ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন ৭ মে : লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি : এক ঝাঁক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী
- প্রকাশের সময় : ০৮:০২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মে ২০১৫
- / ৯২৭ বার পঠিত
লন্ডন: যুক্তরাজ্যে ৫৫তম জাতীয় নির্বাচন ৭ মে বৃহস্প্রতিবার। এ নির্বাচনে কোন দল বিজয়ী হবে সে বিষয়ে যথাযথ কোন পূর্বাভাস দিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। তবে তারা বলছেন, এবারের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। প্রধান দু’দল লেবার পার্টি ও রক্ষণশীল কনজারভেটিভ পার্টি খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকতে পারে। ফলে এবার যুক্তরাজ্যে গঠিত হতে পারে জোট সরকার। পার্লামেন্ট হবে ঝুলন্ত। এর ফলে ছোট ছোট যেসব দল রয়েছে তাদের কদর বাড়বে। কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, জোট সরকার গঠন করতে সমঝোতার বিষয়টি হবে খুব জটিল। এ জন্য আগামী বড় দিনের আগেই হতে পারে আরেকটি নির্বাচন- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল ডেমক্রেট পার্টির প্রধান নিক ক্লেগ। বিবিসির মতে, জনমত জরিপের ফল যদি ভুল না হয়, তাহলে বৃটেনে আজকের নির্বাচনে কোন দলই হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এর মানে, নির্বাচনে কোন দলকেই সুসপষ্টভাবে বিজয়ী বলা যাবে না। কারা সরকার গঠন করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন- এসব প্রশ্ন নির্বাচনী ফল প্রকাশের পরও অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে। বলা হচ্ছে, গত কয়েক দশকের মধ্যে বৃটেনে এ রকম অনিশ্চয়তায় ভরা নির্বাচন আর হয়নি।
যুক্তরাজ্যে সেখানকার প্রায় ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় ৪ হাজার প্রার্থী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। এজন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিতে পড়েছে সাড়া। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বিরোধী লেবারদের। কিন্তু কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন পাবে না, এমনটিই অনুমান করছেন বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক। সেক্ষেত্রে ২০১০ সালের মতো এবারও জোট সরকার গঠনের দিকেই এগোতে হবে দলগুলোকে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা ও বিবিসি।
এদিকে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট দলগুলোর সম্ভাবনা এবার অনেক বেশি। এর বাইরে স্কটল্যান্ডের স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও পেতে পারে স্কটল্যান্ডের বিপুল পরিমাণ আসন। ফলে এবারের নির্বাচনী সমীকরণ কিছুটা ভিন্ন। মোট ৬৫০টি আসনের হাউস অব কমন্সের (যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট) ৫৩৩টি আসনই পড়েছে ইংল্যান্ডের ঘরে। এছাড়া স্কটল্যান্ডে ৫৯টি, ওয়েলসে ৪০টি, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ১৮টি আসন রয়েছে। যে কোন দলের এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ৩২৬টি আসন। সেটি কোনো দলই পাবে না বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ফলে অবধারিতভাবে জোট সরকার গঠনের বিষয়টিই সামনে চলে আসবে।
এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এবারে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও নেতিবাচক আক্রমণ ছিল বেশি। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন প্রথম ছুড়েছেন গোলা। লেবার দলের প্রধান এড মিলিব্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মিলিব্যান্ড নিজের ভাইয়ের পেছনে ছুরিকাঘাত করে লেবার নেতা হয়েছেন। এখন তিনি যুক্তরাজ্যের পেছনে ছুরিকাঘাত করে প্রধানমন্ত্রী হতে চান! এর আগে মিলিব্যান্ড নিজেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। তার দাবি, লিবিয়ায় যুদ্ধপরিবর্তী সমস্যা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের ব্যর্থতার দরুনই লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের আগমন বাড়ছে।
এবার সরকার গঠনে জোট গঠনও অনেক জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী ও লিব-ডেম দলের প্রধান নিক ক্লেগ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সমঝোতা না হওয়ার ফলে এ বছরই আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। তবে কনজারভেটিভদের সঙ্গে লিবডেমের জোট গঠনের সম্ভাবনা বেশি। লেবারদের সঙ্গেও দলটির জোটগঠনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এছাড়া এসএনপি’র সঙ্গেও জোট গঠন করতে পারে লেবার। যদিও স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষের এসএনপি’র সঙ্গে জোট গঠন করবে না বলে জানিয়েছে লেবার সহ ইংল্যান্ডের অন্যান্য দল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লেবারের সঙ্গে এসএনপির জোটগঠন অসম্ভব নয়। কেননা, দল দুটির মতাদর্শে খুব একটা পার্থক্য নেই।
