আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শিনজিয়ান প্রদেশে চীন উইঘুর মুসলমানদের প্রতি ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করেছে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে এক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। চীন জাতিসংঘকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছিল। বেইজিং এটিকে পশ্চিমা শক্তির সাজানো একটি ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছে।
চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে উস্কানি দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, চীন যদি আক্রমণ করে তাহলে তাইওয়ানের জনগণের অবস্থা উইঘুর মুসলিমদের মতো হবে। বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সংস্থার প্রধান বলেছেন, তাইওয়ানের উচিত উইঘুরদের সঙ্গে কী ঘটছে তা বোঝা। ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম-এর চেয়ারম্যান নুরি টুকরেল দুই দিনের সম্মেলনে বলেছেন, ‘আপনার জানা উচিত যে আপনি যদি তাইওয়ানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন তবে তাইওয়ানের জনগণেরও একই পরিণতি হবে।’ এরপরেই জাতিসংঘ এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি চাদা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মূলত তাদের ইচ্ছামতোই চলে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে, চীন যা অস্বীকার করে। তদন্তকারীরা বলেছেন যে তারা নির্যাতনের ‘গ্রহণযোগ্য প্রমাণ’ খুঁজে পেয়েছেন, যা সম্ভবত ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’। তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার দমন করার জন্য একটি অস্পষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা এবং ‘বিধিবহির্ভূতভাবে আটকে রাখার ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে।
তানা অবশ্য বলেছে যে চীনের সরকার কত লোককে আটকে রেখেছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অনুমান করে যে উত্তর-পূর্ব চীনের শিনজিয়ান অঞ্চলের শিবিরে দশ লক্ষের বেশি লোককে আটক রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, এতে অমুসলিমরাও থাকতে পারে। শিনজিয়ানে প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ উইঘুর মুসলমান বাস করে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই বেইজিং সেটি দেখেছে এবং কোন ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চীন যুক্তি দিয়েছে যে, এই শিবিরগুলি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি হাতিয়ার৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে চার বছর দায়িত্বে থাকার পর তার মেয়াদের শেষ দিনে মিশেল ব্যাচেলেটের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটির প্রকাশনা বেশ কয়েকবার বিলম্বিত হয়। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি এই প্রতিবেদনটি ‘প্রকাশ করা বা না করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন’।
চীন তার শিনজিয়ানে প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করেছে। ‘শিনজিয়ান পুলিশ ফাইল’ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছিলেন যে, এ নথিগুলি ‘চীন বিরোধী মত ও চীনকে ছোট করার যে চেষ্টা তার সর্বশেষ উদাহরণ’। তিনি বলেন, শিনজিয়ানে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি রয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা সুখী জীবনযাপন করছে। চীনের বক্তব্য হলো, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং ইসলামী চরমপন্থার মূলোৎপাটনে শিনজিয়ানে অভিযান জরুরী এবং এই শিবিরগুলি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বন্দীদের সংস্কারের একটি কার্যকর হাতিয়ার। সূত্র: বিবিসি, এপি।
হককথা/এমউএ