থাইল্যান্ডে ২৬ অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার : আরও ৫ গণকবর
- প্রকাশের সময় : ০৫:২৩:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মে ২০১৫
- / ১১৭০ বার পঠিত
থাইল্যান্ড: থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের গভীর জঙ্গলে আরও পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, কবরগুলোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অভিবাসীদের দেহাবশেষ থাকতে পারে। এ স্থান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে শুক্রবার (১ মে) গণকবর থেকে ২৬ অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
থাইল্যান্ডের জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র প্রাউত থাবর্নসিরি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় শিবিরের খোঁজ পাই। তিনি বলেন, নতুন আবিষ্কার করা শিবিরটি প্রথম শিবিরের কাছেই অবস্থিত। সেখানে পাঁচটি কবর পাওয়া গেছে। কবরে কোনো দেহাবশেষ আছে কিনা, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে তিনি জানান। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব ঘটনায় থাইল্যান্ড কর্তপক্ষের উদাসীনতা দেখে কঠোর সমালোচনা করেন। শুক্রবার মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শংখলা প্রদেশের সাদাও এলাকার গভীর জঙ্গলে এ রকম একটি শিবিরের গণকবর থেকে ২৬ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলিম অভিবাসীর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার এক বাংলাদেশী দাবি করেন, ওই ২৬ দেহাবশেষের মধ্যে কমপক্ষে ১০ বাংলাদেশী ছিল। ওই ক্যাম্পে মানব পাচারকারীরা অন্তত ৪শ’ মানুষকে আটকে রেখেছিলেন। সোমবার মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃতদের আটকে রাখা ও মানব পাচারে সংশ্লিষ্টতার জন্য দায়ী করে এক রোহিঙ্গাসহ তিন থাই সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে দেশটির পুলিশ। একইসঙ্গে আরও চার থাই নাগরিককে এ ঘটনায় দায়ী করে খোঁজা হচ্ছে।
থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন সাদাও পার্বত্যাঞ্চল দেশ দুটিতে অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মূলত মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে লোকদের এ পথ দিয়ে আনা হয়। মানব পাচারকারীরা এদের নির্যাতন করে স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও দ্রুত তদন্তের আহ্বান: থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানব পাচারকারী ক্যাম্প আর গণকবরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনার যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত করতে থাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র সোমবার (৪ মে) জানান, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আরও মানব পাচারকারী ক্যাম্প আছে কিনা কিংবা আরও কোনো গণকবর আছে কিনা সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে। থাইল্যান্ড সরকার, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থাগুলোকে সব ধরনের সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই মুখপাত্র আরও জানান, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানব পাচারকারী ক্যাম্পের অস্তিত্বের সঙ্গে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা কিংবা জঙ্গলে গণকবরের উপস্থিতির সঙ্গে মানব পাচারের সম্পর্ক আছে কিনা সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত না হওয়া গেলেও মানব পাচারের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া অতীতে এ ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য থাকার কথাও উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র দফতর।
যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরও বলেন, এ ধরনের মামলার একটি স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও দ্রুত তদন্তর আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। এ ধরনের ক্যাম্পের উপস্থিতি ও মৃত্যুরও কারণ চিহ্নিত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্যও থাই কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।
গত বছরের জুনে মানব পাচারকারীদের মোকাবেলায় সরকারি উদ্যোগ কম থাকার কারণে থাইল্যান্ড সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। সে সময় মানব পাচার মোকাবেলার ঘটনায় ব্যর্থতার জন্য আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া এবং উজবেকিস্তানের কাতারে চলে আসে থাইল্যান্ডের নাম।
উল্লেখ্য, মানব পাচার রোধে থাইল্যান্ডের বর্তমান সামরিক সরকারের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে। সর্বশেষ গণকবর থেকে অভিবাসীদের দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনায় দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে।
পুলিশি অভিযানে অভিবাসীদের মধ্যে আতংক: থাইল্যান্ডে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে দেশটিতে অবস্থান করা অভিবাসীরা আতংকে রয়েছেন। অনেক বৈধ অভিবাসীকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তাদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। (দৈনিক যুগান্তর)