ভয়ংকররূপে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গুগল ছাড়লেন এআই ‘গডফাদার’
- প্রকাশের সময় : ০২:২৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
- / ২৮ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৭৫ বছর বয়সী হিনটন নিউইয়র্ক টাইমসকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের উন্নয়নে তার যা কাজ, সে জন্য এখন তার অনুশোচনা হচ্ছে। সারা জীবন কাজ করেছেন কৃত্রিম মেধা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) নিয়ে। পেয়েছেন একাধিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ‘গডফাদার’ হিসেবে সবাই তাকে চেনে। তবুও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপকারিতা এবং ঝুঁকি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলার জন্য গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন হিন্টন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা নিয়েই ভয় পাচ্ছেন তিনি।
২০১৮ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুগান্তকারী কাজের জন্য ‘ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন। কিন্তু এখন তার দাবি, তিনি যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন তার পরিণতি ভয়ংকর। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, এআই চ্যাটবটগুলো এখন এমন বিপজ্জনক মাত্রায় বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে, যা রীতিমতো আতঙ্ক জাগানোর মতো। এখনো তারা আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমার মনে হয়, শিগগিরই তারা আমাদের ছাড়িয়ে যাবে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হিন্টন জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করছে সমাজের একাংশ। ভুয়া ছবি এবং খবর তৈরিতে যেভাবে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হিন্টন। তিনি জানান, এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সবাই নতুন নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন। ফলে এর অপব্যবহারকে ঠেকানো অসম্ভব হয়ে উঠছে।
ব্রিটিশ-কানাডিয়ান কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী জেফ্রি হিনটন এখন মনে করছেন, মানুষের মস্তিষ্ক যতটা তথ্য ধারণ করতে পারে, শিগগিরই তাকে ছাড়িয়ে যাবে চ্যাটবট। ফলে বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই বাড়তে পারে। চাকরির অভাব দেখা দিতে পারে। কৃত্রিম মেধা বিশ্বকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কোনটা ‘সত্য’ আর কোনটা ‘মিথ্যা’ তা খুঁজে বের করা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্রিটিশ-কানাডিয়ান কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী জেফ্রি হিনটন এক দশক আগে তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা গুগলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কেন এত দিন পরে গুগল ছাড়লেন সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে তিনি টুইটারে টুইট করে জানান, ‘আমি গুগল ছাড়লাম এ জন্য, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তৈরি হতে চলা সংকটজনক পরিস্থিতি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি। এর প্রভাব যেন গুগলে না পড়ে, তাই আমি সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেছি। তবে আমাকে স্বীকার করতেই হবে, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল অত্যন্ত দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে।’
আরোও পড়ুন । চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম ফোনালাপ জেলেনস্কির
নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে হিনটন সেইসব ‘দুষ্ট লোকের’ বিষয়েও সতর্ক করেছেন, যারা খারাপ কাজে এআই ব্যবহার করতে পরে। ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি সবচেয়ে খারাপ হয়, তখন এমনটা হতে পারে। মনে করুন, (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিনের মতো বাজে লোকদের কেউ রোবটদের নিজস্ব লক্ষ্য ঠিক করার ক্ষমতা দিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত সেই নিজস্ব লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াবে এ রকম– ‘আমার আরো ক্ষমতা চাই।’
যেরকম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমরা তৈরি করছি, তা ধরনের দিক দিয়ে আমাদের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তিনি আরো বুঝিয়ে বলেন, ধরুন আপনার দলে ১০ হাজার লোক আছে, তাদের মধ্যে কেউ একজন যখন নতুন কিছু শিখছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলের বাকি সবাই সেটা শিখে ফেলছে। আর এভাবেই এ চ্যাটবটগুলো যেকোনো মানুষের চেয়ে এত বেশি জানতে পারছে। এ বিষয়ে গুগলের প্রধান বিজ্ঞানী জেফ ডিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এআই-এর দায়িত্বশীল ব্যবহারের বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কী ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি, সেই সঙ্গে আমরা উদ্ভাবনও চালিয়ে যাচ্ছি।’ সূত্র : আনন্দবাজার, বিবিসি
বেলী / হককথা