বিবিসি বিভাগে তল্লাশি, কী লিখেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম?
- প্রকাশের সময় : ১২:৩৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৬৪ বার পঠিত
মঙ্গলবার সকালে বিবিসির দপ্তরে আয়কর বিভাগের অফিসাররা পৌঁছানোর পর থেকেই সেই খবর ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির ওয়েবসাইট ও টিভি চ্যানেলগুলিতে লাগাতার সম্প্রচার হতে থাকে। বুধবার সকালে সংবাদপত্রগুলির মুদ্রিত সংস্করণেও বিবিসি সংক্রান্ত খবরই শীর্ষ হয়ে এসেছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া
ইংরেজি সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে যে বিবিসির দিল্লি আর মুম্বাই দপ্তরে আয়কর বিভাগের এই ‘সার্ভে’ নিয়ে বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শীর্ষ শিরোনামের নিচে ছবি সহ এই সংক্রান্ত পাঁচটি পৃথক খবর ছেপেছে তারা, যার মধ্যে একটিতে রয়েছে এই আয়কর হানা নিয়ে বিবিসির বিবৃতিও।
আয়কর বিভাগের একটি সূত্র উল্লেখ করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, এই ‘সার্ভে’র সঙ্গে “টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাক্টেড এট সোর্স), বিদেশি করের মতো বিষয়গুলি জড়িত থাকতে পারে। অনেকগুলি বিষয়ই থাকতে পারে এর মধ্যে।“ টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভারতের বিরোধী দলগুলির প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখেছে “বিবিসির ওপরে আয়কর বিভাগের কর্মকাণ্ডকে এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র যে প্রশ্ন তুলেছেন, “বিবিসি দপ্তরে হানার পরে কি ‘এ’-র ওখানেও হানা দেবে?’
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ব্যাখ্যা, মহুয়া মৈত্র তার মন্তব্যে ‘এ’ বলে যাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি গৌতম আদানি।ওই একই প্রতিবেদনে আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বৈরাচারের চূড়ায় পৌঁছে গেছেন’বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মন্তব্যের সঙ্গেই ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের উদ্ধৃতি সম্বলিত একটি ছোট প্রতিবেদনও ছেপেছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া। ‘কেউই দেশের আইনের উর্দ্ধে নয়। আমি আশা করি এই ‘সার্ভে’ শেষ হওয়ার পরে আয়কর বিভাগ সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চয়ই বিশদ তথ্য দেবে,’ মন্তব্য করেছেন ঠাকুর।
অন্য ইংরেজি সংবাদপত্রে কী লেখা হয়েছে
ভারতের আরেকটি জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন বিবিসিতে এই ‘সার্ভে’র উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা তদন্ত করে দেখা লাভ বাড়ানোর জন্য দামে গরমিল করা হয়েছে কী না; এর মধ্যে আয়করের করের সুবিধা পেয়েছে কী না তাও দেখা হচ্ছে।’
দ্যা হিন্দু তাদের প্রতিবেদনে বিবিসির দপ্তরে আয়কর হানা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছেপেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন বিবিসির দিল্লির দপ্তরে আয়কর বিভাগের তল্লাশির বিষয়টি তারা জেনেছেন।’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্যা টেলিগ্রাফ বিরাট বড় শিরোনামে বিবিসির দপ্তরে আয়কর হানা নিয়ে খবর ছেপেছে। তাদের শিরোনাম: ‘ভ্যালেন্টাইন্স ফর এ, ভেঞ্জেন্স ফর বিবিসি। এখানে এ বলতে তারা সম্ভবত আদানি গোষ্ঠীর কথা বুঝিয়েছে।
বাংলা খবরের কাগজেও শিরোনামে বিবিসি
বাংলা পত্রিকাগুলির বেশিরভাগই শীর্ষ শিরোনাম করেছে বিবিসির দপ্তরে আয়কর হানা নিয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম পাতাতেই খবরটি ছাপলেও সেটি পাতার নীচের দিকে ছাপা হয়েছে। তাদের খবরের শিরোনাম এরকম : ‘বিড়ম্বনা তথ্যচিত্রের পাল্টা কি আয়কর হানা, প্রশ্ন’।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “কর ফাঁকি সংক্রান্ত সমীক্ষার জন্য ওই অভিযান চালানো হয়েছে বলে আয়কর দফতর দাবী করলেও বিরোধীদের বক্তব্য, এ দেশে এখন সরকারের সুরে সুর না মেলালে রাজরোষের শিকার হতে হবে সংবাদমাধ্যমকেও। আজকের হানায় সেই বার্তাই স্পষ্ট।‘ আরেকটি জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা বর্তমানেও শীর্ষ শিরোনাম ‘বিবিসির ঘরে আয়কর হানা’।
তাদের প্রতিবেদন শুরু হয়েছে এভাবে: “সেই ২০০২ সাল থেকেই ওরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পিছনে লেগে আছে। ওরা মানে বিবিসি, তথ্যচিত্র বিতর্কের জেরে মোদী সরকারের প্রধান চক্ষুশূল। মঙ্গলবার এক সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তখন সকাল ১০টা। ঠিক দেড় ঘণ্টার মধ্যে বিবিসির দরজায় কড়া নাড়ল আয়কর দপ্তর।“
টাইমস অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বাংলা দৈনিক এই সময় লিখেছে, ‘গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে তথ্যচিত্র বিতর্কের মধ্যেই মঙ্গলবার আচমকা বিবিসি-র দিল্লি ও মুম্বাইয়ের অফিসে আয়কর হানা!’ প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে ,’বাজেয়াপ্ত করা হয় সাংবাদিকদের ফোন, ল্যাপটপ। আন্তর্জাতিক করদান এবং ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সিল করে দেওয়া হয় দুটি অফিস।’ ‘তবে বিবিসি কর্তৃপক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত কোনও অভিযোগ না করেই জানিয়েছেন, আয়কর আধিকারিকদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন তারা,’ লিখেছে এই সময় পত্রিকাটি।