বিমান হামলা থেকে কতটুকু ফায়দা পাবেন নেতানিয়াহু
- প্রকাশের সময় : ১১:১৯:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩
- / ৭৯ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইল ফিলিস্তিনি গ্রুপ ইসলামিক জিহাদকে নেতৃত্ব শূন্য করার লক্ষ্যে গাজায় আবারও বিমান হামলা শুরু করেছে। ১০ দিনের বেশি সময় চলা এ হামলায় ৩৩ জন ফিলিস্তিনি আহত ও জনা পঞ্চাশেক আহত হয়েছে। ইসরাইল দাবি করেছে তাদের হামলায় ইসলামিক জিহাদের চার শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইসলামিক জিহাদের রকেট ফোর্সের প্রধানও রয়েছেন। ২ মে থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলাকে ইসরাইল ইতিমধ্যেই একটি সফল অভিযান বলে বিবেচনা করছে। তাদের মতে, এবারের অভিযানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি তুলনামূলক কম হয়েছে।
ইসলামিক জিহাদের কয়েক জন প্রথম সারির নেতাকে হত্যা করাকে একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখছে ইসরাইল। পুরো দেশ যেন উৎসবের আমেজে মেতেছে। ২ মে থেকেই গাজা ও বেইত হানুনসহ কয়েকটি চেকপোস্ট বন্ধ করে দিয়েছে। হামাস অবশ্য কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের প্রতি বেসামরিক টার্গেটে আঘাত না হানার এবং জরুরি মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঘটনা যাই হোক এর ফলে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হালে পানি পেয়েছেন। পার্লামেন্টে বিরোধী দল এরই মধ্যে অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার এ যাত্রা টিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশের মধ্যে যে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা ছিল প্রায় নজিরবিহীন। নেতানিয়াহু সরকার প্রায় পতনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। জুইশ পাওয়ার দলের উগ্র ডানপন্থি নেতা বেন-জিভির অভিযান সমর্থন করা সত্ত্বেও নেসেটের (পার্লামেন্ট) অধিবেশন বর্জন করছেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার যে মতপার্থক্য চলছিল সেখান থেকে সরে আসেননি। তিনি মনে করেন না এসব করে তার সরকার টিকে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় বিমান হামলা দীর্ঘ সময় চলতে পারে। গাজা সীমান্তবর্তী ইসরাইলি নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে মিসর ও জর্দানের কর্মকর্তারা অস্ত্রবিরতির জন্য আলোচনা শুরু করেছেন।
আরোও পড়ুন । ইসরায়েল-ইসলামিক জিহাদের যুদ্ধবিরতিতে মিসরের সফলতা
ইসরাইলের কর্মকর্তারা মনে করেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে শিনবেত নিরাপত্তা এজেন্সির কাজের যথাযথ সমম্বয়ের ফলেই এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই হামলার মধ্য দিয়ে তেলআবিব এই বার্তাটিই দিল যে তারা যে কোনো ফিলিস্তিনি নেতাকে যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে মারতে পারে। ফিলিস্তিনিদের ভালো একটি হুঁশিয়ারি দেওয়া গেছে ভেবে তাদের আত্মবিশ্বাস যেন বেড়ে গেছে। ইসরাইল বলছে, তারা ইসলামিক জিহাদের কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে তাদের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই তাদের নির্মূল করতে এবার মাঠে নেমেছে। এই সংঘাতে না জড়ানোর অপর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপ হামাসকে তারা বারংবার সতর্ক করে দিয়েছে। মঙ্গলবার ইসরাইল হামলা শুরুর পর বুধবার রাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে পালটা জবাব হিসেবে রকেট ছোড়া হয়। যদিও ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপে রকেট হামলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে কিন্তু তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত নয় যে কেন ফিলিস্তিনিরা এত বিলম্বে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাল। ঘটনা প্রবাহ যে ইসরাইলের পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে সেটা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে বর্তমান বিমান হামলার ফলে মিসরের সঙ্গে ইসরাইলের কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরির আভাস পাওয়া গেছে। মিসর ইতিপূর্বে গাজা হামলা বন্ধে মধ্যস্থতা করেছে যেটা ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়পক্ষ মেনে নিয়েছে। মিসর মনে করে ইসরাইল এখন যা করছে তা ইতিপূর্বে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই তারা ভঙ্গ করছে। জর্দানের আকাবা ও মিসরের শার্ম আলশেখের আগে বিভিন্ন বৈঠকে তারা হামলা থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আঞ্চলিক অনেক ফিলিস্তিনি গ্রুপও ধারণা করে ইসরাইল আগে যেভাবে শক্তিমত্তা দেখাতে পারতো এখন সেটা হয়তো পারবে না। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন দেশটির নতুন সরকার গত পাঁচ মাসে নিজস্ব প্রতিপত্তি অনেকটা হারিয়েছে।
ইসরাইলের সর্বশেষ এই বিমান হামলা কি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা বলা যায়। বাস্তবে সেরকম কোনো প্রত্যক্ষ কারণও দেখা যাচ্ছে না। হামলা চালানোর ফলে নেতানিয়াহুর প্রতি জনসমর্থনের হার তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকটা বেড়েছে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকট তিনি উতরে যেতে পারবেন কি না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বিরোধী নেতা বেনি গানত্জ এখন নেতানিয়াহুর পক্ষে আছেন। কিন্তু এটি নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আসলেই সহায়তা করবে কি না। মিসরের মধ্যস্থতায় শনিবার থেকে সেখানে একটি আপাত অস্ত্রবিরতি হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
বেলী /হককথা