তবে এসবের বাইরে এবারের নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)। স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোটের পর দলটির জনপ্রিয়তা ব্যাপক বেড়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের ৬০টি আসনের মধ্যে এসএনপি পেয়েছিল মাত্র ৬টি। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এবার দলটি সর্বোচ্চ ৫০টি আসনও পেয়ে যেতে পারে। গত নির্বাচনে স্কটল্যান্ডে আধিপত্য ছিল লেবার দলের। দলটি সেখানে ৪১টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। এমনকি এসএনপি নেতা নিকোলা স্টার্জিওন বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছেন। এ অবস্থায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলকে হটিয়ে এসএনপি হয়ে উঠতে পারে বৃটেনের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। কিন্তু স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষের এ দলটিকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই ইংল্যান্ডের কোন দলই। এছাড়া ক্রমাগতই রক্ষণশীল ও ডানপন্থিদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে এসএনপি। ডানপন্থি বলে পরিচিত ডেইলি টেলিগ্রাফ ও ডেইলি মেইলে চলছে এসএনপি ও স্টার্জিওনের বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ। তবে এটি ইংল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের স্কটিশ-বিরোধী মনোভাব বলে প্রতীয়মান হতে পারে স্কটিশ ভোটারদের কাছে। এছাড়া এর ফলে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনটিই বলছিলেন কয়েকজন পর্যবেক্ষক। এমনকি অনেক স্কটিশই এমন দাবি করে ফেলেছেন। অপরদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিরোধী ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি (ইউকিপ) আগের তুলনায় কিছুটা ভাল ফল করতে পারে এবার। বিশেষ করে কনজারভেটিভদের ভোটে ভাগ বসাতে পারে দলটি।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা সরকার গঠন করলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থানের পথ ত্বরান্বিত হতে পারে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেবাররা জয় পেলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
জনমত জরিপ: ইউ-গভ এর জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে সর্বশেষ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, লেবার দল সর্বোচ্চ ২৭৬টি আসন পাবে। এর পরেই থাকবে কনজারভেটিভ দল। তাদের অনুমিত আসন সংখ্যা ২৭২টি। এসএনপি পাবে ৫২টি আসন। লিবারেল ডেমোক্রেট দল পাবে মাত্র ২৪ টি আসন। অন্যান্য দল পাবে ২৬টি আসন।
নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলো কি: অর্থনীতি, ইমিগ্রেশন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এনএইচএস- বলতে গেলে এই তিনটি ইস্যুতেই বেশি বিতর্ক চলছে এবারের নির্বাচনে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বৃটিশ অর্থনীতির অবস্থা এই মুহূর্তে ভাল- কনজারভেটিভরা সেই সাফল্যের ওপর জোর দিচ্ছে। লেবার পার্টি দেখাতে চাইছে কনজারভেটিভরা আরেক দফা ক্ষমতায় গেলে বৃটেনে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে। আর ইউকিপ-এর মতো দক্ষিণপন্থি দল ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান নিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। সরকারি কৃচ্ছসাধন ও নিউক্লিয়ার ব্যয় নিয়েও সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।
যদি কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তখন কি হবে: এক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের মধ্যে শুরু হবে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা আর দরকষাকষি। সরকার গঠনের সম্ভাব্য দাবিদার বড় দুই দল কনজারভেটিভ আর লেবার পার্টি নেতারা জোর চেষ্টা চালাবেন ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের। ধরে নেয়া যেতে পারে ডেভিড ক্যামেরন বা এড মিলিব্যান্ড- এ দুজনের একজনই হবেন পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী।
পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দলটিই কি সরকার গঠনের সুযোগ পাবে: না, একদম নিশ্চিত করে এ কথা বলা যাবে না। ধরা যাক কনজারভেটিভরা তিনশ’ আসন জিতলো, তাদের এখন আরও ২৬টি আসন দরকার। সেক্ষেত্রে অন্য দলের সমর্থন তাদের দরকার হবে। তারা যদি সেই সমর্থন না পায়, তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটিও সরকারে চলে আসতে পারে অন্য ক্ষুদ্র দলগুলোর সমর্থন নিয়ে। লেবার পার্টির ক্ষেত্রে এরকম সম্ভাবনা প্রবল যদি তারা স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে রাজি হয়। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনই প্রথম চেষ্টা চালাবেন তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের। যদি ব্যর্থ হন তখন তিনি পদত্যাগ করে সরে দাঁড়াবেন, সেটাই রীতি। তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের প্রধান হিসেবে এড মিলিব্যান্ড তার জোট সঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাতে পারেন।
কোন দলের সঙ্গে কাদের জোট হতে পারে: বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ক্ষমতায় আছেন তাদের জোটসঙ্গী লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টির সমর্থনে। এখন এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভরা এবং লিবারেল ডেমক্রেটরা মিলে ৩২৬ বা তার চেয়ে বেশি আসনে জেতেন, তাহলে আশা করা যায়, তাদের মধ্যে আবারও জোট হতে পারে। কিন্তু আশঙ্কা হচ্ছে লিবারেল ডেমক্রেটদের আসন এবার অনেক কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কনজারভেটিভদের জন্য আরও একটি/দুটি ক্ষুদ্র দলের সমর্থন দরকার হতে পারে। এবারের নির্বাচনে ইউকিপ বেশকিছু আসন জিতবে বলে আশা করা হয়। কিন্তু ইউকিপের মতো কট্টর রক্ষণশীলরা যদি সরকারের অংশ হয়, লিবারেল ডেমোক্রেটরা সেই সরকারে যোগ দেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। লেবার পার্টির জন্য জোট গঠনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুই সহযোগী দল হচ্ছে লিবারেল ডেমোক্রেট এবং এসএনপি। অংকের হিসেবে লেবার, লিবডেম জোটের সম্ভাবনা কম, কারণ দুই দল মিলে ৩২৬ টি আসনের হিসাব মেলানো কষ্টকর। এর চেয়ে অনেক সহজ লেবার-এসএনপি জোট। কিন্তু এসএনপির সঙ্গে লেবার পার্টি জোট গঠনের সম্ভাবনা আগে থেকেই নাকচ করে দিচ্ছে।
যদি কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারে, তখন কি হবে: সেক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প আরেকটি নির্বাচন। এরকম আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টির নেতা উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের ধারণা, নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যেই এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। সরকারকে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে পদত্যাগ করতে হয় এ বছরই ক্রিসমাসের আগে বৃটেনকে আরেক দফা নির্বাচনে যেতে হবে।
সুদূর ব্রিটেনের ৭ মে’র পার্লামেন্টর নির্বাচনের ঢেউ এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশেও। কারণ এবারের নির্বাচনে লড়ছেন এক ঝাঁক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। যারা নিজগুণে ব্রিটেনে নেতৃত্বের লড়াইয়ে নেমেছেন। প্রথবারের মতো সর্বোচ্চসংখ্যক ১১ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন দল থেকে। এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। আছেন লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলীও। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১১ জনের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে সাতজন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিবডেম) থেকে তিনজন ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যে কারণে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে ভিন্ন উন্মাদনাও।
এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করার। লন্ডনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি আসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে টিউলিপ সিদ্দিক এবং ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে লেবার দলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রূপা হক। টিউলিপ বিখ্যাত কিংস কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রীধারী। দীর্ঘদিন লেবার পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত। আসন দুটিতে জয় ছিনিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে লেবাররা। গতবার হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলের এমপি ছিলেন গ্লেন্ডা জ্যাকসন। লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে লেবার দলের প্রার্থী রূপা হক কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক।
২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারো একই আসনে প্রার্থী তিনি। লেবার পার্টি থেকে লন্ডনের অদূরে বেকেনহাম আসনে প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে জন্ম নেয়ার পর যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠা মেরিনা আহমদ। লন্ডনের কাছের ওয়েলউইন অ্যান্ড হার্টফিল্ড আসনে লেবার দলের আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। তিনি লড়ছেন কনজারভেটিভ দলের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী গ্রান্ট শ্যাপের বিরুদ্ধে।
নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসনে লেবার পার্টির আরেক প্রার্থী আমরান হোসাইন। চিকিতৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা আমরানের জন্ম যুক্তরাজ্যেই। লুটনের রিগেইট অ্যান্ড বেনস্ট্যাড আসনে লেবার দলের প্রার্থী হয়েছেন আলী আকলাকুল।
লিবারেল ডেমোক্রাটস (লিবডেম) থেকে মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন তিন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী। এরা হলেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, আশুক আহমদ ও মোহাম্মদ সুলতান। প্রিন্স সাদিক লড়ছেন নর্থ হ্যাম্পটন সাউথ আসনে। তিনি ২০০৭ সালে নর্থ হ্যাম্পটনশায়ার কাউন্সিল নির্বাচনে বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী কাউন্সিলর। আশুক আহমদ প্রার্থী হয়েছেন লুটন সাউথ আসনে। আর ওয়েলসের আর্ফন আসনে লিবডেমের অপর প্রার্থী হলেন মোহাম্মদ সুলতান।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একমাত্র বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মিনা রহমান। তিনি লড়ছেন লন্ডনের বার্কিং আসনে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার দলের মার্গারেট হজ শক্ত প্রার্থী। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি এ আসনের এমপি। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা মিনা চাকরি করেন আবাসন সংস্থার ব্যবস্থাপক হিসেবে।
তাদের বাইরে স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশি সুমন হক। যদিও তিনি লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে আদালতে হাজিরা দেয়ায় তাঁর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় লেবার পার্টি।
এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে। লেবার পার্টি অভিবাসীদের প্রতি একটু বেশি সহানুভূতিশীল হওয়ায় তাদের প্রতি বাংলাদেশীদের আগ্রহ বেশি। একইসঙ্গে পার্লামেন্টে বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে বলেও আশাবাদী তারা।
এবারের নির্বাচনে প্রধান তিনটি দল থেকে ১১ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতসহ এশীয় বংশোদ্ভূত মোট ১০২ জন এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ৩৬, লেবার ৩৪ ও লিবডেম ৩২ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এসব প্রার্থীর বেশিরভাগই ভারতীয় এবং পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত। গত মেয়াদে ভারতীয় ও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত আটজন করে এমপি ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে।(দৈনিক মানবজমিন/ইত্তেফাক)