বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটি : জাতিসংঘ
- প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩
- / ৯১ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব জুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ, আফগানিস্তান সংকট এবং সুদানের গৃহযুদ্ধের কারণে শরণার্থীর মোট সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এদের অনেকে অভ্যন্তরণীভাবে নিজ দেশেও বাস্তুচ্যুত। বুধবার ইউএনএইচসিআরের সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর রেকর্ডসংখ্যক মানুষ বাস্তুহারা হয়। যুদ্ধ-সহিংসতায় নিজ দেশ ও ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ।
ইউএনএইচসিআর তার গ্লোবাল ট্রেন্ডস ইন ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট নামক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসেছে, গত বছরের শেষ নাগাদ ১০ কোটি ৮৪ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২১ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ১ কোটি ৯১ লাখ বেশি। ইউক্রেন ও সুদান সংঘাতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু নতুন করে যোগ হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ১১ কোটিতে পৌঁছেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে সহিংসতা বাড়ছে। এতে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছাড়া হচ্ছে। যুদ্ধ, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।
জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এমন একটা প্রতিবেদন হচ্ছে, যার জন্য পুরো বিশ্বকেই অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির সমাধান এতই কঠিন হয়ে উঠছে যে, তার সমাধান তো দূর টেবিলে আলোচনার জন্যই তোলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মেরুকরণ প্রবল এমন একটি বিশ্বে আছি আমরা, যেখানে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা যাবতীয় মানবিক ইস্যুকে খারিজ করে দিচ্ছে ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে মোট শরণার্থী এবং যাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দরকার তাদের প্রায় অর্ধেকই এসেছে তিনটি দেশ থেকে। দেশগুলো হচ্ছে সিরিয়া, ইউক্রেন ও আফগানিস্তান। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মকানুন এবং অনেক জায়গা থেকে তাদের ফেরত পাঠানোয় উদ্বেগ জানিয়ে সবার সহায়তা আশা করেন তিনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় সংঘাতের আগের দুই দশক বিশ্ব জুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও আন্তর্জাতিক শরণার্থীর সংখ্যা মোটামুটি ৪ কোটিতে স্থির ছিল বলে জানাচ্ছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন। পরের এক যুগে প্রতি বছর এই সংখ্যা বেড়েছে; বাড়তে বাড়তে এখন তা ২০১১-র প্রায় তিন গুণে এসে পৌঁছেছে। এখন গড়ে বিশ্বের প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা একজনেরও বেশি, বলছে ঐ প্রতিবেদন। এসবের জন্য সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন গ্রান্ডি। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মকানুন এবং কোথাও কোথাও তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন গ্রান্ডি। তবে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের মূলনীতি অনুসরণে দেশগুলোর মধ্যে শিথিলতার মাত্রা বাড়তে দেখছি আমরা, এমনকি ঐ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অনেক দেশের মধ্যেও এমনটা দেখা যাচ্ছে । গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিষয়ে দায়িত্ব ভাগাভাগির চুক্তিতে পৌঁছেছেন, এরকম বেশকিছু অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি গ্রান্ডি।
আরোও পড়ুন। গ্রিসে নৌকা উল্টে মৃত্যু ৫৯ অভিবাসীর
তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে উদ্বেগ আছে, তা সত্ত্বেও (ইইউ মন্ত্রীদের চুক্তি) এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি আমি। ইউরোপিয়রা কোনো এক বিষয়ে একমত হয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি। গ্রান্ডি কেনিয়ারও ভূয়সী প্রশংসা করেন। আফ্রিকার এই দেশটি এখন তাদের দেশে আশ্রিত ৫ লাখ শরণার্থীর জন্য নতুন সমাধান খুঁজছে; এ আশ্রিতদের মধ্যে দারিদ্র্য, খরার কারণে আফ্রিকার শিং অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা অনেকেও আছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র : রয়টার্স
সুমি/হককথা