নিউইয়র্ক ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘ভারতের ইভাঙ্কা ট্রাম্প ’: নিজের কোম্পানির মডেলিং নিজেই করেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৯৬ বার পঠিত

দেবিতার অন্য একটি নাম ‘ভারতের ইভাঙ্কা ট্রাম্প’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের কথা বলতে লজ্জা শরমের ধার ধারেন না। বরং হিংসুটেদের গায়ে ফোসকা ফেলেই সাফল্যের কথা ফলাও করে বলা তার অভ্যাস। কম সমালোচনা সইতে হয়নি তার জন্য। তবু সমঝে দেওয়া যায়নি তাকে। দেবিতা শরফ নিজের নীতিতে সপাটে চলে তার পরও মাত্র ২৪ বছর বয়সে নিজে হাতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের কোম্পানি। বানিয়েছেন ১০০০ কোটি ভারতীয় রুপির সাম্রাজ্য। আইআইএম বা আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ নেই। তবে দেবিতা বলেন, ব্যবসা বুঝতে ডিগ্রি লাগে না। ১৬ বছর বয়স থেকে নিয়মিত বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন দেবিতা। কখনও বাবার সঙ্গে, কখনও বা একাই।


মারওয়াড়ি কন্যা। দেবিতার কথায়, ব্যবসা তার রক্তে বহমান। ব্যবসায়ী পরিবারেই তার জন্ম। বাবা রাজকুমার শরাফ একটি কম্পিউটার প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বড় দাদাও সেই কোম্পানিরই প্রধান। মা বিজয়রানি শরাফ অর্থনীতির অধ্যাপিকা। বিজয়রানি জানিয়েছেন, তার দুই সন্তানেরই ছোট থেকে ব্যবসায় ঝোঁক ছিল। তবে দেবিতা তার কেরিয়ার শুরু করেন একটু কম বয়সেই। ১৯৯৮ সালে বাবার কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি। মুম্বাইয়ে ১৯৮১ সালের ২৫ জুন জন্ম দেবিতার। ১৭ বছর বয়সে বাবার কোম্পানিতে পেশাদার জীবন শুরু হয় তার। পাশাপাশি মুম্বাইয়ের কুইন মেরি স্কুলে চলছিল পড়াশোনাও। এরপর তিনি অর্থনীতি এবং বাণিজ্য নিয়ে মুম্বাইয়ের এইচ আর কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকনমিকসেও ভর্তি হন।


এক সাক্ষাৎকারে দেবিতা বলেছেন, ‘‘অফিসের পরিবেশ দেখে তখন থেকেই আমি ভাবতাম, আমিও এক দিন বাবার মতো একটা অফিস চালাবো।’’ তত দিনে অবশ্য বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজে বিদেশেও যেতে শুরু করেছেন তিনি। বাবার সঙ্গে বাণিজ্য সম্মেলনে ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালিতে যেতেন তিনি। সেখানে তার নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতে শুরু করে শিল্পপতি, উদ্যোগপতিদের সঙ্গে। সেই সময়েই ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণাগার তৈরি ভারতীয়দের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরির গবেষণা শুরু করেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের কোম্পানি। এই মুহূর্তে ওই কোম্পানির বার্ষিক আয় ১০০০ কোটি ভারতীয় রুপি। এটা মূলত একটি আধুনিক টেলিভিশন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই গোটা দুনিয়ায় ৩০ লাখ টিভি বিক্রি করে ফেলেছে তারা। ভারতেরও বৃহত্তম টিভি প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। বিদেশে যে সমস্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টিভি বিক্রি করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি তাদেরই।


২০২০ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ৪০ বছরের নীচে ভারতে নিজের চেষ্টায় নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করা নারী শিল্পপতিদের মধ্যে দেবিতাই সবচেয়ে ধনী। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮০০ কোটি ভারতীয় রুপি। ২০১৯ সালে এক কোম্পানির ‘সেরা ৫০ ক্ষমতাবান নারী শিল্পপতি’র তালিকায় নাম ছিল দেবিতার। ২০১৬ সালে ফোর্বস পত্রিকা তাকে ‘ভারতের মডেল সিইও’র সম্মান দেয়। সেই সম্মান এখনও জ্বলজ্বল করছে তার টুইটারের পরিচয়ে। এ ক্ষেত্রে মডেল বলতে ‘আদর্শ’ বোঝালেও দেবিতার ক্ষেত্রে তা আলাদা অর্থবাহী। কারণ তিনি নিজের তৈরি করা পণ্যের মডেলিংও করে থাকেন। দেবিতা মনে করেন, একজন অভিনেতা তার তৈরি পণ্যটির ব্যাপারে যতখানি আবেগ অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি তিনি নিজে প্রকাশ করতে পারবেন।


