পানামা পেপারসে গোপন নথি প্রকাশ : ৭২ রাষ্ট্র প্রধানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের তথ্য ফাঁস
- প্রকাশের সময় : ০৬:২০:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৬
- / ১০৬০ বার পঠিত
ঢাকা: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে বিশ্বের রাঘব বোয়ালরা বিভিন্ন কৌশলে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি দিয়ে নিজেদের সম্পদকে গোপন করে রাখছেন। পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার এমন এক কোটি ১৫ লাখ বা ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট ফাইলের গোপন নথি ফাঁসের পর বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ক্রাইম অব দ্য সেঞ্চুরি’ (শতাব্দীর সেরা অপরাধ)। পৃথিবীর নানান দেশের বর্তমান ও সাবেক ৭২ রাষ্ট্র প্রধান, খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়ী ও ২৯ জন ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকাভুক্ত কোটিপতিসহ প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার নাম রয়েছে ওই তালিকায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে এ ধরনের কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় তহবিল লুটেরই শামিল। গোপন নথিতে উঠে এসেছে, কীভাবে তারা কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এসব নথি ২০১০ সালে ফাঁস হওয়া আলোচিত উইকিলিকস নথি ও ২০১৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁসকৃত নথির তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশি। খবর রয়টার্স, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচার করতে, কর ফাঁকি দিতে এবং বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিতে এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি তার মক্কেলদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। এসব গোপন নথি ফাঁসে কারা জড়িত তা এখনও জানা যায়নি। তবে এসব নথি প্রথমে জার্মান দৈনিক সুদেস্ক জেইটাংয়ের হাতে আসে। পরে এগুলো সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টের (আইসিআইজে) কাছে পাঠায় পত্রিকাটি। বিবিসি ও গার্ডিয়ান, ভারতের ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসসহ বিশ্বের ১০৭টি মিডিয়া হাউসের ৩২৫ জন সাংবাদিক এবং ৭৮টি দেশ এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে।
নথিগুলোতে আরও দেখা গেছে, ২শ’ দেশ ও টেরিটরির সব মিলিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার লোকের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে ১৪০ জনের বেশি রাজনীতিবিদ। এর মধ্যে রয়েছেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, সৌদি বাদশাহ সালমান, মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পেরেসেংকো ও আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর গুনলাগসন। এছাড়া এ তালিকায় রয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। এদিকে, পানামার এসব তথ্য ফাঁসে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া, নওয়াজের সংশ্লিষ্টতায় তার পদত্যাগ চেয়েছেন দেশটির রাজনীতিবিদ পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির প্রধান ও সাবেক খেলোয়াড় ইমরান খান। এছাড়া, তথ্য ফাঁসের জালে ফেঁসে যাওয়া আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর গুনলাগসন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
শুধু রাজনীতিবিদই নন, ফাঁস হওয়া তালিকায় রয়েছে মুদ্রা পাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী, সেলিব্রেটি ও ক্রীড়া তারকাদের নামও। সেলিব্রেটিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুভি সুপারস্টার জ্যাকি চেন ও আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। এছাড়াও উয়েফা সভাপতি ও ফরাসি তারকা মিশেল প্লাতিনি ও চিলির ইভান জামরানো এবং সাবেক ফিফা কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে। এছাড়া রয়েছে অনেক ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম। এর মধ্যে ইউএসবি ও এইচএসবিসির মতো জায়ান্ট ব্যাংকও রয়েছে। নথিতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন কালো তালিকাভুক্ত ৩৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে এ তালিকায়।
এদিকে, গোপন নথি নিয়ে কাজ করেছে ভারতের অন্যতম মিডিয়া হাউস ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। আট মাসের অনুসন্ধানে ৫শ’র বেশি ভারতীয়র সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তারা, যার মধ্যে রয়েছেন বলিউড মেগা স্টার অমিতাভ বচ্চন, তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন, ভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে প্রিয়াংকা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্র, ব্যবসায়ী সামির জেলুত, ডিএলএফ ইন্ডিয়ার কেপি সিং ও আদানি গ্রুপের গৌতম আদানি।
পানামার ওই আইনি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজে’র ডিরেক্টর, জেরার্ড রাইল বলেন, গত ৪০ বছর ধরে মোসাক ফনসেকা তার দৈনন্দিন যেসব কাজকর্ম করেছে সেগুলোর নথি রয়েছে এই ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলোয়। গোপন এসব তথ্য ফাঁসকে গুরুতর অপরাধমূলক কাজ বলে মনে করছে মোসাক ফনসেকা। (দৈনিক যুগান্তর)