আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নদী নিয়ে বড় চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভারত। এ মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকেই দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হতে পারে। তবে দুই দেশেই পানি ইস্যু স্পর্শকাতর হওয়ায় সমঝোতা নিয়ে বাইরে কোনো তথ্য প্রকাশের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু।
খবরে জানানো হয়, শুধু বড় চুক্তিই নয় নদীর পানি বিষয়ক তথ্য এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো পরিকল্পনা নিয়েও জেআরসি বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আগামি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে আগস্টের শেষ সপ্তাহে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এ বৈঠকে আসাম থেকে বাংলাদেশে আসা কুশিয়ারা নদী নিয়ে একটি সমঝোতা হওয়ার শক্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পদ্মা নিয়েও বড় চুক্তি হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে একটি কূটনৈতিক সূত্র। আগামি নির্বাচনের পূর্বে এটিই খুব সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফর।
আওয়ামীলীগ সরকার তিস্তা নিয়েও একটি চুক্তির জন্য ভারতকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
তবে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এবং ২০২১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ সব পর্যায়ের যোগাযোগেই এই চুক্তির গুরুত্বের কথা জানিয়েছে। এর আগে এ নিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে সরকারের বাধার কারণেই তিস্তা চুক্তিতে দেরি হচ্ছে। তবে এখন ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি পানি বণ্টন চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত দিল্লি এবং কোলকাতার মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কে দূরত্ব থাকার কারণেই তিস্তা চুক্তি আটকে গেছে। গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে রাজ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশ-ভারত দর কষাকষির পূর্বেই মমতার সঙ্গে বৈঠক করলেন মোদি। এর ফলে অনেকেই ধারণা করছেন, পানি বণ্টনের বিষয়টিই হয়তো ছিল আলোচনার মূল লক্ষ্য।
সর্বশেষ ২০১০ সালে জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশই এবার এই বৈঠকের আহ্বান জানায়। এই সময়ের মধ্যে যদিও দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু নদী সম্পর্কিত আলোচনা হয়েছে। তবে সেগুলোকে একটি সুসঙ্গত আকার দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। জেআরসি এ জন্য উপযুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম। দ্য হিন্দুর রিপোর্টে জানানো হয়, এর সামনের বৈঠকে মূলত ইতিবাচক দিকেই ফোকাস দেয়া হবে এবং তিস্তা ছাড়াও অন্য আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া মানু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা এবং দুধকুমার নদীতে দুই দেশের মধ্যেকার সহযোগিতা জোরদার করা হবে।
এই আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব নদীর উপরে নির্ভর করে কোটি মানুষের জীবিকা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। বাংলাদেশ এসব নদীর বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আরও তথ্য চায়। দেশের মধ্যে মৎস পরিকল্পনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেআরসি বৈঠকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নদীর তথ্য আদানপ্রদানের সময়কাল বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানানো হয়েছে দ্য হিন্দুর রিপোর্টে। এতে করে বাংলাদেশ বন্যা নিয়ন্ত্রণে আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৬ সালে এর মেয়াদ শেষ হবে। দুই দেশই এখন এই চুক্তির মেয়াদ আরও বৃদ্ধিতে আগ্রহী। এ ইস্যুও আগামি বৈঠকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এসব বাদেও জলযান পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং নদী দূষণ হ্রাস নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
হককথা/এমউএ