বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ও মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রা সংস্কার জরুরি : বিশ্বব্যাংক
- প্রকাশের সময় : ১২:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪
- / ৯৮ বার পঠিত
কোভিড-১৯ মহামারী থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অর্থপ্রদানে ভারসাম্যের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট হালনাগাদে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে জরুরি মুদ্রা সংস্কার এবং একক বিনিময় হার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হবে। বৃহত্তর বিনিময় হারের নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, দেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতির মূলনীতি অতীতের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে।’দ্রুত ও শক্তিশালী রাজস্ব, আর্থিক খাত ও আর্থিক সংস্কার বাংলাদেশকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি পুনরায় ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারে।
বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলেছে, অবকাঠামো ও মানব মূলধনে বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপসহ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সহনশীলতা গড়ে তুলতে কাঠামোগত সংস্কার মূল চাবিকাঠি হবে।
ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করেছে। একইসাথে কঠোর তারল্যের শর্ত, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন থেকে উদ্ভূত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও ধীর হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগে ব্যাপক মন্দার বিষয়টি প্রকাশ পায়।ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) অনুপাত বেশি এবং শিথিল সংজ্ঞা ও প্রতিবেদনের মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং খাতের চাপ কমছে। ২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমানো হয়েছে এবং চলতি অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
প্রতিবেদনের সহযোগী অংশে ‘জবস ফর রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছর দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি মূলত ভারত ও বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। সেই সাথে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধারও। কিন্তু এই দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি বিভ্রান্তিকর বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি এখনো প্রাক-মহামারি স্তরের নিচে রয়েছে এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল।
ক্রমাগত কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো টেকসই প্রবৃদ্ধিকে হ্রাস করার হুমকি দেয়, এই অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু প্রভাবের প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতাকে বাধাপ্রাপ্ত করে। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দ্রুত মন্থর হয়ে পড়েছে এবং দ্রুত বর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই অঞ্চলে যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকলেও ভঙ্গুর রাজস্ব অবস্থা ও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু অভিঘাত হতাশা তৈরি করেছে।’
এতে বলা হয়, ‘প্রবৃদ্ধি আরো সহনশীল করতে দেশগুলোকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।’ দক্ষিণ এশিয়ার কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ছাড়িয়ে গেছে। কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার অংশ ২০০০ সাল থেকে হ্রাস পাচ্ছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অঞ্চলে এই হার ৭০ শতাংশ। এটি একমাত্র অঞ্চল যেখানে গত দুই দশকে কর্মক্ষম পুরুষদের হার হ্রাস পেয়েছে এবং এই অঞ্চলে কর্মক্ষম বয়সের নারীদের কর্মসংস্থান সবচেয়ে কম অংশ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া তার জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশকে পুরোপুরি পুঁজি করতে এই মুহূর্তে ব্যর্থ হচ্ছে। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যদি এই অঞ্চলে অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ যোগ হয়, তবে এর ফলাফল ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।’ সূত্র : ইউএনবি