‘বিপজ্জনক’ খেলায় পুতিন
- প্রকাশের সময় : ০৬:২৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২
- / ২৩ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ শনিবার (১ অক্টোবর) পর্যন্ত টানা ২২০ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির মধ্যে সংঘাত। এতে দুইপক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের মাধ্যমের সেখানে পুতুল সরকার বসানোর বাসনা নিয়ে পুতিন ইউক্রেনে যে আগ্রাসন শুরু করেছিলেন তা এখন পর্যন্ত অধরা। উল্টো দেশটি যে ইউক্রেনে প্রবল জনবল সংকটে ও নানা ব্যর্থতায় জর্জরিত তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে দাবি পশ্চিমাদের।
তারই একটি উদাহরণ হচ্ছে গত ২১ সেপ্টেম্বর পুতিন আংশিক সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে তিন লাখ সেনা ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের জন্য পাঠানো হবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে তাদের আগ্রাসনকে ‘বিশেষ অভিযান’ হিসেবে বলে আসছে। এই সেনা সমাবেশের ঘোষণা ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের আরেক বাজি ধরা। একই সঙ্গে পুতিন হুমকি দেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড রক্ষা করতে প্রয়োজন হলে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন।
২১ সেপ্টেম্বরের ভাষণে পুতিন বলেন, ‘এটি কোনো ধাপ্পাবাজি নয়। যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করছে, তাদের এটা জেনে রাখা উচিত, হাওয়া তাদের দিকে ঘুরে যেতে পারে।’ এদিকে পুতিনের সেনা সমাবেশের ঘোষণার পর থেকে রাশিয়াজুড়ে দেশটির বহু নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা প্রধান গত বৃহস্পতিবার এক সম্ভাব্য পরিসংখ্যানে জানান, ধারণা করা হচ্ছে, পুতিনের ঘোষণার মাত্র সাত দিনে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি নাগরিক রাশিয়া ছেড়ে পালিয়েছে। এছাড়া পুতিনের ঘোষণার পর দেশটির অনেকে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে। ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলদারিত্বে বিশ্বব্যাপী নিন্দাইউক্রেনে রাশিয়ার দখলদারিত্বে বিশ্বব্যাপী নিন্দা এছাড়া যুদ্ধের মোড় বদলাতে ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করে সেখানকার রুশপন্থী কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া গণভোটে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে অবৈধভাবে দখল করা আরও চারটি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেন। মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, ‘আজ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে আরও চারটি অঞ্চল যোগ হয়েছে।’
রুশ এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘যে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল, অর্থাৎ পূর্বে লুহানস্ক ও দোনেতস্ক এবং দক্ষিণে জাপোরিঝজিয়া ও খেরসনকে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে সেই অঞ্চলের মানুষ তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন।’ পুতিন আরও বলেন, ‘এই ফলাফল আমাদের জানা, ভালোভাবেই জানা, মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা তাদের একমাত্র সিদ্ধান্ত।’
বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে ইউক্রেনে যুদ্ধের তীব্রতা আরও ভয়াবহ পথে। পুতিনের এমন সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘ প্রধান পুতিনের এমন পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার এই পদক্ষেপ সংঘাতের তীব্রতা আরও বাড়ালো।
এদিকে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ডই রাশিয়ার হতে দেবে না তারা। এমনি ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলে যাওয়া ক্রিমিয়া অঞ্চলও পুনর্দখল করবেন।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, নেভার নেভার নেভার, অর্থাৎ কোনো মতেই তারা এটা মেনে নেবেন না। জাতিসংঘের মহাসচিবও বলেছেন, ‘ইউক্রেনের এই ভূমি দখল অবৈধ।’এছাড়া শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনের চার অঞ্চল নিজেদের করে নেওয়ার ঘোষণার পর ভ্লাদিমির পুতিনের বেপরোয়া হুমকিতে ভয় পাবে না যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের চার অঞ্চল রুশ ভূখণ্ডের বলে ঘোষণা দেওয়ার পর পুতিন হুমকি দিয়েছেন, এসব অঞ্চল রক্ষায় প্রয়োজনে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন। পুতিন ঘোষণা দেন, এসব অঞ্চল রাশিয়ার চিরকালের থাকবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলো জানিয়েছে, তারা এটি হতে দেবে না। তাই ইউক্রেনে যুদ্ধ আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। পুতিন বিপজ্জনক খেলা খেলছেন বলে শঙ্কা তাদের।
এছাড়া বাইডেন বলেন, ন্যাটো ভূখণ্ডের প্রতি ইঞ্চি রক্ষা করতে আমেরিকা তার মিত্রদের নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত। পুতিন, আমি যা বলছি তাতে ভুল বুঝবেন না, প্রতি ইঞ্চি মানে প্রতি ইঞ্চি। বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, আল-জাজিরা
হককথা/এমউএ