নিউইয়র্ক ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পরীক্ষায় নকল: ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বিবিসির চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৬৩ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের পরীক্ষায় নকল করেছে এই অভিযোগে ব্রিটেনে আসা কয়েক হাজার মূলত শিক্ষার্থীকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে যে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে, বিবিসির এক অনুসন্ধানের পর তা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিবিসি টিভির সংবাদ অনুষ্ঠান নিউজনাইট তাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য ভেতরের খবর দেওয়া একজন হুইসলব্লোয়ারের সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়েছে এবং সরকারি যেসব নথিপত্র পেয়েছে, তা থেকে তারা দেখেছে বিদেশ থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসা ব্যক্তিদের ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা নেবার সংস্থা ইটিএস-এর দাবির ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এদের ব্রিটেন থেকে বের করে দেবার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে যে ইটিএস-এর পরীক্ষা পদ্ধতি, কর্মকাণ্ড ও তাদের তথ্যের গাফিলতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
আড়াই হাজারের ওপর ভিসা-প্রত্যাশী শিক্ষার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আরও অন্তত ৭,২০০ জনকে ব্রিটেন ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ইটিএস তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে সংস্থার আয়োজিত পরীক্ষা পাশের জন্য তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। অভিযুক্ত যারা এখনও ব্রিটেনে রয়ে গেছেন, তারা এই দুর্নাম ঘোচাতে সর্বস্ব পণ করে কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
পরীক্ষায় নকল ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি ২০১৪ সালে প্রথম সামনে আনে বিবিসির প্যানোরামা নামে একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে লন্ডনের দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কথা ফাঁস করা হয়, যারা জাল পরীক্ষার একটা চক্র গড়ে তুলেছিল। তারা অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় পাশ করার সনদ দিত, যাতে তা ব্যবহার করে ভিসার আবেদন করা যায়।
সরকারের অভিযান
ওই অনুষ্ঠানের পরই এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। সরকার ইটিএস সংস্থাকে বলে শতাধিক যেসব বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রকে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সরকার চুক্তি দিয়েছে, ব্রিটেনে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সেখানে কী মাত্রায় নকল করছে বা জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে।
ইটিএস প্রতারকদের এক বিশাল তালিকা সরকারকে দেয়। কিন্তু এতে বেশ কিছু নিরাপরাধ শিক্ষার্থীর নামও ঢোকানো হয়, যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ আনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা জানার পরেও ইটিএস-এর তথ্যপ্রমাণকেই সঠিক বিবেচনা করে তাদের দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া চালায়।
লেবার পার্টির এমপি স্টিফেন টিমস্ বলছেন: “ইটিএস-এর তথ্যপ্রমাণে স্বভাবতই গলদ ছিল। তা স্বত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তথ্যের ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভর করেছে।”
বিবিসির চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ
নিউজনাইট আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ হাজির করেছে। সরকার ও ইটিএস-এর মধ্যে অতীতে এই পরীক্ষা নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই কথাবার্তা হয়েছে – তারপরেও পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে কিনা সেই তদন্তের ভার কেন এই সংস্থাকে দেয়া হলো, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে অনুষ্ঠানে।
যে সাংবাদিকরা পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, তারাই নতুন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বিবিসি জানাচ্ছে:
প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা প্রথম ফাঁস হওয়ার প্রায় দুবছর আগেই ইটিএস-এর সাবেক এবং বর্তমান কর্মীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সংগঠিত জালিয়াতি চক্র সম্পর্কে ব্যাপক তথ্যপ্রমাণ পাবার কথা জানিয়েছিলেন
তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারীদের বলেছিলেন এসব জাল পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার তাদের উদ্যোগে ম্যানেজাররা বাধা দিচ্ছেন, কারণ ইংরেজি পরীক্ষার ফি থেকে আয় কমে যাবে বলে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে
সেসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে, গোটা ব্যাপারটা সম্পর্কে তাদের পুরো অন্ধকারে রেখেছিল সংস্থাটি
প্রত্যক্ষদর্শীরা তদন্তকারীদের কাছে দেয়া সাক্ষ্যে এটাও জানান যে কিছু পরীক্ষায় “রিমোট পরীক্ষা” পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে পরীক্ষার্থী আসলে কে সে বিষয়ে ধোঁকা দেয়া যায়।
সরকারি জবাবদিহিতা বিষয়ক কমিটির সভাপতি লেবার পার্টির এমপি মেগ হিলিয়ার বিবিসিকে বলেছেন: “যেসব তথ্য বিবিসি উদঘাটন করেছে, তার ভিত্তিতে আমার মনে হয় না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইটিএস-এর তথ্যের ওপর আর নির্ভর করা উচিত।”