এ ব্যাপারে দেবিতার আদর্শ বা রোল মডেল স্টিভ জোবস। অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা বরাবর নিজের তৈরি পণ্যের পরিচিতি এবং প্রচার নিজেই করে এসেছেন। দেবিতা অবশ্য পুরোদস্তুর মডেলিংই করেছেন তার পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য। ফ্যাশনে বরাবরই আগ্রহী দেবিতা। বরাবরই সাজগোজ পছন্দ করেন তিনি। নিজের পণ্যের মডেলিং করতে গিয়েও নিখুতত্বে সামান্যতম খামতি রাখেননি তিনি। সেই অর্থে তিনি আক্ষরিক অর্থেও ‘মডেল’ সিইও। তবে নিজের ফ্যাশন প্রীতি শুধু নিজের কোম্পানির পণ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি দেবিতা। বহু ফ্যাশন ডিজাইনারের হয়ে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন। ফ্যাশন এবং প্রসাধনীর পণ্যের প্রচারও করেছেন। ২০২১ সালে দেশে লকডাউন চলাকালীন দেবিতার কোম্পানি নিজস্ব সুগন্ধি তৈরি করে। তবে ওই সুগন্ধি সবার জন্য নয়। প্রচারে দেবিতা জানিয়েছিলেন, এই সুগন্ধি বানানো হয়েছে ব্যবসার জগতের নারী বসদের জন্য।


গোটা বিশ্বে সেই সুগন্ধি বিক্রি করে যে আয় হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাই দেশে কোভিডের চিকিৎসায় দান করেছিলেন দেবিতা। দেবিতা বরাবরই নারীবাদী। তা নিয়ে সরবও হয়েছেন বরাবর। তিনি মনে করেন, শিল্পের দুনিয়ায় আরও বেশি প্রতিষ্ঠানের বস বা সিইও হওয়া উচিত নারীদেরই। তার মতে, বিশেষ করে ভারতে এমনটা করা গেলে অর্থনীতির এক অন্য স্তরে উত্তরণ হবে। দেবিতার অন্য একটি নামও আছে। ভারতীয় বাণিজ্য মহলে অনেকেই তাকে ডাকেন ‘ভারতের ইভাঙ্কা ট্রাম্প’ বলে। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় মেয়ে তথা আমেরিকার সাবেক ফার্স্ট ডটার ইভাঙ্কার সঙ্গে চেহারায় বা চরিত্রে অবশ্য কোনো মিল নেই দেবিতার।


তবে দেবিতার কথায়, তিনি ট্রাম্পকে একজন ভালো বাবা মনে করেন। আর ‘ভারতের ইভাঙ্কা’ নামটি তাকে দিয়েছিলেন স্বয়ং ট্রাম্পই। এমন দাবির জন্য অবশ্য দেবিতাকে কম কথা শুনতে হয়নি। টুইটারে তার এমন পোস্টের জন্য নিন্দকেরা বলেছেন, আদেখলামির সীমা থাকা উচিত। দেবিতা যদিও তার সমালোচকদের পাত্তা দেননি। তাদের সমালোচনা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। একবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে ছিল একটি ছবি। ট্রাম্পের সঙ্গে দেবিতার। দেবিতার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প অন্য হাতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করে ‘থাম্বস আপ’ করছেন। বিজ্ঞাপনে ওই ছবির পাশে বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘অভিনন্দন মিস্টার প্রেসিডেন্ট’। এই বিজ্ঞাপনের জন্যও সমালোচিত হতে হয় দেবিতাকে। পাল্টা দেবিতাও টুইট করে বুঝিয়ে দেন এই সব সমালোচনায় পাত্তা দিতে তার বয়েই গেছে। বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে তার সঙ্গে ট্রাম্পের সুসম্পর্কের খতিয়ান দিয়েছিলেন তিনি। যা দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে গিয়েছিলেন সমালোচকেরা।


