তুরস্কের নির্বাচনে নির্ধারিত হচ্ছে এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ
- প্রকাশের সময় : ০১:০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩
- / ৪৪ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের জনগণ দেশটির আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনে ভোট দিতে শুরু করেছেন যাতে নির্ধারিত হবে বিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলু , যিনি নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্টের হাতে এরদোয়ান যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ২০১৬ সালে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাহী ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করেন। কুলুচদারুলু এক বৃহত্তর বিরোধী জোটের প্রার্থী এবং তার নির্বাচনে জেতার সত্যিকারের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু এই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই তীব্র এবং এর ওপর তুরস্কের এত কিছু নির্ভর করছে যে প্রার্থীরা একেবারে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নির্বাচনী বিধির পরোয়া না করে শনিবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলে একটি মসজিদে নামাজ পড়তে আসা লোকজনের সামনে বক্তৃতা দিয়েছেন। আজকের নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ পেতে হবে। নতুবা দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়া হবে।
তুরস্কের স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটাররা লাইন দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তুরস্কের ভোটাররা এমন এক সময়ে এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন, যখন তাদের কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি এখন লাগামছাড়া। সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ। কিন্তু অনেক মানুষের ধারণা এটি আসলে অনেক বেশি হবে। অন্যদিকে তুরস্কের ১১ টি প্রদেশ সম্প্রতি দুই দফা ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। এই ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আংকারার ভোটার বুরাক ওনডার তার চশমার দোকানে বসে বলছিলেন, লোকজন এখন চশমা কেনা মনে হচ্ছে বাদই দিয়েছে। “লোকে এখন আর চশমার দাম কমানোর জন্য দরদাম পর্যন্ত করে না, তাদের চশমা কেনারই অর্থ নেই।” প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অর্থনীতির প্রথাগত নিয়ম ভেঙ্গে যেভাবে সুদের হার কমিয়েছেন, তার ফলে তুরস্কে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। অথচ ওই একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছিল। বুরাক ওনডারের চশমার দোকানের একই রাস্তায় রাহিমার দোকান। জিনিস পত্রের গায়ে একটা দামের ওপর আরেকটা দাম সেঁটে দিচ্ছেন তিনি, কারণ দাম বাড়ছে প্রতিদিন। তিনি বলেন, “লোকজন দোকানে এসে জিজ্ঞেস করে, কেন প্রতিদিন দাম বাড়ছে, এরপর তারা কিছু না কিনেই চলে যায়।’
রাহিমার ১৯ বছর বয়সী কন্যা সুদেনার তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। স্পোর্টস সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করতে চান তিনি, কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা, সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। নির্বাচনে তার মতো প্রথমবার ভোট দেবেন যে ৫০ লাখ ভোটার, তারাই এবারের নির্বাচনের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আজ স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশে থাকেন যে প্রায় ১৭ লাখ প্রবাসী তুর্কী ভোটার, তারা এরই মধ্যে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। সেখানে ভোট দানের হার ছিল ৫৩ শতাংশ। তুরস্কের শহরগুলো এখন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর রঙিন পতাকা আর শ্লোগানে ছেয়ে আছে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনাও বেড়েছে। বিরোধী দলগুলো প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ব্যালট বাক্সের ভোট গণনা তদারকি করতে তাদের স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে, যাতে সেখানে কোনো জালিয়াতি হতে না পারে। চার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর একজন, মুহাররিম ইন্স ভোটের তিন দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার “চরিত্রে কালিমা লেপনের” চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এত দেরিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তার নাম ব্যালট পেপারে থেকে যাচ্ছে।
শনিবার ভোটের প্রচারের একেবারে শেষ সময়ে কুলুচদারুলু আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের সমাধি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন ইস্তাম্বুলের হাজিয়া সোফিয়া মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজে যোগ দিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মসজিদে নামাজ পড়তে আসা লোকজনকে বলেন, তুরস্কে যা ঘটছে, তার দিকে মুসলিম বিশ্ব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এরদোয়ান তার নির্বাচনী প্রচার শেষ করার জন্য যেভাবে মসজিদকে বেছে নিলেন এবং সেখানে একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিলেন, তা খুবই আকর্ষণীয় বিষয়। একইসাথে এটা তার সমর্থকদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। হাজিয়া সোফিয়া তৈরি করা হয়েছিল একটি অর্থোডক্স খ্রীস্টান ক্যাথিড্রাল হিসেবে। কিন্তু অটোমান যুগে এটাকে মসজিদ বানানো হয়। কামাল আতাতুর্ক এরপর এটাকে একটি যাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ওই সিদ্ধান্ত বদলে দিয়ে ২০২০ সালে আবার হাজিয়া সোফিয়াকে মসজিদ বানান। আজকের ভোটে তুরস্কের মানুষ ৬০০ এমপি নির্বাচনের জন্যও ভোট দেবেন। যদিও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পার্লামেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছেন, তারপরও নতুন আইন প্রণয়নে পার্লামেন্ট এখনও মুখ্য ভূমিকা রাখে।
তুরস্কের নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়ম অনুযায়ী কোন দলকে পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে অন্তত ৭ শতাংশ ভোট পেতে হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলো আসন পাওয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচনী জোট বাঁধে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একে পার্টি, যেটির সঙ্গে ইসলামপন্থীদের সম্পর্ক আছে, তারা পিপলস এলায়েন্স জোটের অংশ। এই জোটে আরও আছে কট্টর জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এবং অন্য দু’টি দল। অন্যদিকে কুলুচদারুলুর মধ্য বামপন্থী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি জোট বেঁধেছে ন্যাশনালিস্ট গুড পার্টি এবং অন্য চারটি ছোট দলের সঙ্গে। কুর্দীপন্থী দল এইচডিপি হচ্ছে তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল, তারা আরেকটি জোটের অংশ। তারা প্রচারণা চালাচ্ছে গ্রীন লেফট জোটের ব্যানারে। সূত্র : বিবিসি
বেলী /হককথা