৈতিক স্যাংশনের হুমকি স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবে।’
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। দুই দেশের দায়বদ্ধতাকে বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত অংশীদারত্বও বাড়বে। মোদির এই সফরের সময় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। এছাড়াও প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা ও বিকল্প শক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। চীনের আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মোদির এ সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় গত কয়েক বছরে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রভাব কীভাবে শেষ করা যায়, সেটা নিয়ে দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুমি/হককথা