টিভিতে নেটফ্লিক্স এবং ইউটিউব দেখার পরিকল্পনা এবং রিমোটে তার জন্য আলাদা বোতাম থাকা ফোরকে টেলিভিশন ২০১৬ সালে এনেছিল দেবিতার টিভি সংস্থা। সেই সময় ভারতের এই তরুণী শিল্পপতি বলেছিলেন, ‘‘আমি যেকোনো পণ্য তৈরির করার সময় নিজেকে গ্রাহকের জায়গায় বসিয়ে দেখি। আমি যদি কারও সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই, আমি তার কাছে পৌঁছে যাব। এ ব্যাপারে একবারও দ্বিধা করব না। ব্যবসা করতে এলে অকারণ আত্মসম্মানবোধ সরিয়ে রাখতে হয়।’’ নিজের সংস্থার বস হিসেবেও গর্ব করতে ভালবাসেন দেবিতা। বাবার সংস্থায় কর্মরত তরুণী দেবিতা নাকি একবার বলেছিলেন, ‘‘বসের মেয়ে হওয়ার জন্য আমি ক্ষমা চাইতে পারব না।’’

তবে এসবের বাইরেও এক অন্য দেবিতা রয়েছেন। ওড়িশি নাচের একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নর্তকী এই ‘মডেল সিইও’। নিজেকে ফ্যাশন সচেতন বলতেও পছন্দ করেন। ডিজাইনার পোশাক পরতে পছন্দ করেন। ইনস্টাগ্রামে নিজের সাজগোজের ছবিও দেন। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অনুরাগী আছে তার। বুদ্ধিমত্তায় সাধারণের থেকে নাকি অনেক এগিয়ে তিনি। ইন্টারন্যাশনাল হাই আইকিউ মেনেসা সোসাইটির সদস্য দেবিতা। আবার স্বাস্থ্য সম্পর্কেও বেশ সচেতন। নিজেকে ফিট রাখতে নিয়মিত যোগাসন করেন। প্রতিদিন রাতে জিম এবং প্রতি রোববার নাচের ক্লাসে যাওয়ার রুটিন কোনও দিন বদলায় না তার। এখন ৪২-এর কোঠায় পা রেখেছেন। বিয়ে করেননি। আপাতত নিয়মানুবর্তীতার সঙ্গে প্রিয় বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন এই ভারতীয় কন্যা। সূত্র : এবিপি

বেলী / হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘ভারতের ইভাঙ্কা ট্রাম্প ’: নিজের কোম্পানির মডেলিং নিজেই করেন

প্রকাশের সময় : ১২:১৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিজের কথা বলতে লজ্জা শরমের ধার ধারেন না। বরং হিংসুটেদের গায়ে ফোসকা ফেলেই সাফল্যের কথা ফলাও করে বলা তার অভ্যাস। কম সমালোচনা সইতে হয়নি তার জন্য। তবু সমঝে দেওয়া যায়নি তাকে। দেবিতা শরফ নিজের নীতিতে সপাটে চলে তার পরও মাত্র ২৪ বছর বয়সে নিজে হাতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের কোম্পানি। বানিয়েছেন ১০০০ কোটি ভারতীয় রুপির সাম্রাজ্য। আইআইএম বা আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ নেই। তবে দেবিতা বলেন, ব্যবসা বুঝতে ডিগ্রি লাগে না। ১৬ বছর বয়স থেকে নিয়মিত বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন দেবিতা। কখনও বাবার সঙ্গে, কখনও বা একাই।


মারওয়াড়ি কন্যা। দেবিতার কথায়, ব্যবসা তার রক্তে বহমান। ব্যবসায়ী পরিবারেই তার জন্ম। বাবা রাজকুমার শরাফ একটি কম্পিউটার প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বড় দাদাও সেই কোম্পানিরই প্রধান। মা বিজয়রানি শরাফ অর্থনীতির অধ্যাপিকা। বিজয়রানি জানিয়েছেন, তার দুই সন্তানেরই ছোট থেকে ব্যবসায় ঝোঁক ছিল। তবে দেবিতা তার কেরিয়ার শুরু করেন একটু কম বয়সেই। ১৯৯৮ সালে বাবার কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি। মুম্বাইয়ে ১৯৮১ সালের ২৫ জুন জন্ম দেবিতার। ১৭ বছর বয়সে বাবার কোম্পানিতে পেশাদার জীবন শুরু হয় তার। পাশাপাশি মুম্বাইয়ের কুইন মেরি স্কুলে চলছিল পড়াশোনাও। এরপর তিনি অর্থনীতি এবং বাণিজ্য নিয়ে মুম্বাইয়ের এইচ আর কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড ইকনমিকসেও ভর্তি হন।