হককথা/এমউএ

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পরীক্ষায় নকল: ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বিবিসির চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

প্রকাশের সময় : ১০:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের পরীক্ষায় নকল করেছে এই অভিযোগে ব্রিটেনে আসা কয়েক হাজার মূলত শিক্ষার্থীকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে যে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে, বিবিসির এক অনুসন্ধানের পর তা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিবিসি টিভির সংবাদ অনুষ্ঠান নিউজনাইট তাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য ভেতরের খবর দেওয়া একজন হুইসলব্লোয়ারের সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়েছে এবং সরকারি যেসব নথিপত্র পেয়েছে, তা থেকে তারা দেখেছে বিদেশ থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসা ব্যক্তিদের ইংরেজি ভাষার পরীক্ষা নেবার সংস্থা ইটিএস-এর দাবির ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এদের ব্রিটেন থেকে বের করে দেবার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে যে ইটিএস-এর পরীক্ষা পদ্ধতি, কর্মকাণ্ড ও তাদের তথ্যের গাফিলতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
আড়াই হাজারের ওপর ভিসা-প্রত্যাশী শিক্ষার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আরও অন্তত ৭,২০০ জনকে ব্রিটেন ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ইটিএস তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে সংস্থার আয়োজিত পরীক্ষা পাশের জন্য তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। অভিযুক্ত যারা এখনও ব্রিটেনে রয়ে গেছেন, তারা এই দুর্নাম ঘোচাতে সর্বস্ব পণ করে কয়েক বছর ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
পরীক্ষায় নকল ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি ২০১৪ সালে প্রথম সামনে আনে বিবিসির প্যানোরামা নামে একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে লন্ডনের দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রের কথা ফাঁস করা হয়, যারা জাল পরীক্ষার একটা চক্র গড়ে তুলেছিল। তারা অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় পাশ করার সনদ দিত, যাতে তা ব্যবহার করে ভিসার আবেদন করা যায়।
সরকারের অভিযান
ওই অনুষ্ঠানের পরই এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। সরকার ইটিএস সংস্থাকে বলে শতাধিক যেসব বেসরকারি পরীক্ষা কেন্দ্রকে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সরকার চুক্তি দিয়েছে, ব্রিটেনে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সেখানে কী মাত্রায় নকল করছে বা জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে।
ইটিএস প্রতারকদের এক বিশাল তালিকা সরকারকে দেয়। কিন্তু এতে বেশ কিছু নিরাপরাধ শিক্ষার্থীর নামও ঢোকানো হয়, যাদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ আনা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা জানার পরেও ইটিএস-এর তথ্যপ্রমাণকেই সঠিক বিবেচনা করে তাদের দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া চালায়।
লেবার পার্টির এমপি স্টিফেন টিমস্ বলছেন: “ইটিএস-এর তথ্যপ্রমাণে স্বভাবতই গলদ ছিল। তা স্বত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তথ্যের ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভর করেছে।”
বিবিসির চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ
নিউজনাইট আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ হাজির করেছে। সরকার ও ইটিএস-এর মধ্যে অতীতে এই পরীক্ষা নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই কথাবার্তা হয়েছে – তারপরেও পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে কিনা সেই তদন্তের ভার কেন এই সংস্থাকে দেয়া হলো, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে অনুষ্ঠানে।
যে সাংবাদিকরা পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, তারাই নতুন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে বিবিসি জানাচ্ছে:
প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা প্রথম ফাঁস হওয়ার প্রায় দুবছর আগেই ইটিএস-এর সাবেক এবং বর্তমান কর্মীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সংগঠিত জালিয়াতি চক্র সম্পর্কে ব্যাপক তথ্যপ্রমাণ পাবার কথা জানিয়েছিলেন
তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারীদের বলেছিলেন এসব জাল পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার তাদের উদ্যোগে ম্যানেজাররা বাধা দিচ্ছেন, কারণ ইংরেজি পরীক্ষার ফি থেকে আয় কমে যাবে বলে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে
সেসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে, গোটা ব্যাপারটা সম্পর্কে তাদের পুরো অন্ধকারে রেখেছিল সংস্থাটি
প্রত্যক্ষদর্শীরা তদন্তকারীদের কাছে দেয়া সাক্ষ্যে এটাও জানান যে কিছু পরীক্ষায় “রিমোট পরীক্ষা” পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে পরীক্ষার্থী আসলে কে সে বিষয়ে ধোঁকা দেয়া যায়।
সরকারি জবাবদিহিতা বিষয়ক কমিটির সভাপতি লেবার পার্টির এমপি মেগ হিলিয়ার বিবিসিকে বলেছেন: “যেসব তথ্য বিবিসি উদঘাটন করেছে, তার ভিত্তিতে আমার মনে হয় না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইটিএস-এর তথ্যের ওপর আর নির্ভর করা উচিত।”
হককথা/এমউএ