দুইবার চাপা পড়েও জীবিত নবজাতক ও মা
- প্রকাশের সময় : ০১:৫১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৪৪ বার পঠিত
তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভূমিকম্পের আঘাতের সময় নিজের ঘরেই ছিলেন সাত মাসের গর্ভবতী দিমা। এ সময় তাঁর ঘরের একাংশ ধসে যায়। সামান্য আহত দিমা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জন্ম দেন আদনান নামের এক পুত্রসন্তান। এর তিন দিন পরই আবারও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মা-ছেলে। সিরিয়ার জিনদাইরিসে এই ঘটনা ঘটে।
প্রথমবার ভবনের একাংশ বিধ্বস্ত হওয়ার পর দিমাকে ভর্তি করা হয় উত্তর সিরিয়ার আফরিন শহরের এক হাসপাতালে। সিরিয়ান আমেরিকান মেডিক্যাল সোসাইটি এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধান করে।
সেখানেই সন্তান জন্মদানের তিন দিন পর নিজের ঘরে ফেরেন দিমা। জিনদাইরিসে আর কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকা একরকম বাধ্য হয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এর পরই পুরোপুরি ধসে যায় তাঁদের ঘরটি। এতে গুরুতর আহত হয় আদনান। তাকে উদ্ধার করে আফরিনের আল শিফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আদনান বর্তমানে তীব্র পানিশূন্যতা ও জন্ডিসে ভুগছে। আর দিমা পায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিত্সা নিয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ করিম হুসেইন আল ইব্রাহিম জানান, শিশুটি চিকিত্সায় ভালো সাড়া দিচ্ছে। তিনি বলেন, আদনানের অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো হচ্ছে।
দিমা চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে তাঁর স্বামী আবদুল মজিদ এবং ৯ আত্মীয়র সঙ্গে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। প্রতিদিন সন্তানকে দেখতে তিনি আফরিনে আসছেন। জিনদাইরিসের অন্য হাজারো মানুষের মতো তাঁরাও কোনো ধরনের সহায়তা এখন পর্যন্ত পাননি।
৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৭৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে তুরস্কের মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার ৯৭৪ এবং সিরিয়ায় পাঁচ হাজার ৮০০।
এদিকে ভূমিকম্পের ২০১ ঘণ্টা পর ২৬ বছর বয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সি। দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশের আন্তাকইয়া থেকে এই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
সিরিয়ায় ত্রাণ নিয়েও রাজনীতির অভিযোগ : ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিতে আরো দুটি সীমান্ত খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। জাতিসংঘ এই তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত এখন বড় পার্থক্য গড়ে দেবে। আমরা এত দিন একটা সীমান্ত ব্যবহার করেছি।
রাজধানী দামেস্কে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। জাতিসংঘ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও ধারণা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে।
আলজাজিরার সাংবাদিক জেইনা খুদর বলেন, ‘অনেকেই বিশ্বাস করেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের এই সহযোগিতা রাজনৈতিক বৈধতা পুনরুদ্ধারের জন্য পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর একটি প্রচারণার অংশ, যাতে বিশ্ব ফের সিরিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে।’
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সিরিয়া কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এই প্রতিবেদক বলেন, সিরিয়ার বিরোধী দলগুলো বলছে, সীমান্ত ক্রসিংগুলো খোলার বিষয়ে আসাদের সম্মতির অপেক্ষা করা ভুল সিদ্ধান্ত। তাঁর অনুমতি ছাড়াই সীমান্ত ব্যবহার করা উচিত ছিল। বিশেষত এই বিবেচনায় যে মানুষের সাহায্য প্রয়োজন।
তুরস্কে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার ৮ হাজারের বেশি : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে আট হাজারের বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জোড়া ভূমিকম্পের পর বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধারকর্মী ও মানবিক সহায়তা পাঠানোয় তিনি আবারও বিভিন্ন দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সির বরাতে প্রেসিডেন্ট জানান, আহত ৮১ হাজারের বেশি মানুষ চিকিত্সাসেবা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘দিনরাত পরিশ্রম করে সহায়তা সংগ্রহ করায়, উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হওয়ায় এবং প্রার্থনায় আমাদের স্মরণ করায় আমি আবারও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এমন অন্ধকার দিনে দেখানো বন্ধুত্ব তুরস্ক কখনো ভুলবে না।’ সূত্র : আনাদলু এজেন্সি, আলজাজিরা ও বিবিসি