এক সাক্ষাৎকারে দেবিতা বলেছেন, ‘‘অফিসের পরিবেশ দেখে তখন থেকেই আমি ভাবতাম, আমিও এক দিন বাবার মতো একটা অফিস চালাবো।’’ তত দিনে অবশ্য বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজে বিদেশেও যেতে শুরু করেছেন তিনি। বাবার সঙ্গে বাণিজ্য সম্মেলনে ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালিতে যেতেন তিনি। সেখানে তার নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হতে শুরু করে শিল্পপতি, উদ্যোগপতিদের সঙ্গে। সেই সময়েই ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণাগার তৈরি ভারতীয়দের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরির গবেষণা শুরু করেন তিনি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের কোম্পানি। এই মুহূর্তে ওই কোম্পানির বার্ষিক আয় ১০০০ কোটি ভারতীয় রুপি। এটা মূলত একটি আধুনিক টেলিভিশন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই গোটা দুনিয়ায় ৩০ লাখ টিভি বিক্রি করে ফেলেছে তারা। ভারতেরও বৃহত্তম টিভি প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। বিদেশে যে সমস্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টিভি বিক্রি করে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি তাদেরই।


২০২০ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ৪০ বছরের নীচে ভারতে নিজের চেষ্টায় নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করা নারী শিল্পপতিদের মধ্যে দেবিতাই সবচেয়ে ধনী। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৮০০ কোটি ভারতীয় রুপি। ২০১৯ সালে এক কোম্পানির ‘সেরা ৫০ ক্ষমতাবান নারী শিল্পপতি’র তালিকায় নাম ছিল দেবিতার। ২০১৬ সালে ফোর্বস পত্রিকা তাকে ‘ভারতের মডেল সিইও’র সম্মান দেয়। সেই সম্মান এখনও জ্বলজ্বল করছে তার টুইটারের পরিচয়ে। এ ক্ষেত্রে মডেল বলতে ‘আদর্শ’ বোঝালেও দেবিতার ক্ষেত্রে তা আলাদা অর্থবাহী। কারণ তিনি নিজের তৈরি করা পণ্যের মডেলিংও করে থাকেন। দেবিতা মনে করেন, একজন অভিনেতা তার তৈরি পণ্যটির ব্যাপারে যতখানি আবেগ অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি তিনি নিজে প্রকাশ করতে পারবেন।


এ ব্যাপারে দেবিতার আদর্শ বা রোল মডেল স্টিভ জোবস। অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা বরাবর নিজের তৈরি পণ্যের পরিচিতি এবং প্রচার নিজেই করে এসেছেন। দেবিতা অবশ্য পুরোদস্তুর মডেলিংই করেছেন তার পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য। ফ্যাশনে বরাবরই আগ্রহী দেবিতা। বরাবরই সাজগোজ পছন্দ করেন তিনি। নিজের পণ্যের মডেলিং করতে গিয়েও নিখুতত্বে সামান্যতম খামতি রাখেননি তিনি। সেই অর্থে তিনি আক্ষরিক অর্থেও ‘মডেল’ সিইও। তবে নিজের ফ্যাশন প্রীতি শুধু নিজের কোম্পানির পণ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি দেবিতা। বহু ফ্যাশন ডিজাইনারের হয়ে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন। ফ্যাশন এবং প্রসাধনীর পণ্যের প্রচারও করেছেন। ২০২১ সালে দেশে লকডাউন চলাকালীন দেবিতার কোম্পানি নিজস্ব সুগন্ধি তৈরি করে। তবে ওই সুগন্ধি সবার জন্য নয়। প্রচারে দেবিতা জানিয়েছিলেন, এই সুগন্ধি বানানো হয়েছে ব্যবসার জগতের নারী বসদের জন্য।


