নিউইয়র্ক ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে বসে তারা ভাবেন দুনিয়া চলবে তাদের ইচ্ছামতো

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৬১ বার পঠিত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আমেরিকান বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী জর্জ সোরেসের তীব্র সমালোচনা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক আলোচনায় তাকে ‘বুড়ো, ধনী, একগুঁয়ে এবং বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। বলেন, যখন কোথাও নির্বাচনের ফল তাদের ইচ্ছামতো না হয়, তখনই সোরেসের মতো ব্যক্তিরা সেখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি মনে করেন তারা যেভাবে ভাবেন, সেভাবেই চলতে হবে দুনিয়া। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা ভারতের লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি বলে তিনি (সোরেস) আমাদেরকে অভিযুক্ত করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তা ঘটেনি। এটা ছিল একটি উদ্ভট কথা। কিন্তু বিষয়টি হলো প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ কী। আমার দৃষ্টিতে মিস্টার সোরেস একজন বৃদ্ধ, ধনী একগুয়ে ব্যক্তি।

তিনি বসে আছেন নিউ ইয়র্কে। তিনি এখনো মনে করেন, পুরো বিশ্ব কীভাবে চলবে তা তার দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করে দেবে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, যদি একজন বুড়ো, ধনী এবং একগুঁয়ে ব্যক্তির কাছে থেমে যাই, তাহলে আমাকে এ পথ থেকে সরে যেতে হবে। উল্লেখ্য, জার্মানিতে মিউনিক সিকিউরিটি কনফারেন্সে সম্প্রতি বক্তব্য রাখেন জর্জ সোরেস (৯২)। তিনি একজন প্রগতিশীল এবং উদার রাজনীতিক। ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং পার্লামেন্টের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। জর্জ সোরেস আরও বলেন, এসব বিষয় ভারতের কেন্দ্রীয় মোদি সরকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বড় প্রয়োজন। এটা হলে, সেই সংস্কারের পথ খুলে যাবে। তিনি বলেন, আমি খুব সরল হতে পারি, কিন্তু ভারতে গণতান্ত্রিক নবজাগরণ প্রত্যাশা করি।

তার এসব আক্রমণের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, তার মতো মানুষরা কোনো নির্বাচনকে ভালো মনে করেন, যদি তারা যাকে চান তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন। অন্যদিকে যদি তাদের পছন্দের কেউ না জেতেন তাহলে সেই নির্বাচনকে তারা ত্রুটিপূর্ণ বলেন। মিডিয়ার খবরে আরও বলা হয়, জয়শঙ্কর বলেছেন, এ ধরনের কথাবার্তা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। কারণ আমরা জানি, ঔপনিবেশিকতা কী। আমরা সেই অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে গিয়েছি। বাইরের শক্তি নাক গলালে কী বিপদ হয়, তা আমাদের জানা। সোরেসের মন্তব্যের পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সোরেস ভারতবিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। তাকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীকে একজোট হওয়ার অনুরোধ জানান। স্মৃতি ইরানির পর এবার মুখ খুললেন জয়শঙ্কর। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বিদেশিদের যেকোনো সমালোচনা বিজেপি ও সরকার ভারতবিরোধী চক্রান্ত বলে মনে করছে। তারা এভাবে সমালোচনার মোকাবিলায় জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করতে চাইছে।

সোরেস এর আগেও মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার মধ্যদিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে তিনি মতপ্রকাশ করেছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমালোচনাও করেছিলেন। সোরেসের মন্তব্য এবং সরকার ও বিজেপি’র প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম শনিবার বলেন, মার্কিন ধনকুবের এর আগেও যা বলেছিলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি সহমত হইনি। এখন যা বলছেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেও সহমত নই। কিন্তু তার পাল্টা হিসেবে তিনি ভারতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে চাইছেন, এই মন্তব্যও নিতান্তই শিশুসুলভ। শনিবার একাধিক টুইটে সাবেক এই অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি জানতাম না মোদি সরকার এতটাই ঠুনকো যে, ৯২ বছর বয়সী এক ধনী বিদেশির মন্তব্যে পড়ে যেতে পারে। সূত্রঃ মানবজমিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

