তুরস্কে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা
- প্রকাশের সময় : ১১:০৪:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ৪৯ বার পঠিত
সময় যত গড়াচ্ছে ক্রমেই ফুটে উঠছে তুরস্ক ও সিরিয়ায় সোমবারের ভূমিকম্পের ভয়াবহতার চিত্র। দুই দেশে এখন পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। যারমধ্যে শুধু তুরস্কেই ৩ হাজার ৫৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত ১৫ হাজারেরও বেশি। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছেন অগণিত মানুষ। এ পরিস্থিাততে ভূমিকম্পে তুরস্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, সিরিয়ার নিকটবর্তী বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে পুনরুদ্ধারের কাজ একটি প্রচণ্ড শীতকালীন ঝড়ের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে যা কিছু রাস্তাকে চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেছে এবং খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহের গতি কমিয়ে দিয়েছে। তাই উদ্ধার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে দ্রুত ত্রাণ কর্মীরা যেতে পারবেন। এছাড়া সেসব এলাকায় তাড়াতাড়ি আর্থিক সহায়তাও দেয়া যাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ১৪ মে তারিখে নির্বাচনের ঠিক আগে জরুরি অবস্থার অবসান হবে।
এরদোগানের সরকার প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে তুরস্কের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পের ধীর প্রতিক্রিয়া হিসাবে তার সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে আসছে।
এদিকে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ হাজার ৯২১ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৫৪৯ জনে পৌঁছেছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই বলেছেন, তুরস্কের ১০টি প্রদেশে ১৫ হাজার ৩৮৪ জন আহত হয়েছেন এবং ৭ হাজার ৮৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরি ও অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে, সিরিয়ায় সর্বশেষ ১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু ও ৩ হাজার ৭০০ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে কতৃপক্ষ।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা ৮১২ জনে পৌঁছেছে, প্রায় ১ হাজার ৪৫০ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও দেশটির বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমে উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বদানকারী প্যারামেডিক গ্রুপ হোয়াইট হেলমেটস বলেছে, এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৭৯০ জন নিহত এবং ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
শীতল তাপমাত্রা এবং তুষারঝড়ের ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে অনেক মানুষকে জটলা হয়ে বসে থাকার ছবিও তুলে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এদিকে, ভূমিকম্পে দুই দেশে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। দেশ দুটিতে আরও ভবন ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচওর ইউরোপ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ জরুরি কর্মকর্তা ক্যাথরিন স্মলউড বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আরও (ভবন) ধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা নিহতের প্রাথমিক সংখ্যা আটগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছি। সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় দেশ দুটিতে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬০০ জন। সেই হিসাবে এর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্যাথরিন।
ক্যাথরিন বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় একই জিনিস দেখতে পাই, তা হলো প্রাথমিক খবরে পাওয়া হতাহতের সংখ্যা পরবর্তী সপ্তাহে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
তিনি সর্তক করেছেন, শীতের মাঝামাঝি তাপমাত্রা এবং তুষারঝড়ের অবস্থার আশ্রয় ছাড়া বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। যা করেনার মত শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসের সঞ্চালন করবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে না তারা সম্মিলিত পরিবেশে মিলিত হবে এবং জড়ো হবে। তবে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তাদেরর জন্য মারাত্বক ঝুঁকি তৈরি করবে যদি তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা না করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরও অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিলো রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিলো ৭ দশমিক ৫। সূত্র: এপি, আলজাজিরা