চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি, অতিরিক্ত সময়ে গড়াল জলবায়ু সম্মেলন
- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
- / ২৫ বার পঠিত
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২৬তম সম্মেলনের সময় বেড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই সম্মেলন গতকাল শুক্রবার (১২ নভেম্বর) শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আজ শনিবারও (১৩) আলোচনায় বসতে হচ্ছে সমঝোতাকারীদের।
কারণ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। তাই সম্মেলনের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়াতে দেশগুলোর মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা, দরকষাকষি এখনও চলছে। খবর: সাম্প্রপতিক দেশকাল
স্থানীয় সময় আজ বিকেলে সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আনুষ্ঠানিক অধিবেশন বলে জানিয়েছেন কপ-২৬ এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা। তিনি বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি এবং এখন আমাদের সেই ‘করতে পারি’ চেতনার চূড়ান্ত প্রয়োগ দরকার, যা এই কপ-২৬ সম্মেলনে রয়েছে।
এখন যেসব বিষয় নিয়ে দরকষাকষি চলছে তার মধ্যে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রসঙ্গ এবং দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে তা প্রাধান্য পাচ্ছে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৬-এর একটি খসড়া চুক্তি গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ধনীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনো ঐকমত্য না হওয়ায় চূড়ান্ত চুক্তি আটকে গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়া ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর দূতরা গতকাল সম্মেলনে বলেছেন, তাদের ভূখণ্ড ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়ানো যাবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এ লক্ষ্য অর্জনে বেশিরভাগ দেশ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমানো, আর ২০৫০ সালের মধ্যে মোটামুটি শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা দরকার।
গতকাল কপ-২৬ এ যে চুক্তির খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জোরাল বক্তব্য নেই। পরিবেশকর্মীরাও চুক্তির এ খসড়ার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। তবে অনেকেই বলছেন, জাতিসংঘের এ ধরনের কোনো নথিতে কয়লার কথা এভাবে আগে কখনোই আসেনি, জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে এই অগ্রগতিও কম নয়।
খসড়াটিতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জানাতে সময়সীমা বেধে দেওয়ার উপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে।
লন্ডন থেকে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জলবায়ু তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ দিতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গরিব দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরিয়ে আনতে ‘টেবিলে আরও অর্থ ঢালো’, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য ধনী দেশগুলোকে বলেছেন তিনি।
২০০৯ সালে উন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোর সহযোগিতায় জলবায়ু তহবিলে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাদের কথা রাখতে পারেনি।
গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।