নিউইয়র্ক ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

চির প্রতিদ্বন্দ্বি ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ‘টাগ অব ওয়ার’ শুরু

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১৩৮৯ বার পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছর পর কংগ্রেসের উভয় কক্ষের (সিনেট ও কংগ্রেস) নির্বাচন হয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবছর চার নভেম্বর দিন মধ্যবর্তী নির্বাচন হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিসেবে বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নামে মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে প্রার্থী চুড়ান্ত করার ধাপ হচ্ছে চার নভেম্বরের নির্বাচন। একমাত্র প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়া, ইউএস কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট ও নিম্ন কক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ অর্থাৎ ইউএস কংগ্রেস, ষ্টেট গভর্ণর, কম্পট্রোলার, এটর্নী এবং রাজ্য সভার সিনেটর, এসেম্বলীম্যানসহ স্টেটের গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেকেই নির্বাচিত হবেন এই নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে মধ্যবর্তী নির্বাচন আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচন ঘিরে দেশের দুই প্রধান দল ‘চির প্রতিদ্বন্দ্বি’ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে শুরু হয়েছে ‘টাগ অব ওয়ার’। নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পেলেই ইউএস সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন রিপাবলিকানরা। এজন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন রিপাবলিকান প্রার্থীসহ পার্টির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ইউএস সিনেট কোন পার্টির দখলে যাবে তা নির্ভর করছে জর্জিয়া, সাউথ ডাকোটা, নর্থ ক্যারোলিনা, আইওয়া ও কলোরাডো অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের সিদ্ধান্তের উপর। বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস’র তথানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ‘পলিটিক্যাল ব্যাটল গ্রাউন্ড’ খ্যাত চারটি রাজ্য জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, নর্থ ক্যারোলিনা ও আরকানসাসের কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিজয়ী করতে পারে। উল্লেখ্য, ইউএস সিনেটের আসন ১০০টি আর ইউএস কংগ্রেসের আসন ৪৩৫টি। ইউএস সিনেটরের মেয়াদ হচ্ছে ছয় বছর আর ইউএস কংগ্রেস সদস্যের মেয়াদ হচ্ছে দু’বছর। ইতিহাস বলে: ১৮৫৪ সালের ২০ মার্চ রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে ১৭৯২ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যকরী পার্টি হিসেবে এই পার্টির কর্মকান্ড শুরু হয় ১৮২৯ সালে।
ইউএস সিনেট নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে ২জন করে সিনেটর নির্বাচিত হন ৬ বছরের জন্য। প্রতি দু’ বছর অন্তর ৩৩জন সিনেটর জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেটের ৩৩টি আসনে এবং ১১৩তম ইউএস কংগ্রেসের শূন্য তিনটি আসন সহ মোট ৩৬টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনগুলোর মধ্যে ২১টি ডেমোক্র্যাট এবং ১৫টি রিপাবলিকান অধ্যুষিত। নির্বাচিত সিনেটরগণ ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। সিনেটের বিগত নির্বাচনে ৫৩টি আসনে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। রিপাবলিকান পার্টির দখলে রয়েছে ৪৫টি আর স্বতন্ত্র সিনেটর রয়েছেন দু’জন।
ইউএস কংগ্রেস নির্বাচন: ইউএস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ অর্থাৎ কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবক’টিতেই নির্বাচন হচ্ছে চার নভেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে নির্ধারিত ৪৩৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রত্যেকের মেয়াদ দুই বছর। ইউএস কংগ্রেসে ভোটাধিকার না থাকলেও ৪৩৫ জনের বাইরেও আরো ৬জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এদের একজন হবেন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অপর ৫জন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি টেরিটরি থেকে। চলতি বছর ডেমোক্র্যাট পার্টির ১৬জন আর রিপাবলিকান পার্টির ২৫জন কংগ্রেসম্যান/ওম্যান অবসরে যাওয়ায় এবং টেক্সাস ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারীতে দু’জন পরাজিত হওয়ায় মূলত: ৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ইউএস কংগ্রেসে ২৩৪টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। এখানে ডেমোক্র্যাটদের দখলে ১৯৯টি আসন। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২১৮টি আসন। ডেমোক্র্যাটদের রাজ্য হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের ২৭টি আসনের মধ্যে বর্তমানে ২১টি আসন ডেমোক্র্যাট আর ৬টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ইউএস সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৬টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। চার নভেম্বর নিউইয়র্কে ইউএস সিনেটের কোন নির্বাচন হচ্ছে না। অপরদিকে কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবক’টি আসনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ১০৯টি আসনে অর্থাৎ শতকরা ২৫ ভাগ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী। এরমধ্যে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সমর্থিত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের অন্যতম।
৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্যে ডেমোক্র্যাট পার্টিকে বর্তমানের সাথে আরো ৫৯ আসন যোগ করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণকারী কয়েকটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ১৯৭ আসনে রিপাবলিকানদের জয় অনেকটা নিশ্চিত। আর এমন নিশ্চিত আসন ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে ১৫৮টি। ডেমোক্র্যাটদের নিশ্চিত আসনের মধ্যে নিউইয়র্কে রয়েছে ২১টি। অপরদিকে রিপাবলিকানদের রয়েছে মাত্র ৬টি। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মোট ভোটের ৭০ ভাগই ডেমক্র্যাট পার্টির সমর্থক।
এবারের নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ তথা ইউএস সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৬টিতে নির্বাচন হচ্ছে। এর ৩৩টিতে হচ্ছে নিয়মিত নির্বাচন, অবশিষ্ট তিনটিতে হচ্ছে বিশেষ নির্বাচন। ২০১২ সালের নির্বাচনের পর ইউএস সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা জিতেছিলেন ৫৩ আসনে। অপরদিকে রিপাবলিকানরা পেয়েছিল ৪৫ আসন। স্বতন্ত্র হিসেবে দু’জন জয়ী হয়ে পরবর্তীতে তারাও ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সমর্থন করেন। উল্লে¬খ্য, ইউএস সিনেটের মেয়াদ হচ্ছে ৬ বছর। অপরদিকে প্রতিনিধি পরিষদের মেয়াদ দু’বছর। ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে ইউএস সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটরা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে পরিচালিত সর্বশেষ এক জরিপে দেখা গেছে যে, তিন বছর আগের তুলনায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তবে রিপাবলিকানদের পরিস্থিতিরও কোন উন্নতি ঘটেনি। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এবিসি নিউজ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৫০ ভাগ আমেরিকানই কংগ্রেসের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন। কংগ্রেসের প্রধান দুই রােৈজনতিক দলের আচরণেই অসন্তুষ্ট সাধারণ আমেরিকানরা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কর্মকান্ডে ৬৭ ভাগ আমেরিকানই ক্ষুব্ধ। ৩০ ভাগ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাটদের কর্মকান্ডে। পক্ষান্তরে রিপাবলিকানদের কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মাত্র ২৫ ভাগ আমেরিকান। ৭২ ভাগ আমেরিকান রিপাবলিকানদের কঠোর সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের কর্মকান্ডে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি আফ্রিকান-আমেরিকানদের সমর্থনের হার হ্রাস পাওয়ায় এমন নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, ইমিগ্রেশন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটদের সংশয় আফ্রিকান-আমেরিকানদের পাশাপাশি ল্যাটিনোদের মধ্যেও বিরূপ ভাব তৈরী করেছে। এ অবস্থায় ৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজ এবং সিনেটের কর্তৃত্ব কোন পার্টির হাতে যাবে সেটি এখন দেখার পালা।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বার্তা নেই। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশে¬ষণ। এদিকে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। এ কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মধ্যবর্তী নির্বাচনে সেখানে তাদের আসন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবধানটা কম রাখার জন্য ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচারণা চলছে।
ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে রিপাবলিকান দল। পরিস্থিতি এমন হলে মেয়াদের শেষ বছর দুটি ওবামাকে আরও বেশি বৈরিতার মুখে পড়তে হবে।
কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় নিয়েও খোদ রক্ষণশীলরাই সন্দিহান। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে রিপাবলিকানদের মূল প্রচারণা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ঘিরে।
তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এখন ক্রান্তিকাল চলছে। অর্ধেকেরও বেশি জনমত এখন তাঁর বিপক্ষে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাম্প্রতিক সাফল্যের বার্তাটি সাধারণ মানুষের কাছে এখনো সেভাবে পৌঁছায়নি। আবাসন শিল্পে চাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। মধ্যবিত্তের জীবনমানের উন্নতির কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত নিজেরা মনে করে, তারা ভালো নেই। শিক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রহণ করা ঋণের ওপর সুদ বেড়েছে। ‘ওবামা কেয়ার’-এর মতো সর্বজনীন বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি নিলেন তা নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নেও সবকিছু ওবামার অনুকূলে যায়নি। ওবামার বিদেশনীতি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানসহ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ এখন উদ্বিগ্ন।
রক্ষণশীলদের অবিরাম প্রচারণায় সব সমস্যার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘ভ্রান্ত নীতিকে’ দায়ী করা হচ্ছে। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাঠে প্রেসিডেন্ট ওবামার নাম নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রক্ষণশীলদের ৬১ শতাংশই ওবামা বিরোধিতার জন্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন। অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি ব্যয় হ্রাস, স্বল্প রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, ওবামা কেয়ারের পরিবর্তন, সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়গুলোকেও নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে আসা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো প্রচারণায় ওবামার বিরোধিতা এখন তুঙ্গে।
এদিকে নির্বাচনের প্রাক্কালে রিপাবলিকান পার্টির বিবৃতিতে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ব্যর্থ প্রেসিডেন্টের সমর্থক ও অনুসারী বলে রিপাবলিকান দলের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লে¬ষকেরা মনে করছেন, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় হলেও রিপাবলিকান পার্টির অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিবাসন সংস্কার আইন, অবৈধদের বৈধতা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো অনেকটাই উদ্দীপনাহীন। তারা রিপাবলিকান বান্ধব হয়ে উঠবে বলে ভাবা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে রিপাবলিকান পার্টি। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান পার্টি থেকে এখন পর্যন্ত সর্বসম্মত গ্রহণযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই। অপর দিকে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ক ও ওবামার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক ফাস্ট লেডী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে হিলারির অবস্থান এখন অনেকটাই সংহত।
জনমত জরিপে ৫৩ শতাংশ লোক এখনও প্রেসিডেন্ট ওবামার বিপক্ষে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ লোকজনের মনোভাব আবার রিপাবলিকান দলের বিপক্ষে।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে হারার আগেই নানা সব বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। মুখে কিছু না বলা হলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য পরাজয়ের জন্য ওবামার ধসে পড়া জনপ্রিয়তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
খাঁটি উদারনৈতিক মহলের মতে, রিপাবলিকানদের নেতিবাচক প্রচারণার জুতসই জবাব দিতে পারেনি ডেমোক্র্যাট পার্টি। রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তের জীবন-সমস্যাকে নির্বাচনী বিতর্কে নিয়েও আসা হয়নি। নারী ভোটার, নতুন ভোটার ও অভিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশে¬ষকদের ধারণা, ৪ নভেম্বর মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য জয় ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অপরদিকে জয়ের স্বস্তি নিয়ে রিপাবলিকানরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটরা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়েও মাঠে নামবে।
হাওয়া রিপাবলিকানদের অনুকূলে
মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিম্নমুখী জনপ্রিয়তার কারণে এ নির্বাচনের হাওয়া অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ব্যবধান কম রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন রিপাবলিকানরা। তাহলে মেয়াদের শেষ দুটি বছর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে শাসন পরিচালনায় আরও বেশি বৈরিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের জয় নিয়ে তারা নিজেরাই সন্দিহান।
নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশীদের কথা
যুক্তরষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের কদর বাড়ছে। বাড়ছে ভোটারের সংখ্যাও। নিউইয়র্কের বিগত সিটি মেয়র নির্বাচন সহ ষ্টেট নির্বাচনে বাংলাদেশীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করার মতো। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনী তথ্যাদি বাংলা ভাষাও প্রচারিত হচ্ছে। এবছরই প্রথমবারের মতো ৯ সেপ্টেম্বরের প্রাইমারী নির্বাচনে ব্যালট পেপারে অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলা ভাষায় প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হয়।
চার নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন আমেরিকার অন্য সবার মতো বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আর তাই এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে এবং নিজেদের অবস্থান সংহত করতে কমিউনিটির প্রতি আহবান জানিয়েছেন মূলধারার শ্রমিক সংগঠন অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল)-এর সভাপতি, কমিউনিটি নেতা মাফ মিজবাহ উদ্দিন।
অ্যাসাল সভাপতি মাফ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, নামে মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে প্রার্থী বাছাইয়ের চুড়ান্ত ধাপ হচ্ছে ৪ নভেম্বরের নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট ছাড়া, স্টেট গভর্ণর, স্টেট সিনেটর, ইউএস কংগ্রেস সদস্য, কম্পট্রোলার, এটর্নী এবং এসেম্বলীম্যানসহ স্টেটের গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেকেই নির্বাচিত হবেন এই নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচন বংলাদেশী কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপুর্ণ। তিনি নিজের এবং কমিউনিটির উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনকে অবহেলা না করে প্রত্যেকে নিজে এবং নিজের প্রতিবেশীকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোটারদেরকে এ নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি নির্বাচনের দিন ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেই মূলধারায় নিজের এবং কমিউনিটির গুরুত্ব এবং অবস্থান সংহত করা যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মাফ মিজবাহ উদ্দিন।
বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মূলধারার সংগঠন বাংলাদেশী আমেরিকান পাবলিক ফ্রন্ট (বাপাফ)-এর সভাপতি সালেহ আহমেদ বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচনের মতো আমাদের (বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি) জন্য তত গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন নির্বাচনেই প্রতিটি ভোট রেকর্ড হয় এবং কোন কমিউনিটির কত ভোট তা প্রকাশও হয়। সেই বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশী-আমেরিকান অর্থাৎ ‘সাউথ এশিয়ান’রা কত ভোটের মালিক তার উপরও নির্ভর করে মূলধারায় আমাদের অবস্থান। তাই কমিউনিটির সকল বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটারদের প্রতি বাপাফ-এর পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে একটু কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন, নিজেদের অবস্থান শক্ত করুন।
এছাড়া বাংলাদেশী-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল অব নিউইয়র্কের সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, সাধারণ সম্পাদক কবীর আহমেদ চৌধুরী, সহ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর ও কোষাধ্যক্ষ মৌলানা রশিদ আহমদ মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্রুকলীন, ওজনপার্কসহ নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
কমিউনিট অ্যাক্টিভিস্ট, দি অপ্টিমিস্ট-এর সহ সভাপতি মিনহাজ আহমেদ সাম্মু বলেন, মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী-আমেরিকানরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদিও আমাদের পক্ষে এককভাবে শক্ত প্রার্থী দেয়া আজো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগেও মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অবস্থান ছিলো হাতেগোনা। আর এখন অনেক সংগঠন ভোট প্রদানে কাজ করছে, অনেকে প্রবাসীদের ঘরে ঘরে ‘নক’ করে উদ্বুদ্ধ করছেন। এখন সময় এসেছে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

চির প্রতিদ্বন্দ্বি ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ‘টাগ অব ওয়ার’ শুরু

প্রকাশের সময় : ০৪:২৫:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০১৪