গোটা বিশ্বে সেই সুগন্ধি বিক্রি করে যে আয় হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাই দেশে কোভিডের চিকিৎসায় দান করেছিলেন দেবিতা। দেবিতা বরাবরই নারীবাদী। তা নিয়ে সরবও হয়েছেন বরাবর। তিনি মনে করেন, শিল্পের দুনিয়ায় আরও বেশি প্রতিষ্ঠানের বস বা সিইও হওয়া উচিত নারীদেরই। তার মতে, বিশেষ করে ভারতে এমনটা করা গেলে অর্থনীতির এক অন্য স্তরে উত্তরণ হবে। দেবিতার অন্য একটি নামও আছে। ভারতীয় বাণিজ্য মহলে অনেকেই তাকে ডাকেন ‘ভারতের ইভাঙ্কা ট্রাম্প’ বলে। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় মেয়ে তথা আমেরিকার সাবেক ফার্স্ট ডটার ইভাঙ্কার সঙ্গে চেহারায় বা চরিত্রে অবশ্য কোনো মিল নেই দেবিতার।


তবে দেবিতার কথায়, তিনি ট্রাম্পকে একজন ভালো বাবা মনে করেন। আর ‘ভারতের ইভাঙ্কা’ নামটি তাকে দিয়েছিলেন স্বয়ং ট্রাম্পই। এমন দাবির জন্য অবশ্য দেবিতাকে কম কথা শুনতে হয়নি। টুইটারে তার এমন পোস্টের জন্য নিন্দকেরা বলেছেন, আদেখলামির সীমা থাকা উচিত। দেবিতা যদিও তার সমালোচকদের পাত্তা দেননি। তাদের সমালোচনা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। একবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে ছিল একটি ছবি। ট্রাম্পের সঙ্গে দেবিতার। দেবিতার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প অন্য হাতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করে ‘থাম্বস আপ’ করছেন। বিজ্ঞাপনে ওই ছবির পাশে বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘অভিনন্দন মিস্টার প্রেসিডেন্ট’। এই বিজ্ঞাপনের জন্যও সমালোচিত হতে হয় দেবিতাকে। পাল্টা দেবিতাও টুইট করে বুঝিয়ে দেন এই সব সমালোচনায় পাত্তা দিতে তার বয়েই গেছে। বরং আরও এক ধাপ এগিয়ে তার সঙ্গে ট্রাম্পের সুসম্পর্কের খতিয়ান দিয়েছিলেন তিনি। যা দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে গিয়েছিলেন সমালোচকেরা।


টিভিতে নেটফ্লিক্স এবং ইউটিউব দেখার পরিকল্পনা এবং রিমোটে তার জন্য আলাদা বোতাম থাকা ফোরকে টেলিভিশন ২০১৬ সালে এনেছিল দেবিতার টিভি সংস্থা। সেই সময় ভারতের এই তরুণী শিল্পপতি বলেছিলেন, ‘‘আমি যেকোনো পণ্য তৈরির করার সময় নিজেকে গ্রাহকের জায়গায় বসিয়ে দেখি। আমি যদি কারও সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই, আমি তার কাছে পৌঁছে যাব। এ ব্যাপারে একবারও দ্বিধা করব না। ব্যবসা করতে এলে অকারণ আত্মসম্মানবোধ সরিয়ে রাখতে হয়।’’ নিজের সংস্থার বস হিসেবেও গর্ব করতে ভালবাসেন দেবিতা। বাবার সংস্থায় কর্মরত তরুণী দেবিতা নাকি একবার বলেছিলেন, ‘‘বসের মেয়ে হওয়ার জন্য আমি ক্ষমা চাইতে পারব না।’’

তবে এসবের বাইরেও এক অন্য দেবিতা রয়েছেন। ওড়িশি নাচের একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নর্তকী এই ‘মডেল সিইও’। নিজেকে ফ্যাশন সচেতন বলতেও পছন্দ করেন। ডিজাইনার পোশাক পরতে পছন্দ করেন। ইনস্টাগ্রামে নিজের সাজগোজের ছবিও দেন। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অনুরাগী আছে তার। বুদ্ধিমত্তায় সাধারণের থেকে নাকি অনেক এগিয়ে তিনি। ইন্টারন্যাশনাল হাই আইকিউ মেনেসা সোসাইটির সদস্য দেবিতা। আবার স্বাস্থ্য সম্পর্কেও বেশ সচেতন। নিজেকে ফিট রাখতে নিয়মিত যোগাসন করেন। প্রতিদিন রাতে জিম এবং প্রতি রোববার নাচের ক্লাসে যাওয়ার রুটিন কোনও দিন বদলায় না তার। এখন ৪২-এর কোঠায় পা রেখেছেন। বিয়ে করেননি। আপাতত নিয়মানুবর্তীতার সঙ্গে প্রিয় বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন এই ভারতীয় কন্যা। সূত্র : এবিপি

বেলী / হককথা