নজিরবিহীন অর্থনৈতিক-নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পাকিস্তান
- প্রকাশের সময় : ১১:১৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৪৭ বার পঠিত
পাকিস্তান নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বললে ভুল কিছু বলা হয় না। এই প্রতিটি বিষয়ে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা মানুষের মনে খুব বেশি আস্থার উদ্রেক করেনি। দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য জন্য কয়েক দশক ধরে বিশেষজ্ঞরা যে নিদান দিয়েছিলেন সেগুলিকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি । পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকরা এই ধরনের বিজ্ঞ পরামর্শে মনোযোগ দেননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বার্থের সংকীর্ণতা নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কোনো সদিচ্ছা দেখা যায়নি। ফলস্বরূপ পাকিস্তানি নীতিনির্ধারকদের নীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে । এমনকি যখন ইসলামাবাদ-রাওয়ালপিন্ডি নিজেকে একটি ফ্রন্টলাইন স্টেট হিসেবে স্নায়ুযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিল, তখনও বিষয়টি সামান্য অর্থবহ ছিল। কিন্তু আজ, এর কোনো মানে হয় না।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার, একদিকে দেশের রাজস্ব ঘাটতিতে অবদান রেখেছিলেন, অন্যদিকে আবার আইএমএফের সাথে ‘কঠিন কথাবার্তা’ চলাকালীন সেখান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। একসময় তিনিই তার পূর্বসূরি মিফতাহ ইসমাইলের আইএমএফের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন।
দার মনে মনে বিশ্বাস করতেন যে তার নেতা নওয়াজ শরীফ যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তবে চাপে পড়ে ইসহাক দার আইএমএফের সাথে আলোচনায় বসেন। তার হয়তো আইএমএফের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তিনি এমন একটি ভাব দেখানোর চেষ্টা করেন যেন পাকিস্তানের অর্থনীতি, এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বৃদ্ধির হার সবই ইসলামাবাদের পক্ষে রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, চরম নির্বোধও বুঝতে পারে যে দেশটি ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকির মুখে রয়েছে, আর তাই IMF-এর সুরে নাচা ছাড়া তাদের কাছে তৃতীয় কোনো বিকল্প নেই । এটা ঠিক যে রাজনৈতিক পুঁজি সংরক্ষণ করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় বর্তমান, তবে শাসন করার সময় বৃহত্তর স্বার্থ অর্থাৎ দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। অনাস্থা ভোটের আশংকায় পিটিআই-এর দ্বারা বাড়তি ঋণের বোঝা বা অনুদানবিহীন ভর্তুকি যেভাবে বেড়েছে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি । পিটিআই-এর প্রাক্তন ফেডারেল অর্থমন্ত্রী শওকত তারিন এবং পাঞ্জাব ও কেপির অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে রেকর্ড করা কথোপকথনে পার্টির মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে তাদের কাছে দেশের স্বার্থর থেকে দলীয় স্বার্থ বড় ছিলো। এই সমস্ত কারণগুলির ক্রমবর্ধমান প্রভাব হল যে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন আরও বড়, ঐতিহাসিক মুদ্রাস্ফীতির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে বসবাস করছে। যা তাদের জীবনের সবচেয়ে মৌলিক দিকগুলির উপর প্রভাব ফেলতে চলেছে যেমন তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর ক্ষমতা, বা তাদের ছেলেমেয়েদের পোশাক কেনার বা তাদের শিক্ষিত করার ক্ষমতা । অর্থনীতির পাশাপাশি গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সামনে এসেছে পেশোয়ারে একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা।
যেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এই হামলা ইঙ্গিত দেয় যে, পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসের আরেকটি অভিযান শুরু হতে পারে। পেশোয়ার হত্যাকাণ্ডের পর বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা উচ্চারিত সাহসী কথাগুলি অনেককে উদ্বুদ্ধ করলেও পিটিআই-এর অনুপস্থিতি প্রমাণ করে ঐক্যের কতটা ঘাটতি রয়েছে দেশনেতাদের মধ্যে । এখনই কোনো নতুন নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে পুরো পরিস্থিতি বদলে যাবে এমন আশা করাও ভুল হবে। কাবুলে তাদের মিত্র তালেবানদের ক্ষমতায় আসার ফলে টিটিপি উৎসাহিত হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সংকটময় সময়েও পাকিস্তানের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মীরা প্রায়শই প্রকাশ্যে ভিন্নমত পোষণ করছেন ।পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান তালেবানের নারীদের শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছেন এবং জাতিসংঘে দেশটির সিনিয়র কূটনীতিক তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ ছাত্রীর জোরপূর্বক প্রস্থানের সমালোচনা করেছেন । এদিকে তার পরপরই তার ‘ক্ষমা চাওয়ার’ ঘটনা গোটা বিশ্ব দেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন পাকিস্তানের এই পরিস্থিতির জন্য আসলে দেশের রাজনীতিবিদদেরই দায়ী করা উচিত। যেমন -দেশে সশস্ত্র টিটিপি যোদ্ধাদের ফিরে আসার অনুমতি দেওয়ার জন্য পিটিআইকে দায়ী করছেন বুদ্ধিজীবীরা । তারা বলছেন ইমরান খান নিজেই সবটা কি সামলাতে পারতেন না ?
লেখক- ডনের সাবেক সম্পাদক
সূত্র- ডন