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছর পর কংগ্রেসের উভয় কক্ষের (সিনেট ও কংগ্রেস) নির্বাচন হয়ে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবছর চার নভেম্বর দিন মধ্যবর্তী নির্বাচন হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী হিসেবে বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নামে মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে প্রার্থী চুড়ান্ত করার ধাপ হচ্ছে চার নভেম্বরের নির্বাচন। একমাত্র প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়া, ইউএস কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেট ও নিম্ন কক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ অর্থাৎ ইউএস কংগ্রেস, ষ্টেট গভর্ণর, কম্পট্রোলার, এটর্নী এবং রাজ্য সভার সিনেটর, এসেম্বলীম্যানসহ স্টেটের গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেকেই নির্বাচিত হবেন এই নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে মধ্যবর্তী নির্বাচন আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচন ঘিরে দেশের দুই প্রধান দল ‘চির প্রতিদ্বন্দ্বি’ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে শুরু হয়েছে ‘টাগ অব ওয়ার’। নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পেলেই ইউএস সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন রিপাবলিকানরা। এজন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন রিপাবলিকান প্রার্থীসহ পার্টির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ইউএস সিনেট কোন পার্টির দখলে যাবে তা নির্ভর করছে জর্জিয়া, সাউথ ডাকোটা, নর্থ ক্যারোলিনা, আইওয়া ও কলোরাডো অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের সিদ্ধান্তের উপর। বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস’র তথানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ‘পলিটিক্যাল ব্যাটল গ্রাউন্ড’ খ্যাত চারটি রাজ্য জর্জিয়া, লুইজিয়ানা, নর্থ ক্যারোলিনা ও আরকানসাসের কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিজয়ী করতে পারে। উল্লেখ্য, ইউএস সিনেটের আসন ১০০টি আর ইউএস কংগ্রেসের আসন ৪৩৫টি। ইউএস সিনেটরের মেয়াদ হচ্ছে ছয় বছর আর ইউএস কংগ্রেস সদস্যের মেয়াদ হচ্ছে দু’বছর। ইতিহাস বলে: ১৮৫৪ সালের ২০ মার্চ রিপাবলিকান পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে ১৭৯২ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যকরী পার্টি হিসেবে এই পার্টির কর্মকান্ড শুরু হয় ১৮২৯ সালে।
ইউএস সিনেট নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে ২জন করে সিনেটর নির্বাচিত হন ৬ বছরের জন্য। প্রতি দু’ বছর অন্তর ৩৩জন সিনেটর জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেটের ৩৩টি আসনে এবং ১১৩তম ইউএস কংগ্রেসের শূন্য তিনটি আসন সহ মোট ৩৬টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনগুলোর মধ্যে ২১টি ডেমোক্র্যাট এবং ১৫টি রিপাবলিকান অধ্যুষিত। নির্বাচিত সিনেটরগণ ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। সিনেটের বিগত নির্বাচনে ৫৩টি আসনে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। রিপাবলিকান পার্টির দখলে রয়েছে ৪৫টি আর স্বতন্ত্র সিনেটর রয়েছেন দু’জন।
ইউএস কংগ্রেস নির্বাচন: ইউএস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ অর্থাৎ কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবক’টিতেই নির্বাচন হচ্ছে চার নভেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার অনুপাতে নির্ধারিত ৪৩৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রত্যেকের মেয়াদ দুই বছর। ইউএস কংগ্রেসে ভোটাধিকার না থাকলেও ৪৩৫ জনের বাইরেও আরো ৬জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এদের একজন হবেন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অপর ৫জন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি টেরিটরি থেকে। চলতি বছর ডেমোক্র্যাট পার্টির ১৬জন আর রিপাবলিকান পার্টির ২৫জন কংগ্রেসম্যান/ওম্যান অবসরে যাওয়ায় এবং টেক্সাস ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারীতে দু’জন পরাজিত হওয়ায় মূলত: ৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ইউএস কংগ্রেসে ২৩৪টি আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। এখানে ডেমোক্র্যাটদের দখলে ১৯৯টি আসন। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২১৮টি আসন। ডেমোক্র্যাটদের রাজ্য হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের ২৭টি আসনের মধ্যে বর্তমানে ২১টি আসন ডেমোক্র্যাট আর ৬টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ইউএস সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৬টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। চার নভেম্বর নিউইয়র্কে ইউএস সিনেটের কোন নির্বাচন হচ্ছে না। অপরদিকে কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবক’টি আসনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ১০৯টি আসনে অর্থাৎ শতকরা ২৫ ভাগ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী অধিকাংশই ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী। এরমধ্যে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সমর্থিত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের অন্যতম।
৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্যে ডেমোক্র্যাট পার্টিকে বর্তমানের সাথে আরো ৫৯ আসন যোগ করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণকারী কয়েকটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ১৯৭ আসনে রিপাবলিকানদের জয় অনেকটা নিশ্চিত। আর এমন নিশ্চিত আসন ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে ১৫৮টি। ডেমোক্র্যাটদের নিশ্চিত আসনের মধ্যে নিউইয়র্কে রয়েছে ২১টি। অপরদিকে রিপাবলিকানদের রয়েছে মাত্র ৬টি। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মোট ভোটের ৭০ ভাগই ডেমক্র্যাট পার্টির সমর্থক।
এবারের নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ তথা ইউএস সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৬টিতে নির্বাচন হচ্ছে। এর ৩৩টিতে হচ্ছে নিয়মিত নির্বাচন, অবশিষ্ট তিনটিতে হচ্ছে বিশেষ নির্বাচন। ২০১২ সালের নির্বাচনের পর ইউএস সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা জিতেছিলেন ৫৩ আসনে। অপরদিকে রিপাবলিকানরা পেয়েছিল ৪৫ আসন। স্বতন্ত্র হিসেবে দু’জন জয়ী হয়ে পরবর্তীতে তারাও ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সমর্থন করেন। উল্লে¬খ্য, ইউএস সিনেটের মেয়াদ হচ্ছে ৬ বছর। অপরদিকে প্রতিনিধি পরিষদের মেয়াদ দু’বছর। ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে ইউএস সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটরা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে পরিচালিত সর্বশেষ এক জরিপে দেখা গেছে যে, তিন বছর আগের তুলনায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তবে রিপাবলিকানদের পরিস্থিতিরও কোন উন্নতি ঘটেনি। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এবিসি নিউজ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৫০ ভাগ আমেরিকানই কংগ্রেসের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন। কংগ্রেসের প্রধান দুই রােৈজনতিক দলের আচরণেই অসন্তুষ্ট সাধারণ আমেরিকানরা। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কর্মকান্ডে ৬৭ ভাগ আমেরিকানই ক্ষুব্ধ। ৩০ ভাগ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাটদের কর্মকান্ডে। পক্ষান্তরে রিপাবলিকানদের কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মাত্র ২৫ ভাগ আমেরিকান। ৭২ ভাগ আমেরিকান রিপাবলিকানদের কঠোর সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের কর্মকান্ডে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি আফ্রিকান-আমেরিকানদের সমর্থনের হার হ্রাস পাওয়ায় এমন নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, ইমিগ্রেশন ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটদের সংশয় আফ্রিকান-আমেরিকানদের পাশাপাশি ল্যাটিনোদের মধ্যেও বিরূপ ভাব তৈরী করেছে। এ অবস্থায় ৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজ এবং সিনেটের কর্তৃত্ব কোন পার্টির হাতে যাবে সেটি এখন দেখার পালা।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বার্তা নেই। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশে¬ষণ। এদিকে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। এ কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মধ্যবর্তী নির্বাচনে সেখানে তাদের আসন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবধানটা কম রাখার জন্য ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচারণা চলছে।
ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে রিপাবলিকান দল। পরিস্থিতি এমন হলে মেয়াদের শেষ বছর দুটি ওবামাকে আরও বেশি বৈরিতার মুখে পড়তে হবে।
কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয় নিয়েও খোদ রক্ষণশীলরাই সন্দিহান। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষ থেকেই সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে রিপাবলিকানদের মূল প্রচারণা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ঘিরে।
তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এখন ক্রান্তিকাল চলছে। অর্ধেকেরও বেশি জনমত এখন তাঁর বিপক্ষে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাম্প্রতিক সাফল্যের বার্তাটি সাধারণ মানুষের কাছে এখনো সেভাবে পৌঁছায়নি। আবাসন শিল্পে চাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। মধ্যবিত্তের জীবনমানের উন্নতির কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত নিজেরা মনে করে, তারা ভালো নেই। শিক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রহণ করা ঋণের ওপর সুদ বেড়েছে। ‘ওবামা কেয়ার’-এর মতো সর্বজনীন বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি নিলেন তা নিয়েও চলছে নানা বিতর্ক। পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নেও সবকিছু ওবামার অনুকূলে যায়নি। ওবামার বিদেশনীতি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানসহ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ এখন উদ্বিগ্ন।
রক্ষণশীলদের অবিরাম প্রচারণায় সব সমস্যার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘ভ্রান্ত নীতিকে’ দায়ী করা হচ্ছে। তাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাঠে প্রেসিডেন্ট ওবামার নাম নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রক্ষণশীলদের ৬১ শতাংশই ওবামা বিরোধিতার জন্য প্রার্থীদের ভোট দেবেন। অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারি ব্যয় হ্রাস, স্বল্প রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, ওবামা কেয়ারের পরিবর্তন, সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়গুলোকেও নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ে আসা হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো প্রচারণায় ওবামার বিরোধিতা এখন তুঙ্গে।
এদিকে নির্বাচনের প্রাক্কালে রিপাবলিকান পার্টির বিবৃতিতে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ব্যর্থ প্রেসিডেন্টের সমর্থক ও অনুসারী বলে রিপাবলিকান দলের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লে¬ষকেরা মনে করছেন, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় হলেও রিপাবলিকান পার্টির অতি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিবাসন সংস্কার আইন, অবৈধদের বৈধতা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অভিবাসী গোষ্ঠীগুলো অনেকটাই উদ্দীপনাহীন। তারা রিপাবলিকান বান্ধব হয়ে উঠবে বলে ভাবা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েও নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে রিপাবলিকান পার্টি। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান পার্টি থেকে এখন পর্যন্ত সর্বসম্মত গ্রহণযোগ্য কোনো প্রার্থী নেই। অপর দিকে চলমান রাজনৈতিক বিতর্ক ও ওবামার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক ফাস্ট লেডী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে হিলারির অবস্থান এখন অনেকটাই সংহত।
জনমত জরিপে ৫৩ শতাংশ লোক এখনও প্রেসিডেন্ট ওবামার বিপক্ষে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ লোকজনের মনোভাব আবার রিপাবলিকান দলের বিপক্ষে।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে হারার আগেই নানা সব বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। মুখে কিছু না বলা হলেও মধ্যবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য পরাজয়ের জন্য ওবামার ধসে পড়া জনপ্রিয়তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
খাঁটি উদারনৈতিক মহলের মতে, রিপাবলিকানদের নেতিবাচক প্রচারণার জুতসই জবাব দিতে পারেনি ডেমোক্র্যাট পার্টি। রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তের জীবন-সমস্যাকে নির্বাচনী বিতর্কে নিয়েও আসা হয়নি। নারী ভোটার, নতুন ভোটার ও অভিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশে¬ষকদের ধারণা, ৪ নভেম্বর মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য জয় ডেমোক্র্যাটদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। অপরদিকে জয়ের স্বস্তি নিয়ে রিপাবলিকানরা নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটরা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়েও মাঠে নামবে।
হাওয়া রিপাবলিকানদের অনুকূলে
মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিম্নমুখী জনপ্রিয়তার কারণে এ নির্বাচনের হাওয়া অনেকটাই রিপাবলিকানদের অনুকূলে। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ব্যবধান কম রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইউএস কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা নিয়েও শঙ্কা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন রিপাবলিকানরা। তাহলে মেয়াদের শেষ দুটি বছর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে শাসন পরিচালনায় আরও বেশি বৈরিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের জয় নিয়ে তারা নিজেরাই সন্দিহান।
নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশীদের কথা
যুক্তরষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের কদর বাড়ছে। বাড়ছে ভোটারের সংখ্যাও। নিউইয়র্কের বিগত সিটি মেয়র নির্বাচন সহ ষ্টেট নির্বাচনে বাংলাদেশীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিলো উল্লেখ করার মতো। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনী তথ্যাদি বাংলা ভাষাও প্রচারিত হচ্ছে। এবছরই প্রথমবারের মতো ৯ সেপ্টেম্বরের প্রাইমারী নির্বাচনে ব্যালট পেপারে অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলা ভাষায় প্রার্থীদের নাম প্রকাশিত হয়।
চার নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন আমেরিকার অন্য সবার মতো বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। আর তাই এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে এবং নিজেদের অবস্থান সংহত করতে কমিউনিটির প্রতি আহবান জানিয়েছেন মূলধারার শ্রমিক সংগঠন অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার (অ্যাসাল)-এর সভাপতি, কমিউনিটি নেতা মাফ মিজবাহ উদ্দিন।
অ্যাসাল সভাপতি মাফ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, নামে মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে প্রার্থী বাছাইয়ের চুড়ান্ত ধাপ হচ্ছে ৪ নভেম্বরের নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট ছাড়া, স্টেট গভর্ণর, স্টেট সিনেটর, ইউএস কংগ্রেস সদস্য, কম্পট্রোলার, এটর্নী এবং এসেম্বলীম্যানসহ স্টেটের গুরুত্বপূর্ণ পদের অনেকেই নির্বাচিত হবেন এই নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচন বংলাদেশী কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপুর্ণ। তিনি নিজের এবং কমিউনিটির উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনকে অবহেলা না করে প্রত্যেকে নিজে এবং নিজের প্রতিবেশীকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোটারদেরকে এ নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি নির্বাচনের দিন ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেই মূলধারায় নিজের এবং কমিউনিটির গুরুত্ব এবং অবস্থান সংহত করা যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মাফ মিজবাহ উদ্দিন।
বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মূলধারার সংগঠন বাংলাদেশী আমেরিকান পাবলিক ফ্রন্ট (বাপাফ)-এর সভাপতি সালেহ আহমেদ বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচনের মতো আমাদের (বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি) জন্য তত গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন নির্বাচনেই প্রতিটি ভোট রেকর্ড হয় এবং কোন কমিউনিটির কত ভোট তা প্রকাশও হয়। সেই বিবেচনায় আমরা বাংলাদেশী-আমেরিকান অর্থাৎ ‘সাউথ এশিয়ান’রা কত ভোটের মালিক তার উপরও নির্ভর করে মূলধারায় আমাদের অবস্থান। তাই কমিউনিটির সকল বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটারদের প্রতি বাপাফ-এর পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে একটু কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন, নিজেদের অবস্থান শক্ত করুন।
এছাড়া বাংলাদেশী-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল অব নিউইয়র্কের সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র সহ সভাপতি সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, সাধারণ সম্পাদক কবীর আহমেদ চৌধুরী, সহ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর ও কোষাধ্যক্ষ মৌলানা রশিদ আহমদ মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্রুকলীন, ওজনপার্কসহ নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশী-আমেরিকান ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
কমিউনিট অ্যাক্টিভিস্ট, দি অপ্টিমিস্ট-এর সহ সভাপতি মিনহাজ আহমেদ সাম্মু বলেন, মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী-আমেরিকানরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদিও আমাদের পক্ষে এককভাবে শক্ত প্রার্থী দেয়া আজো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগেও মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অবস্থান ছিলো হাতেগোনা। আর এখন অনেক সংগঠন ভোট প্রদানে কাজ করছে, অনেকে প্রবাসীদের ঘরে ঘরে ‘নক’ করে উদ্বুদ্ধ করছেন। এখন সময় এসেছে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা।