দ্য মেইলের বিরুদ্ধে মামলায় জিতেছেন মেগান মার্কেল : খবর ছাপতে হবে প্রথম পাতায়

- প্রকাশের সময় : ১১:৩৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১
- / ৯৩ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর এখন নিজের জন্য স্বাধীনভাবে কথা বলতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছেন বলে জানান ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কল। জনপ্রিয় আমেরিকান উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান নিজেদের এবং বাকিংহাম প্যালেসে তাদের জীবন নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি যুক্তরাষ্ট্রে রোববার এবং যুক্তরাজ্যে সোমবার সম্প্রচার হওয়ার কথা রয়েছে। এতে হ্যারি-মেগানের রাজপরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া এবং যুক্তরাজ্য ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের প্রসঙ্গও থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারের ৩০ সেকেন্ডের একটি টিজার ছেড়েছে সিবিএস। সেখানে উইনফ্রেকে ডাচেস অব সাসেক্সের উদ্দেশ্যে বাকিংহাম প্যালেস বিষয়ে প্রশ্ন করতে দেখা যাচ্ছে।
উত্তরে মেগান মার্কেল বলেন, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যিনি একটি সত্যিকারের স্বাধীন জীবনযাপন করতেন তিনি এমন একটি পরিবেশে গেলেন যেটা আমার মনে হয় মানুষ যা কল্পনা করে তার থেকে ভিন্ন। এ অবস্থায় হ্যাঁ বলার অধিকার পাওয়া সত্যি মুক্তির। অর্থাৎ আমি কথা বলতে প্রস্তুত।’
২০১৮ সালের মে মাসে আমেরিকান অভিনেত্রী মেগানকে বিয়ে করেন প্রিন্স হ্যারি। কিন্তু দুই বছরেরও কম সময়ে এ দম্পতি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তার সুরক্ষার কথা বলে এবং প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে রাজপরিবারের দায়-দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও পরে মেগান বলেছেন, তার ছেলে আর্চি যখন তার গর্ভে ছিল তখন রাজপরিবারে নিজেকে তার ‘অরক্ষিত’ মনে হতো। গত বছর জানুয়ারীতে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন হ্যারি-মেগান দম্পতি।
গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলে রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পরে উইনফ্রে শো’র মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দেওয়াকে অনেকে ভন্ডামি বলে সমালোচনা করছেন।
উইনফ্রের সঙ্গে হ্যারি-মেগানের এ সাক্ষাৎকার রেকর্ড হওয়ার পর গত বুধবার (৩ মার্চ) টাইমসের এক প্রতিবেদনে ডাচেস অব সাসেক্সের বিরুদ্ধে রাজপরিবারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে কেনসিংটন প্যালেসের কয়েক কর্মীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করার এক অভিযোগ পাওয়ার দাবি করে।
মেগান এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে, তারা অভিযোগটি নিয়ে ‘গভীর উদ্বিগ্ন’। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
এদিকে মেগান বলেছেন, তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা জিইয়ে রেখে বাকিংহাম প্যালেস তাদের কাছ থেকে নীরবতা প্রত্যাশা করতে পারে না।
বাকিংহাম প্যালেসের সঙ্গে হ্যারি-মেগান দম্পতির এমন এক সময়ে কথার লড়াই শুরু হয়েছে যখন হ্যারির দাদা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ (৯৯) হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রাজপরিবারের মুখপাত্র রিচার্ড ফিৎজউইলিয়ামস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘যাই ঘটছে তাতে পরিস্থিতি যে বিষাক্ত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। এ সব কিছুই অদূর ভবিষ্যতে রাজপরিবারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করবে। এটা অত্যন্ত বিপদজনক।’
দ্য মেইলের বিরুদ্ধে মামলায় জিতেছেন মেগান মার্কেল : খবর ছাপতে হবে প্রথম পাতায়
এদিকে ব্রিটেনের প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য মেইলের বিরুদ্ধে ‘প্রাইভেসি’ মামলায় জিতেছেন। তার এই জয়ের খবর রোববার (৭ মার্চ) পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপানোর আদেশ দিয়েছেন লন্ডন হাই কোর্টের একজন বিচারপতি। মেগান তার বাবাকে লেখা পাঁচ পাতার একটি চিঠির কিছু অংশ দ্য মেইল ছাপিয়ে দিয়েছিল। প্রতিবাদ জানিয়ে কাজ না হওয়ায় ‘প্রাইভেসি’ সুরক্ষার আইনে মামলা করেন মেগান। বিচারপতি মার্ক ওয়ারবি ঐ মামলার রায়ে বলেন, বাবাকে লেখা মেগানের চিঠি ছাপিয়ে পত্রিকাটি স্পষ্টতই রাজপরিবারের গোপনীয়তা এবং মেগানের কপিরাইটের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
ডব্রটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ২০১৮ সালে মেগানের বিয়ে হয়। বিয়েতে মেগানের বাবা উপস্থিত ছিলেন না। ঐ সময় মেগান তার বাবা টমাস মার্কেলকে ঐ চিঠি লেখেন। শুক্রবার (৫ মার্চ) বিচারপতি ওয়ারবি মেইল পত্রিকাকে আদেশ দিয়ে বলেন, পত্রিকাটিকে অবশ্যই রোববার তাদের প্রথম পাতায় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করতে হবে এবং ভেতরের পাতায় মামলার রায় নিয়ে বিবৃতি দিতে হবে। এছাড়া, মেইল অনলাইন ভার্সনেও মেগানের জয়ের খবর এক সপ্তাহ প্রচার করতে হবে। এই মামলার খরচ হিসেবে মেগানের আইনজীবীরা পত্রিকাটির ১৫ লাখ পাউন্ডের বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন। কিন্তু পত্রিকাটিকে সাড়ে ৪ লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন বিচারক। শুনানিতে মেইল পত্রিকার আইনজীবীরা বিচারকের কাছে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চাইলে তা তিনি বাতিল করে দেন। তবে তিনি বলেন, ‘তারা চাইলে এজন্য সরাসরি আপিল কোর্টে আবেদন করতে পারে। যদিও সেখানে এই মামলার রায় পরিবর্তন হওয়ার কোনো প্রকৃত কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
অপরদিকে, হ্যারি ও মেগানের যে সাক্ষাত্কার অপরাহ উইনফ্রে নিয়েছেন সেটি শোনার জন্য অপেক্ষায় আছে গোটা বিশ্ব। ঐ সাক্ষাৎকারটি রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস চ্যানেলে ও যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে সোমবার প্রচার করার কথা আছে। সাক্ষাৎকারটির ৩০ সেকেন্ডের একটি টিজার ক্লিপ প্রকাশ করেছে সিবিএস। সেখানে দেখা গেছে উইনফ্রে ডাচেসের কাছে জানতে চাইছেন ‘আপনি আজ যদি সত্য প্রকাশ করেন তবে রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে মনে করেন?’ জবাবে মেগান বলেন, ‘আমি জানি না তারা কীভাবে প্রত্যাশা করে যে আমরা চুপ থাকব, যখন কি না আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনাকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে রাজপরিবার ও তাদের কর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।’ মেগান আরো বলেন, ‘কোনো কিছু হারানোর ঝুঁকির কথা যদি বলেন, তাহলে বলব এরই মধ্যে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি।’ এর আগে হ্যারির সাক্ষাত্কারের কিছু অংশও প্রকাশ করেছিল সিবিএস। সেখানে হ্যারি বলেন, মায়ের মতো একই পরিণতির আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াতো তাকে।