নিউইয়র্কে বসে তারা ভাবেন দুনিয়া চলবে তাদের ইচ্ছামতো

প্রকাশের সময় : ০১:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আমেরিকান বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী জর্জ সোরেসের তীব্র সমালোচনা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক আলোচনায় তাকে ‘বুড়ো, ধনী, একগুঁয়ে এবং বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। বলেন, যখন কোথাও নির্বাচনের ফল তাদের ইচ্ছামতো না হয়, তখনই সোরেসের মতো ব্যক্তিরা সেখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি মনে করেন তারা যেভাবে ভাবেন, সেভাবেই চলতে হবে দুনিয়া। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা ভারতের লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি বলে তিনি (সোরেস) আমাদেরকে অভিযুক্ত করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তা ঘটেনি। এটা ছিল একটি উদ্ভট কথা। কিন্তু বিষয়টি হলো প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ কী। আমার দৃষ্টিতে মিস্টার সোরেস একজন বৃদ্ধ, ধনী একগুয়ে ব্যক্তি।

তিনি বসে আছেন নিউ ইয়র্কে। তিনি এখনো মনে করেন, পুরো বিশ্ব কীভাবে চলবে তা তার দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করে দেবে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, যদি একজন বুড়ো, ধনী এবং একগুঁয়ে ব্যক্তির কাছে থেমে যাই, তাহলে আমাকে এ পথ থেকে সরে যেতে হবে। উল্লেখ্য, জার্মানিতে মিউনিক সিকিউরিটি কনফারেন্সে সম্প্রতি বক্তব্য রাখেন জর্জ সোরেস (৯২)। তিনি একজন প্রগতিশীল এবং উদার রাজনীতিক। ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং পার্লামেন্টের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। জর্জ সোরেস আরও বলেন, এসব বিষয় ভারতের কেন্দ্রীয় মোদি সরকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বড় প্রয়োজন। এটা হলে, সেই সংস্কারের পথ খুলে যাবে। তিনি বলেন, আমি খুব সরল হতে পারি, কিন্তু ভারতে গণতান্ত্রিক নবজাগরণ প্রত্যাশা করি।

তার এসব আক্রমণের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, তার মতো মানুষরা কোনো নির্বাচনকে ভালো মনে করেন, যদি তারা যাকে চান তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হন। অন্যদিকে যদি তাদের পছন্দের কেউ না জেতেন তাহলে সেই নির্বাচনকে তারা ত্রুটিপূর্ণ বলেন। মিডিয়ার খবরে আরও বলা হয়, জয়শঙ্কর বলেছেন, এ ধরনের কথাবার্তা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে। কারণ আমরা জানি, ঔপনিবেশিকতা কী। আমরা সেই অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে গিয়েছি। বাইরের শক্তি নাক গলালে কী বিপদ হয়, তা আমাদের জানা। সোরেসের মন্তব্যের পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সোরেস ভারতবিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। তাকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীকে একজোট হওয়ার অনুরোধ জানান। স্মৃতি ইরানির পর এবার মুখ খুললেন জয়শঙ্কর। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বিদেশিদের যেকোনো সমালোচনা বিজেপি ও সরকার ভারতবিরোধী চক্রান্ত বলে মনে করছে। তারা এভাবে সমালোচনার মোকাবিলায় জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করতে চাইছে।

সোরেস এর আগেও মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার মধ্যদিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে তিনি মতপ্রকাশ করেছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমালোচনাও করেছিলেন। সোরেসের মন্তব্য এবং সরকার ও বিজেপি’র প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম শনিবার বলেন, মার্কিন ধনকুবের এর আগেও যা বলেছিলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গে আমি সহমত হইনি। এখন যা বলছেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেও সহমত নই। কিন্তু তার পাল্টা হিসেবে তিনি ভারতের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে চাইছেন, এই মন্তব্যও নিতান্তই শিশুসুলভ। শনিবার একাধিক টুইটে সাবেক এই অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি জানতাম না মোদি সরকার এতটাই ঠুনকো যে, ৯২ বছর বয়সী এক ধনী বিদেশির মন্তব্যে পড়ে যেতে পারে। সূত্রঃ মানবজমিন